
বাজারে চালের দাম বাড়তি। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম দুই থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কোনোভাবেই বাগে আনা যাচ্ছে না চালের দাম। বন্যায় ত্রাণের অজুহাতে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে আটাশসহ বেশিরভাগ চাল।
চালের পাশাপাশি বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিমের দামও। তবে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম কিছুটা কমেছে।
বেশিরভাগ সবজির দাম কমেছে ২০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। চাঁদাবাজি কমায় সবজিতে সুফল পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। কেজিতে ৫ টাকা কমেছে আটা ও চিনির দাম। মাছের দাম কমার কথা বলা হলেও, অসন্তুষ্ট ক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের বেশ কয়েকটি বন্যাকবলিত জেলায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য হঠাৎ করে চালের বিক্রি বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মোটা চালের চাহিদা এখন অনেক বেশি। এর পাশাপাশি ধানের দামও সম্প্রতি আরেক দফায় বেড়েছে। এসব কারণে খুচরা পর্যায়ে আগের চেয়ে বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর তিনটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মোটা চালের (স্বর্ণা/২৮) দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৪ টাকা। গতকাল এ ধরনের চাল ৫২ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এভাবে চিকন চালের (মিনিকেট) দামও কেজিতে দুই থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর চালের বিভিন্ন মোকাম ও পাইকারি পর্যায়ে কেজিপ্রতি দর বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা।
চালের দাম বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ অটো রাইস মেজর ও হাস্কিং মিল মালিক সমিতির কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবদিন বলেন, বন্যার কারণে চালের চাহিদা অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি ধানের দামও বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ টাকার মতো বেড়েছে। এ দুই কারণে বিভিন্ন মোকামে চালের দাম বেড়েছে।
বাজারে ব্রয়লার ও সোনালি—উভয় প্রকার মুরগির দাম বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, যা গতকাল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে কোথাও এই দাম আরও ১০ টাকা বেশি ছিল। আর সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালি মুরগির দামও কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা হয়েছে।
১০ দিনের ব্যবধানে বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দাম ডজনপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়েছে। তাতে গতকাল প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা দরে। আর ফার্মের মুরগির সাদা ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা দরে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মগবাজার চারুলতা মার্কেট, কল্যাণপুর বাজারে সরেজমিন ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ দিনে বাজারে খুচরা পর্যায়ে মোটা চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
গত ৫ আগস্টের আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে অস্থির সময়ে চালের দাম ২ দফা বেড়ে কেজিতে বেড়েছিল প্রায় ৩ টাকা। এর পরে আকস্মিক বন্যার প্রভাবে নতুন করে আবার কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা দাম বাড়ে। প্রধান এই খাদ্যপণ্যের দাম বিভিন্ন কারণে দফায় দফায় বাড়তে থাকায় সংসারের খাবারের খরচ মেটাতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষেরা।
শনিবার (৭ন সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মগবাজার চারুলতা মার্কেট, কল্যাণপুর বাজারে সরেজমিন ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঝারি চাল বিআর-২৮ ও পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। পাশাপাশি মানভেদে সরু চালের কেজি ৭০ থেকে ৭৮ টাকা।
রাজধানীর পাড়া–মহল্লার দোকানে এখন ৬০ টাকা কেজির নিচে বিক্রি হচ্ছে না কোনো চাল। তবে, কারওয়ানা বাজারসহ বড় বাজারগুলোতে ৫৫ টাকা থেকে ৫৮ টাকায় মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে।
ভোক্তারা বলছেন, নতুন সরকারের নিত্য পণ্যের দাম বিশেষ করে চালের দাম কমানেরা ক্ষেত্রে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
কারওয়ান বাজারে কথা হয় ক্রেতা জোবায়ের আনসারি সঙ্গে। তিনি বলেন, "পাইজাম কিনেছি ৬০ টাকা কেজি। তবে এ চাল অনেক সময় নেয় সেদ্ধ হতে। ভাত থাকে শক্ত, শিশুরা খেতে পারে না। একটু ভালো মানের চাল কিনলে দাম পড়ে ৭০ টাকা কেজি।"
তিনি বলেন, "ডিম এবং মুরগির দামও বাড়তি। আসলে আমাদের সীমিত আয় দিয়ে পুরো মাসের খরচ চলাতে হিমশিম খাই। মাসের শেষে ধার করে চলতে হয়।"
"গত মাসে ২,০০০ টাকা ধার এনেছিলাম, সেই টাকাও দিতে পারিনি। ২০,০০০ টাকা আয় মাসে। খরচ বাড়ছে, কিন্তু আয় বাড়ছে না। সরকারকে শক্তভাবে দ্রুত বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে," যোগ করেন এই ক্রেতা।
এদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজার দর নিয়ে গত সপ্তাহে সাংবাদিকের বলেছেন, "বাজারে জিনিসপত্রের দাম মোটেও হতাশাব্যাঞ্জক নয়। জনসাধারণের জন্য বাজার যেন আরও সুখকর হয়, সেজন্য আমরা কাজ করছি।"
উপদেষ্টা বলেন, "নিত্যপণ্যের দাম কমানোর জন্য উৎপাদন খরচ ছাড়াও অন্যান্য ফ্যাক্টর থাকে। বাংলাদেশে কোনো জিনিসের দাম বাড়লে সহজে কমতে চায় না, সময় লাগে।"
বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মোটা চালের দাম কেজিতে ১ টাকা মিল গেটে বেড়েছিল। সরকার চাল কেনার শেষ তারিখ দিয়েছিল ৩১ আগস্ট।
তিনি বলেন, "২টি কারণে মোট চালের দাম বেড়েছে— এক, বন্যায় মানুষ ত্রাণ হিসেবে চাল দিয়েছে। আর সরকারও ধান ও চাল কিনেছে, যার শেষ সময় ছিল ৩১ আগস্ট। সরকারের শেষ সময়ের মধ্যে মিলাররা সরকারকে চাল দিতে না পারলে সমস্যা হয়। যার কারণে চাহিদা বেশি থাকায় ৩১ তারিখ পর্যন্ত মোটা চালের দামটা কেজিতে ১ টাকা বেড়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "এখন চালের দাম বেড়ে থাকলে এটি খুচরা ব্যবসায়ীদের কারসাজি। তারা কেনা দামের চেয়ে কেজিতে ৪-৫ টাকা লাভ করে। ৩১ আগস্ট মোটা চারের দাম মিল পর্যায়ে ছিল ৪৬ টাকা ৫০ পয়সা।"
সহিদুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, "চিকন চাল যেটি আমরা ৬২ টাকা বিক্রি করছি, মিল গেটে সেই একই চাল ঢাকার টোলারবাগে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। আমি এই দাম দেখে চমকে গেলাম। দোকানদার বললো কেজিতে ৫-৬ টাকা লাভ না করলে তাদের পোষায় না।"
তিনি বলেন, "খুচরা ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতা বেশি।"
এদিকে, সরকারি বিক্রয়কারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, সরকারের দাম কমানোর চেষ্টা সত্ত্বেও মোটা চালের দাম গত এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে। তথ্য অনুযায়ী, খুচরা বাজারে মোটা (স্বর্ণা/ ইরি) চাল প্রতি কেজি ৫২-৫৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে; এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ১.৯ টাকা।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]