শিরোনাম
আছে পয়লা বৈশাখ, নেই হালখাতা
প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০১৭, ১৫:৩৫
আছে পয়লা বৈশাখ, নেই হালখাতা
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। অতীতে বৈশাখের প্রথম দিনে ব্যবসায়ীরা বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে হালখাতার আয়োজন করতেন। বছরের প্রথম দিন ব্যবসায়ীরা তাদের পুরনো বছরের দেনা-পাওনার হিসাব সমন্বয় করে নতুন খাতা খুলতেন।

 

এদিন পুরনো দেনা শোধ করে দোকানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মিষ্টিমুখ করাটা ছিল ভোক্তাদের কাছে মর্যাদার। কিন্তু এমন দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না। সারা দেশে পয়লা বৈশাখের উন্মাদনা থাকলেও নেই হালখাতার মহরত।

 

বাঙালির এই ঐতিহ্যটি কোনো কোনো এলাকায় চোখে পড়লেও আগের মতো জমজমাট হয় না। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন পয়লা বৈশাখের দিনে হালখাতার আয়োজন করে না। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

 

পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানের একটি উল্লেখযোগ্য আয়োজন ছিল হালখাতা। দুই দশক আগেও বৈশাখের প্রথম দিনে গ্রামাঞ্চলের হাটবাজারে অবস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা মূলত এর আয়োজন করতেন। অনুষ্ঠানের এক সপ্তাহ আগে থেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ছাপানো কার্ডের মাধ্যমে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি হালখাতার আমন্ত্রণ দিতেন।

 

সেই আমন্ত্রণপত্রে বকেয়া অর্থের পরিমাণ উল্লেখ থাকতো। আর পয়লা বৈশাখের দিন রঙ-বেরঙের কাগজের নকশা দিয়ে সাজানো হতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে। সকাল থেকে প্রতিটি মানুষ তাদের পাওনা পরিশোধ করতে দোকানে আসতেন। চলতো রাত পর্যন্ত। আর প্রতিষ্ঠানের মালিকরা মতিচুরের লাড্ডু ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করতেন ক্রেতাদের।

 

ব্যবসায়ীরা জানান, হালখাতা উৎসব আয়োজনে ক্রেতাদের কাছ থেকে এখন আর সাড়া পাওয়া যায় না। ব্যস্ত জীবনের যাঁতাকলে ভোক্তারা দোকানে আসার সুযোগ পান না। অনেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জরুরি পাওনা পরিশোধ করেন। আবার একই ক্রেতা একই বাজারের কয়েক ব্যবসায়ীর সাথে লেনদেন করে থাকেন। তাই একই দিনে সকল দোকানে হালখাতার আয়োজন করলে ক্রেতারা পাওনা টাকা দিতে ব্যর্থ হন। তাই পুরো বৈশাখ মাসজুড়েই চলে হালখাতার উৎসব।

 

কারওয়ান বাজারের সোরাব আলী একজন পেঁয়াজ আড়ৎদার। বিবার্তাকে তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী হালখাতার আয়োজন এখন আর আগের মতো জমে ওঠে না। বিক্রেতারা গ্রাহকদের কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ায় আগের মতো এখন আর হালখাতা পালন করেন না। আবার একই গ্রাহক বাজারের কয়েক দোকানের ক্রেতা হওয়ায় বিক্রেতারা একই দিনে (পয়লা বৈশাখ) হালখাতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে না।

 

তিনি অতীতের কথা স্মৃতিচারণ করে বলেন, আগে পয়লা বৈশাখ আসার আগ থেকে আলাদা একটি আয়োজন থাকতো। দোকানে দোকানে মিষ্টি বিতরণ করা হতো। ভালো ভালো খাবারের আয়োজন করা হতো। কিন্তু এখন সেই আয়োজন ব্যবসায়ীদের মাঝে নেই বলে জানান ষাটোর্ধ্ব ওই ব্যবসায়ী।

 

এদিকে, হালখাতা উৎসবের প্রথাটি গ্রামগঞ্জ থেকেও হারিয়ে গেছে। গ্রামাঞ্চলের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

 

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কটারকোনা গ্রামের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান রহমত নববর্ষের দুপুরে বিবার্তা প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আগে গ্রামের বাজারগুলোতে হালখাতার আয়োজন করা হতো। কিন্তু এখন আর হয় না। কেন হয় না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হালখাতার আয়োজন করা হলে তেমন সাড়া মেলে না। তাই এ উৎসব দিন দিন আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

 

বিবার্তা/খলিল/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com