
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসবে। ফলে বাংলাদেশের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন।
প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটের অক্টোবর সংখ্যায় বিশ্বব্যাংক বলেছে, সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ২০২৪ অর্থবছরের ৯ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ২০২৫ অর্থবছরে ৯ শতাংশে নেমে আসবে। তবে, রাজনৈতিক বিক্ষোভের অনিশ্চিত প্রভাব ও সরকারের চলমান পরিবর্তনের কারণে অর্থনীতির মাত্র চার শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে বহুজাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি।
১৫ অক্টোবর, মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য অনলাইনে ওয়াশিংটন থেকে বক্তব্য রাখেন- বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকনোমিস্ট ধ্রুব শর্মা, ইকনোমিস্ট নাজমুস খান এবং বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব।
বিশ্বব্যাংক বলছে, 'বাংলাদেশ এখন গণঅভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রভাব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। তবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি স্বাভাবিক করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
তারা আরও বলেছে, উচ্চ আমদানি ব্যয় ও সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় পূর্বাভাসের সময়কালে মূল্যস্ফীতি উচ্চ থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের বাজারে খাদ্যদ্রব্য বিশেষ করে সবজির দাম যখন আকাশছোঁয়া, ঠিক তখন বিশ্বব্যাংকের এই পূর্বাভাস সামনে এলো।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারেনি। অথচ প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যান তরুণ কর্মের বাজারে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে শিক্ষিত ও শহুরে বেকার বৃদ্ধি পাওয়াটা একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের জন্য অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। নানা উদ্যোগ নিয়েও এটি কমানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। যা সাধারণ মানুষের জীবনমানকে নিচে নামাচ্ছে। পাশাপাশি বৈষম্যও বাড়ছে বাংলাদেশে। এক্ষেত্রে বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ দরকার। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং আর্থিক খাতে বিভিন্ন সংস্কার দ্রুত করতে হবে।
এর আগে তিন সপ্তাহ আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) যে পূর্বাভাস দিয়েছিল, বিশ্বব্যাংকের এই পূর্বাভাসের সঙ্গে তার মিল আছে। ম্যানিলাভিত্তিক এডিবি পূর্বাভাস দিয়েছিল, টাকার অবমূল্যায়নে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়া ও উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণে ২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির গড় হার ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০২৩ অর্থবছরে যা ছিল ৯ শতাংশ।
২০২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ভোক্তা মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে গড়ে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক সরকার পরিবর্তনের সময় সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল।
এদিকে জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ এবং প্রথম প্রান্তিকে গড়ে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ কমতে শুরু করায় মূল্যস্ফীতি কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে অব্যাহত মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় ২০২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও মুদ্রানীতি কঠোর রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]