শিরোনাম
তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল নিয়েও ভাবছে বাংলাদেশ
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০১৬, ১৫:৫৭
তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল নিয়েও ভাবছে বাংলাদেশ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকতে চায় না। তারই অংশ হিসেবে আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল চালু হচ্ছে। এই সাবমেরিন ক্যাবল চালু হলে আরও এক হাজার ৩০০ জিবিপিএস (গিগাবাইট/সেকেন্ড) ব্যান্ডউইডথ দেশে আসবে। অথচ প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের এক তৃতীয়াংশ ব্যান্ডউইডথ এখনও অবহৃত রয়েছে। কিন্তু দেশের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যত চাহিদার কথা ভেবে বাংলাদেশ তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে। ইতিমধ্যে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার কারণগুলোও সরকারের কাছে ব্যাখ্যা করেছেন।


তবে অর্থ বিনিয়োগ না করে ব্যান্ডউইথ আদান-প্রদানের মাধ্যমে এ ক্যাবলে যুক্ত হবার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই এগিয়ে যেতে চাইছে সরকার।


তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে প্রযুক্তি মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ‘দেশে সরকারি ব্যান্ডউইডথ অব্যবহৃত রয়েছে পলিসিগত দুর্বলতার কারণে। আমরা যদি মোবাইল ইন্টারনেটের বদলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারতাম, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের এর সঙ্গে যুক্ত করতে পারি তাহলে দ্বিতীয়, তৃতীয় কেন চতুর্থ পঞ্চম সাবমেরিন ক্যাবলের চিন্তা করতে হতো।’


তিনি বলেন, ‘শুধু তাই নয়, ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর পুরো বাজার বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত। এখন শুধু ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ দিচ্ছি আমরা, অথচ এটা কয়েশ জিবিপিএস পর্যন্ত রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। তাই নতুন ব্যান্ডউইডথ ক্যাবলে যুক্ত হওয়া ভুল হবে না। অর্থ ছাড়া যুক্ত হতে পারলে বেশি ভালো। তবে অর্থ ব্যয়ে যুক্ত হতে হলেও দেশের স্বার্থকে বিবেচনায় নিতে হবে। আর সাবমেরিন ক্যাবল নেটওয়ার্ক একটি কোম্পানি নির্ভর হওয়ার চেয়ে আগেরগুলোর মতো কনসোর্টিয়াম হলে বেশি ভালো হয়।’


সূত্র জানিয়েছে, হুয়াও মেরিন নামে একটি কোম্পানি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার আগ্রহী দেশগুলোকে এক সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ক্যাবলের রুট বঙ্গোপসাগর দিয়ে অতিক্রম করবে। প্রাথমিকভাবে বলা হচ্ছে, এটা চীন থেকে মিয়ানমার হয়ে ভারত কিংবা শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত যাবে। তাই এ কনসোর্টিয়ামে যোগ দেয়ার বিষয়ে বিএসসিসিএল পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি চেয়েছে।


পর্ষদ সূত্রে জানা গেছে, বিএসসিসিএল যেহেতু দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে বিপুল ব্যয় করেছে, তাই তৃতীয় সাবমেরিন ক্যবালের জন্য বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। এমনটাই মত দিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ। তবে বিএসসিসিএল এ প্রকল্পে কোনো বিনিয়োগ না করে ব্যান্ডউইডথ আদান-প্রদানের মাধ্যমে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা যাচাই করবে।


বর্তমানে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে সাউথ ইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-৪ (এসইএ-এমই-ডাব্লিউই-৪) কনসোর্টিয়ামের আওতায় একটিমাত্র সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত। যা সংক্ষেপে সি-মি-উই-ফোর নামে পরিচিত। এটি পরিচালনা করে বিএসসিসিএল। এর মাধ্যমে ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সি-মি-ইউ ফোর সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের প্রায় ১৩টি দেশের ১৫টি ল্যান্ডিং পয়েন্ট সংযুক্ত হয়েছে।


২০০৫ সালে ৩৫.২ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয়ে এই কনসোর্টিয়ামে যোগ দেয় বাংলাদেশ। এই সাবমেরিন কেবল সংযোগ সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারতের চেন্নাই, শ্রীলঙ্কা হয়ে ভারতের মুম্বাই পর্যন্ত বিস্তৃত।


এ ক্যাবলটি কোনো কারণে কাটা পড়লে বা ত্রুটি দেখা দিলে তা মেরামত করতে সাত থেকে ১০ দিন সময় লাগে। এতে তথ্যপ্রযুক্তির কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। তাই বিকল্প হিসেবে সরকার সি-মি-উই-৫ নামে নতুন আরেকটি ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার উদ্যোগ নেয়। ২০১৩ সালে পদক্ষেপ নেয়া হলেও ক্যাবল স্থাপনের কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। ক্যাবল স্থাপনের কাজ করছে সিংটেল, সৌদি টেলিকম, ফ্রান্স টেলিকম, চায়না টেলিকম, চায়না মোবাইল ও ভারতী এয়ারটেল।


সাগরের নিচ দিয়ে ২৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ মূল ক্যাবল সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার পর্যন্ত আসবে। এখান থেকে আরো ৩০০ কিলোমিটার ক্যাবলের মাধ্যমে এটি পটুয়াখালীর কুয়াকাটার ল্যান্ডিং স্টেশনে নেয়া হচ্ছে। সি-মি-উই-৫ প্রকল্পে যুক্ত হতে ব্যয় হচ্ছে ৬৬০ কোটি টাকা। এরমধ্য সরকারি কোষাগার থেকে ১৬৬ কোটি, প্রকল্প সাহায্য ৩৫২ কোটি এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিলের ১৪২ কোটি খরচ হচ্ছে।


সূত্র মতে, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে আগামী বছর থেকে আরো ১৩০০ জিপিএস সাবমেরিন ক্যাবল ব্যান্ডউইডথ পাওয়া যাবে। বলা হচ্ছে সি-মি-উই-৫ হচ্ছে সি-মি-উই-৪ এর চেয়ে দশগুণ শক্তিশালী। সি-মি-উই-৫ প্রকল্পের মাধমে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের ১৬ দেশ সংযুক্ত হচ্ছে। দেশগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ফ্রান্স, ইতালি, আলজেরিয়া, তিউনেশিয়া, মিশর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমার।


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com