শিরোনাম
আরেকটি দিবস সৃষ্টির টার্গেট ছিল নব্য জেএমবির
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০১৭, ১৮:০৭
আরেকটি দিবস সৃষ্টির টার্গেট ছিল নব্য জেএমবির
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অভিযানে চলানোকালে সাইফুল ইসলাম নামের এক জঙ্গি নিহত হয়েছে। নিহত ওই জঙ্গি নব্য জেএমবির সদস্য। বড় ধরনের নাশকতা করতে এবং শোকের মাসে আরো একটি দিবস সৃষ্টি করতে পান্থপথস্থ ওলিও ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেছিল সে। কিন্তু গোয়েন্দা তৎপরতার কারণে জেএমবির এমন পরিকল্পনা নৎসাত হয়েছে বলে দাবি করেছেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।


তারা বলছেন, সাইফুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি খুলনার ডমুরিয়া উপজেলায়। তার বাবা একটি মসজিদের ইমাম। তার শিক্ষা জীবন মাদ্রাসা থেকে শুরু হয়। বর্তমানে সে খুলনার বিএল কলেজে অধ্যয়নরত। সে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। পরবর্তীতে নব্য জেএমবিতে যোগদান করে সাইফুল। তাকে দিয়েই নব্য জেএমবি বড় ধরনের নাশকাত করার চেষ্টা করেছি।


এ ব্যাপারে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের মনিরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় শোক দিবসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে প্রচুর মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে আসে। নব্য জেএমবির একটি সেল পরিকল্পনা করেছে যে, এখানে একটি নাশকতা করবে। সেটা তাদের সংগঠনের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এবং তারা যে টিকে আছে, সেটা দেখানোর জন্য। এছাড়া পাশাপাশি এই শোকের মাসে আরেকটি দিবস সৃস্টি করার জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠেছিল বলে জানান মনিরুল।



তবে নব্য জেএমবির এমন নাশকতার পরিকল্পনার সংবাদ গোয়েন্দাদের কাছে চলে আসে জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমারা নিশ্চিত হই যে, এক বা একাধিক লোকই এই অঞ্চলে অবস্থান নিয়েছে। সেটার সূত্র ধরেই রবিবার থেকে ব্লক রেইড শুরু হয়। সোমবারও আমরা একটা পর্যায়ে নিশ্চিত হই পান্থপথ এলাকায় অথবা মীরপুর রোডে কোনো হোটেল বা মেসে জঙ্গিরা অবস্থান করছে। এক পর্যায়ে ওলিও ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলে ব্লক রেইড চালানো হয়।


মনিরুল আরো জানান, ওলিও ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলে যখন ব্লক রেইড চালানো হয়, তখন সকল রুম তল্লাশি করা হয়। কিন্তু ৩০১ নং রুমে নক করা হলে ভেতর থেকে বলে সকালের আগে দরজা খুলব না। তখনই আমাদের সন্দেহ হয়। এছাড়াও রুমে একটি জানালা ছিল। সেই জানালা দিয়ে ভেতরে ব্যাগ এবং তাকে দেখা যায়। পরে ব্লক রেইড যারা করছিল তা বুদ্ধিমত্তার সহিত বাহির থেকে তালা লাগিয়ে দেয়।


সিটিটিসি ওই কর্মকর্তা জানান, হোটেলের ওই কক্ষে জঙ্গির অবস্থান জানার পর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসতে শুরু করেন। পরে একাধিকবার তাকে আত্মসর্পণের আহবান করা হয়। কিন্তু সেই আহবানে সাড়া না দেয়াতে একপর্যায়ে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই অভিযানে সোয়াত অংশ নেয়। এ সময় সোয়াত একাধিক গুলি চালিয়েছে। এক পর্যায়ে গুলি করতে করতে রুমের সামনে দিকে যায় সোয়াত এবং রুমের ভেতরেই গ্যাস মারে, তখনই একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় সাইফুল।


