শিরোনাম
আজ মহালয়া, সূচনা হলো দেবী পক্ষের
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:৪২
আজ মহালয়া, সূচনা হলো দেবী পক্ষের
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা, নমস্ত্যসৈ নমস্ত্যসৈ নমস্ত্যসৈ নমঃ নমঃ’- শ্রীচণ্ডীর এ শ্লোক উচ্চারণের মধ্যে দিয়েই আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হলো শুভ মহালয়া। শাস্ত্রমতে দেবী দুর্গার আবাহনই হলো মহালয়া। এর মাধ্যমে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানানো হলো দেবী দুর্গাকে। সূচনা হলো দেবী পক্ষের।

 

সনাতন ধর্মের বহুবিধ তত্ত্বের মধ্যে মহালয়া তত্ত্ব সুগভীর যোগতাত্ত্বিক দর্শন তত্ত্ব। দেবী শক্তিকে পূজার জন্য অর্থাৎ দেবী শক্তি আপন সাধনায় সঞ্চারের জন্য সুগভীর তাৎপর্য ব্যঞ্জক মহালয়া তিথি থেকেই দেবী পক্ষের শুরু।

 

তিথি মানে চন্দ্রকলার হ্রাসবৃদ্ধি দ্বারা সীমাবদ্ধ কাল। যেমন- প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া এভাবে পূর্ণিমা বা অমাবস্যা পর্যন্ত এ তিথি বিস্তৃত। চাঁদের ষোড়শ ভাগের এক ভাগকে কাল বলা হয়। চাঁদ এক কলায় হ্রাস পায়, আবার এক কলায় বৃদ্ধি পায়। যে পক্ষে হ্রাস পায় সেটি হলো কৃষ্ণপক্ষ। অন্যদিকে, যে পক্ষে বৃদ্ধি পায় সেটি হলো শুক্লপক্ষ। কৃষ্ণপক্ষের সর্বশেষ তিথি অমাবস্যা এবং শুক্লপক্ষের সর্বশেষ তিথি পূর্ণিমা। যাই হোক, সনাতন ধর্মশাস্ত্রে তিনটি অমাবস্যা প্রসিদ্ধ। এক আলোক অমাবস্যা, দুই মহালয়া অমাবস্যা, তিন দ্বীপান্বিতা অমাবস্যা।

 

আলোক অমাবস্যা বাংলা ভাদ্র মাসে, মহালয়া অমাবস্যা আশ্বিন মাসে এবং দ্বীপান্বিতা অমাবস্যা কার্ত্তিক মাসে হয়। এখন আশ্বিন মাস। এ মাসেই হয় দুর্গাপূজা। আজ সেই অমাবস্যা। একে ‘অপরপক্ষ’ও বলা হয়। এ পক্ষে যারা অপর হয়ে গেছেন বা প্রয়াত হয়েছেন সেই পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা হয়। অর্থাৎ, মহালয়ায় পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে বিশেষ পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। এর তাত্ত্বিক কারণ রয়েছে।

 

মহাভারতে বকরূপী ধর্ম ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের কাছে জানতে চাইলেন- পৃথিবীতে সবচেয়ে চঞ্চল কী? ধর্মপুত্র বললেন, মানুষের মন। সত্যি বলতে এর চেয়ে চঞ্চল আর কিছু হয় না। সে দ্রুততম। এ মন চাঁদের ন্যায়। চাঁদের যেমন হ্রাস-বৃদ্ধি আছে, মনেরও তাই। মনের চঞ্চলতা সাধনার পরিপন্থী। মনের চঞ্চলতার ক্ষীণতা এবং সর্বশেষ মনের ক্রীয়াহীনতা সাধনার সহায়ক। চঞ্চলতা যত কমবে মন ক্রমশঃ স্থিরতামুখী হবে, যত স্থিরতামুখী হবে ততই ব্রহ্মস্বরূপ প্রাণের কাছাকাছি অবস্থান করবে। যত কাছাকাছি অবস্থান করবে, তত নিজেকে এবং অন্যকে উদ্ধার করার যোগ্যতা অর্জিত হবে। পারলৌকিক ক্রিয়া পিতৃপুরুষকে উদ্ধার করারই ক্রিয়া যা মহালয়ার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য।

 

মহালয়াতেই দেবীর পূজা করার যোগ্যতা অর্জিত হয়। সাধক যখন কুণ্ডলিনী শক্তিকে মূলাধারে জাগ্রত করে ক্রমে ক্রমে বৃহৎ কূটস্থে প্রবেশ করান তখন তা মহাশক্তিতে পরিণত হয়। এ শক্তির সাহায্যে সাধক তখন মহিষাসুর বধ করতে পারেন। মহী অর্থাৎ ভূমিকে যে কামনা করে সে মহিষ। যে পৃথিবীকে উগ্রভাবে ভোগ করতে চায় সেই মহিষ বা মহিষ বৃত্তিসম্পন্ন। মহিষ ক্রোধী জীব। ভোগ করতে না পারলে সে ক্রুদ্ধ হবে। সাধকের কাজ হবে তখন বৃহৎ কূটস্থে বা মহতের আলয়ে বা মহালয়ে প্রবেশ করে জাগ্রতা দেবীশক্তির সহায়ে সেই ভোগপ্রবৃত্তি রূপ মহিষাসুরকে পরাজিত করা। মহিষাসুরের সঙ্গে লড়াইয়ের যোগ্যতা সাধকের তখনই অর্জিত হবে যখন সে মহালয়াতে প্রবেশ করবে। তাই মহালয়া অমাবস্যার পরদিন থেকেই দেবী পক্ষের শুরু। দেবী পক্ষ মানে অসুরের বিরুদ্ধে দেবীর সংগ্রামের পক্ষ, সংগ্রামে দেবীর জয়ের পক্ষ।

 

চণ্ডীপূজা, চণ্ডীপাঠ ইত্যাদি ধর্মানুষ্ঠানের মাধ্যমে মহালয়া উদযাপিত হয়। এসব ধর্মানুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য সাধনার মাধ্যমে মহতের আলয়ে অর্থাৎ মহালয়ে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত হওয়া। এদিন মন্দিরে মন্দিরে বেজে ওঠে শঙ্খধ্বনি। পুরোহিতদের শান্ত, অবিচল গম্ভীর কণ্ঠে শোনা যায় চণ্ডীপাঠ। এ মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে দেবতারা দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। তারা সমস্বরে দেবীকে আহ্বান জানান পৃথিবীর ঘোর অন্ধকার দূরীভূত করে মঙ্গল প্রতিষ্ঠায়। মহালয়ার সময় ঘোর অমাবস্যা থাকে। মহাতেজের আলোয় সেই অমাবস্যা দূর হয়। প্রতিষ্ঠা পায় শুভশক্তি।

 

২৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চমীর সায়ংকালে অকাল বোধনে খুলে যাবে মা দুর্গার শান্ত-স্নিগ্ধ অতল গভীর আয়ত চোখের পলক। দূর কৈলাশ ছেড়ে দেবী পিতৃগৃহে আসবেন নৌকায়। সনাতন বিশ্বাসে ‘শস্যবৃদ্ধিস্থাজলম’। অর্থ- অতিবৃষ্টি, বন্য, জলচ্ছ্বাসে একদিকে প্লাবিত হবে অন্যদিকে শস্য বাড়বে। দেবী প্রস্থান করবে ঘোটকে। ৩০ সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমীতে ফিরবেন একই বাহনে। 

 

বিবার্তা/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com