চলতি বছর দেশে সাপের কামড়ে ৩৮ জনের মৃত্যু: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪, ১৪:৩৯
চলতি বছর দেশে সাপের কামড়ে ৩৮ জনের মৃত্যু: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সারাদেশে ২০২৪ সালের এখন পর্যন্ত ৬১০টি সর্পদংশনের ঘটনা ঘটেছে, তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।


১০ জুলাই, বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে রাসেলস ভাইপার নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) আসা তথ্য অনুসারে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ৬১০টি সর্পদংশনের তথ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে রাজশাহীতে।


তিনি বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সর্পদংশনে মোট ৪১৬ জন রোগী ভর্তি হয়, তার মধ্যে বিষধর ৭৩টি এবং ১৮টি চন্দ্রবোড়া সাপ ছিল। সাপের কামড়ে আক্রান্তদের মধ্যে মোট ১১ জন রোগী মারা যান, যার মধ্যে চন্দ্রবোড়ার দংশনের কারণে মারা যান ৫ জন।


অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে রাসেলস ভাইপার নিয়ে সারাদেশে বিভিন্ন তত্ত্ব, তথ্য, গুজব কিছুটা ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশে সর্পদংশন নীতিগতভাবে একটি স্বীকৃত গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ২০২২ সালে পরিচালিত জাতীয় জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৪ লাখের বেশি মানুষ সর্পদংশনের শিকার হন, যার মধ্যে দুঃখজনকভাবে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। সাপ বিষয়ে অপর্যাপ্ত তথ্য থাকা সত্ত্বেও প্রধান বিষধর সাপের মধ্যে গোখরা, ক্রেইট (কালাচ্), চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার ও সবুজ সাপ অন্যতম। কিছু কিছু সামুদ্রিক সাপের দংশনের তথ্যও আছে।


চন্দ্রবোড়া ভাইপারিড গ্রুপের একটি বিষাক্ত সাপ, বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়ায় অস্তিত্ব এবং এর দংশনে মৃত্যুর ইতিহাস ১৯২০ সালেই স্বীকৃত আছে। ২০১৩ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চন্দ্রবোড়া অথবা উলুবোড়া সাপের দংশনের প্রথম রিপোর্ট হিসেবে লিপিবদ্ধ আছে, প্রাথমিকভাবে রাজশাহী ও বরেন্দ্র অঞ্চলে এর প্রভাব বেশি দেখা গেলেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে চন্দ্রবোড়ার বিস্তৃতি ২৭টি জেলায় ছড়িয়েছে।


ডা. রোবেদ আমিন জানান, বিষধর সর্পদংশনের স্বীকৃত চিকিৎসা হচ্ছে অ্যান্টিভেনম। দেশের প্রধান বিষধর সাপের বিষ সংগ্রহ করে তা ঘোড়ার শরীরে প্রয়োগ করা, ঘোড়ার রক্তের সিরাম থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয় না। ভারতে তৈরি (৪টি প্রধান বিষধর সাপের বিষয়ে বিরুদ্ধে প্রস্তুত) অ্যান্টিভেনম সংগ্রহ করে অসংক্রামক ব্যাধি কর্মসূচি বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম সরবরাহ করে থাকে। অ্যান্টিভেনম ক্রয়, বিতরণ, সংরক্ষণ, ব্যবহার, ব্যবহার পরবর্তী প্রভাব (নজরদারি) দেখার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের সুফল লক্ষণীয়।


সর্পদংশন নিয়ে যেসব কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর


স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, জাতীয় ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা প্রণয়ন (২০০০), হালনাগাদ (২০১৯); চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জন্য প্রশিক্ষণ মডিউল; সীমিত স্বাস্থ্য শিক্ষামূলক (SBCC) উপকরণ ব্যবহার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জুড়ে সর্পদংশনের ব্যবস্থাগুলো পরিচালনা করা। অ্যান্টিভেনম ক্রয়, বিতরণ ও পর্যবেক্ষণ, প্রতি মাসেই অনলাইনে প্রশিক্ষণ প্রদান, হোয়াটস অ্যাপে ২৪ ঘণ্টা স্নেকবাইট সাপোর্ট গ্রুপ পরিচালনা, ভেনোম রিসার্চ সেন্টারে প্রতিনিয়ত গবেষণাধর্মী কার্যক্রম এবং দেশব্যাপী প্রচার প্রকাশনা এবং সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান এর মধ্যে অন্যতম।


অধিদপ্তর আরও জানায়, বাংলাদেশে সর্পদংশনে কর্মকৌশল ও অর্থের ব্যবস্থাসহ সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা (২০২৩-২০২৮) তৈরি করা হয়েছে। সর্পদংশন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে ২০৩০ সাল নাগাদ শতকরা ৫০ শতাংশ মৃত্যু এবং অক্ষমতা কমানোর লক্ষ্যে এই কর্মকৌশল সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রাখবে।


বিবার্তা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com