সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব দাবি, আন্তর্জাতিক সালিশি শুরুর হুমকি এস আলমের
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৮
সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব দাবি, আন্তর্জাতিক সালিশি শুরুর হুমকি এস আলমের
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের ব্যাংকখাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপির দায়ে অভিযুক্ত এস আলম গ্রুপ; যার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান– মোহাম্মদ সাইফুল আলম দাবি করেছেন, সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব এবং একটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চুক্তি থাকায়— তার ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক যে ভীতিপ্রদর্শন বা 'হুমকিধামকির প্রচারণা' চালাচ্ছে তা থেকে তিনি সুরক্ষিত থাকতে পারছেন।


এ বিষয়ে সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের পক্ষে আইনি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিসি মামলা করতে পারেন। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে হুঁশিয়ারি দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, এবিষয়ে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বা এফটি।


কিছুদিন আগে এফটিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো থেকে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা (১০ বিলিয়ন ডলার) পাচার করেছে সাইফুল আলম ও তার সহযোগীরা। তারপরেই এই চিঠি দিল এস আলমের পক্ষে আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল উরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভান।


এফটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিঠিতে আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে জনপরিসরে 'উস্কানিমূলক ও অপ্রমাণিত মন্তব্য' করার অভিযোগ এনে বলা হয়েছে, গভর্নরের এ ধরনের আচরণ 'একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভয়ভীতি ছড়ানোর প্রচারণার' শামিল। এই শিল্পগোষ্ঠী বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করেছে।


এস আলম গোষ্ঠীর এই চিঠি ও আন্তর্জাতিক সালিশি মামলার হুমকি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তাদের সবচেয়ে বড় প্রত্যাঘাত।


ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আহসান মনসুর বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে সরকারপ্রধানের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় ব্যাংক খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। এর মধ্যে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম একাই এক হাজার কোটি ডলার দেশের বাইরে পাচার করে নিয়ে গেছেন। এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যাংক ডাকাতির এটাই সবচেয়ে বড় ঘটনা।


চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভুল ও মানহানিকর।


সাইফুল আলম কবে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব পেয়েছেন, সে বিষয়ে আইনি প্রতিষ্ঠানের কাছে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জানতে চাইলে তারা সাড়া দেয়নি। তারা এখনো বাংলাদেশের নাগরিক কি না, তা–ও জানা যায়নি। সিঙ্গাপুর সরকারও ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।


তবে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি হয়েছে ২০০৪ সালে।


বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের আইন মেনে বিদেশে বিনিয়োগের কোন অনুমোদন সাইফুল আলম নেননি। দেশের যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বিদেশে বৈধভাবে বিনিয়োগ করেছে, সেই তালিকায় সাইফুল আলমের নাম নেই।


অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের আইনে ২৫ লাখ সিঙ্গাপুর ডলার (প্রায় ২৩ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করে নাগরিক হওয়া যায়। এ জন্য তার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। পাশাপাশি সেই দেশে আরও বিনিয়োগ করতে হয়। এটা করতে পারলে তাদের ছেলে সন্তানেরা সে দেশে সরকারি চাকরির সুযোগও পান। তবে সিঙ্গাপুরের নাগরিক নিতে হলে নিজ দেশের নাগরিকত্ব ছাড়তে হয়।


চিঠিতে বলা হয়েছে, এই চুক্তির অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের মন্তব্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মন্তব্য হিসেবে গণ্য হবে। আরও বলা হয়েছে, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের বিদেশি বেসরকারি আইন অনুসারে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে এস আলম ও তাঁর পরিবারের অধিকার ও সুরক্ষা আছে।


চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারীরা হিসেবে নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু আন্তর্জাতিক সালিশি মামলা নয়, প্রয়োজনে অন্যান্য ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।


এ অভিযোগ প্রসঙ্গে আহসান মনসুর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, তার দাবির শতভাগ ভিত্তি আছে। বিভিন্ন ব্যাংকে অনেক বছর ধরে এসব দুর্নীতি হয়েছে। এসব তথ্যপ্রমাণ সংকলন করা হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ সংকলন করতে সময় লাগবে।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com