শিরোনাম
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের বেদনাময় ঈদ
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০১৭, ০৮:৪৩
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের বেদনাময় ঈদ
ঈদের নামাজ আদায় করতে নিউইয়র্কের এস্টোরিয়া এলাকায় একটি মাঠে সমবেত হয়েছেন প্রবাসীরা।
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। এই কথা সবাই মানলেও প্রবাসীদের জীবনে এই কথার বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। প্রবাসীদের ঈদটা একটু অন্য রকম। প্রবাসে অনেকেই আছেন যাদের জন্য ঈদের দিনটা অত্যন্ত কষ্টের। এরপরও প্রবাসীদের আনন্দের কমতি থাকে না। তারা হাজারো কষ্ট বুকে নিয়ে বাংলাদেশীদের মতো ঈদ উদযাপন করতে যান। যদিও দেশের মতো তেমন কোন আনন্দ উল্লাস করা যায় না। রবিবার রাতে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের সাথে আলাপকালে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।


প্রবাসীরা টেলিফোনে বিবার্তাকে জানিয়েছেন, মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদ। এই ঈদকে নিয়ে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন আশা আকাঙ্ক্ষা আর প্রস্তুতির কমতি থাকে না। ঈদ আসে ঈদ যায় কিন্তু প্রবাসীদের কষ্ট একটুও কমে না। কারণ আত্মীয়স্বজন রেখে হাজারো মাইল দূরে ঈদ করাটাই অনেকটা বেদনায়দায়ক। এরপরও ঈদ আসলে ঈদের নামাজ পড়া হয়।


কিন্তু বাংলাদেশের মতো সেখানে কোন ঈদগাহ বা নাজামের জন্য আলাদা ময়দান নেই। তারা কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে সকল মুসলমান সমবেত হওয়ার চেষ্টা করেন। ঈদের নামাজ আদায় করে ঘোরাফেরার চেষ্টা করেন। এছাড়াও একে অপরের বাসায় গিয়ে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার চেষ্টা করেন তারা।


নিউয়ইর্কে বসবাসরত বাংলাদেশী এবাদুর রহমান আরিফ। মাত্র ৫ বছর বয়সে তিনি ২০০৬ সালে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কটারকোনা গ্রাম থেকে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন নিউইয়কে। প্রবাসের ঈদ সর্ম্পেকে তিনি বলেন, হাজারো কষ্টের মাঝে প্রবাসী বাঙালিরা ঈদের আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করে। তারা বাংলাদেশের মতো সেখানেই ঈদের নামাজ পড়তে সমবেত হয়।


আরিফ জানান, এবার ঈদের নামাজ পড়তে তিনি নিউইয়র্কের এস্টোরিয়াস্থ আল আমিন জামে মসজিদ সংলগ্ন একটি মাঠে গিয়েছিলেন। তিনি একা নামাজে যাননি। নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন আরিফের আব্বা আব্দুর রহিম মিয়া ও ছোট ভাই আকিলও।


তিনি আরো জানান, ঈদের নামাজ শেষে তারা একে অন্যের সাথে কোলাকুলিও করেছেন। হাজারো ব্যস্ততার মধ্যে ঈদের দিন বাঙালিরা ঈদের সাদ ভোগ করতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশে ঈদের আমেজ যেমনটা হয়, সেই দেশে তেমন আমেজ থাকে না। তাই ঈদের আনন্দটাও একটু কম। তারপরও বাঙালিরা ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটে যায় একে অন্যের বাসায়।


আরিফ জানান, ঈদের নামাজ শেষে তিনি বাসায় ফিরে মা-বাবা, ভাই-বোন নিয়ে সেমাই-পিঠা খেয়েছেন। এর পর আরিফের আব্বু সবাইকে নিয়ে উনার এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন।


তবে তিনি অনেকটা হতাশা প্রকাশ করে জানান, গত রমজানে তিনি দেশে ঈদ করেছেন। আত্মীয়স্বজন সবার সঙ্গে ঈদ করে খুব ভালই লাগছিল। কিন্তু এবার সেই আনন্দটা নেই। এছাড়াও ঈদের জামাত শেষে পরিবারের সবার ঘুরতে যাওয়ার কথা থাকলে বিকাল পর্যন্ত ঘুরতে যাওয়া হয়নি।


আরিফের আম্মা নাজমা বেগম নিউইয়র্ক থেকে এই প্রতিবেদককে টেলিফোনে বলেন, ঈদ আসে ঈদ যায়। কিন্তু পবিবার পরিজন ছাড়া ঈদ যে কত কষ্ট তা একমাত্র প্রবাসীরাই বুঝে। সকাল হলেই ঈদ আর বেশির ভাগ প্রবাসীদের ঈদেও ডিউটি থাকে। তারপরও ঈদের উদযাপন করতে মুসলমানরা ভুলে যায়নি। যার যার মতো করে ঈদে আনন্দ-ফূর্তি করার চেষ্টা করে।


তিনি জানান, ঈদের দিন থেকে তিনি দেশে থাকা স্বজনদের কাছে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। কারণ ঈদ আসলে মোবাইল নেটওয়ার্কও বিজি থাকে। তাই স্বজনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।


তিনি আরো জানান, শত কষ্টে মধ্যেও ঈদ উপভোগ করার চেষ্টা করেন প্রবাসীরা। তারা ঈদের দিন একে অপরের বাসায় যাওয়ার চেষ্টা করেন। পিঠা-সেমাই দিয়ে একে অপরকে আপ্যায়ন করেন।


মৌলভীবাজার জেলার সাধুহাটির বাসিন্দা মরিয়ম বিবি। প্রবাসের ঈদ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিদেশে ঈদের কোন আনন্দ নেই। তার পরও ছেলেমেয়ে নাতি-নাতনি নিয়ে তিনি ঈদের দিন আনন্দ করার চেষ্টা করেছেন।


আকিল রহিম নামের একজন এই প্রতিবেদকে বলেন, ঈদের দিন সকালে আমার আম্মু ও বড় ভাইয়ার সাথে ঈদের নামাজ আদায় করতে ঈদগাহে গেছি। সবার সঙ্গে কোলাকোলি করেছি।


বিবার্তা/খলিল/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com