তিনি জানান, গুলি ও বিস্ফোরণের কারণেই রুমে দরজা ভেঙ্গে পড়ে এবং দরজা ভেঙ্গে পড়ার পর সে বোমাসহ বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে আসার পর বিস্ফোরণের চেষ্টা করে। এ সময় সাথে সাথে সোয়াতের সদস্যরাও গুলি চালায়। এ সময় গুলি ও বিস্ফোরনের কারণে সেই রুমের দেয়াল ও জানালা ভেঙ্গে পড়ে।


শক্তিশালী বোমা ট্রাভেল ব্যাগে বগন করছিল জানিয়ে মনিরুল বলেন, পরে আরো একটি বোমা তার ব্যাগের ভেতরে অবিস্ফোরিত অবস্থায় পাওয়া যায়। মোট তিনটি বোমা তার কাছে ছিল। একটি প্রথমে সে বিস্ফোরণ করেছিল, যেটার কারণে দরজা ভেঙ্গে পড়ে। রুম থেকে বের হওয়ার সময় একটি বিস্ফোরণ ঘটায়।



তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল ৩২ নম্বরে যে মিছিলগুলো আসবে, সেই মিছিলগুলোর মধ্যে তারা ঢুকে পড়বে এবং আত্মঘাতি হামলা করবে।


শোক দিবসে হামলা উদ্দেশ্য সম্পর্কে মনিরুল বলেন, দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে। একটি হলো জাতীয় শোক দিবসে প্রগতিশীল মানুষকে হত্যার মাধ্যমে তাদের কথিত জিহাদ করতে চায়। অপরটি হলো দেশে-বিদেশে আন্তর্জাতিক একটি শিরোনাম হবে। সেটা তাদের নতুন রিক্রুট করার ক্ষেত্রে ব্যাপক সাড়া পাবে।


তবে গোয়েন্দা নজরদারির কারণে জঙ্গিদের বড় ধরনের হামলা রুখে দেয়া হয়েছে জানিয়ে মনিরুল বলেন, মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির যে আশংকা ছিল, সেটা রোধ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।


এদিকে, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বিস্ফোরণ হওয়া বোমার ব্যাপারে বলেন, একটি বোমা বিস্ফোরণের সাথে সাথে রুমের দরজা ভেঙ্গে যায়। আরেকটি বিস্ফোরণ যখন ঘটাতে চায়, তখন পুলিশ গুলি করছে। তার সাথে সুসাইডাল বেস্ট ছিল। এ সময় রুম উড়ে গেছে, বারান্দা উড়ে গেছে। এটা যদি কোনো বড় সমাবেশে বিস্ফোরণ হত, তা হলে বড় ধরনের ক্ষতি হত। গোয়েন্দাদের তৎপরতার কারণেই এই বিপদ থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছেন।


জঙ্গি সাইফুল ইসলাম সম্পর্কে আইজিপি বলেন, সে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। জামায়াত-শিবির না হলে শোক দিবসে জঙ্গিহামলার মতো আরেকটি ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করতে পারত না।


উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ভোর থেকে পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের পশ্চিম পাশে ছয় নম্বর ভবনটি ঘিরে ফেলে পুলিশ। ১১ তলা ভবনে অবস্থিত হোটেল ‘ওলিও গ্রিন হ্যাভেন’-এর চারতলায় ৩০১ নম্বর কক্ষে একজন জঙ্গি অবস্থান নিয়েছেন বলে জানতে পারে পুলিশ। পরে ওই রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে আটকে পুরো এলাকায় ঘিরে রাখেন পুলিশ ও পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটের সদস্যরা।


সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ওই ভবনের বিপরীত দিকে ওলিও হোটেলের আরেকটি চারতলা ভবনে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বহুতল ভবনটির একটি ফ্লোরের দেয়াল ধসে পড়ে। ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে ৯টা ৫০ মিনিটের মধ্যে কয়েকবার গোলাগুলির আওয়াজ আসে। এ সময় এলাকা জুড়ো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।


বিবার্তা/খলিল/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com