
তিস্তা নদী বাংলাদেশের সীমানায়, এটা বাংলাদেশের নদী মন্তব্য করে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছিলাম আমরা। তিস্তা নদীতে প্রকল্প নেয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ নেবে। চীন সেই সিদ্ধান্তে সম্মান জানাবে।
৪ জুলাই, বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে কূটনীতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন চীনা রাষ্ট্রদূত।
এসময় ডিক্যাব সভাপতি নূরুল ইসলাম হাসিব ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু বক্তব্য রাখেন।
ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমরা সেটা সম্পন্ন করি। যে পক্ষই এ প্রকল্পে কাজ করুক, দ্রুত শেষ হোক সেটা আমরা চাই। উত্তরের সমস্যার দ্রুত সমাধান হোক সেটা আমরা চাই। আর তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্পে ভারতের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে রাজি আছে চীন।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশকে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে দেখে চীন। এ ধারাবাহিকতায় উন্নয়ন চলতে থাকলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হবে ৪ হাজার ডলার। আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও চীনের দৃষ্টিভঙ্গি একই। ফলে আমাদের সম্পর্কের একটি কমন জায়গা রয়েছে।
ইয়াও ওয়েন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে এদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, কৃষি সহযোগিতা, ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট, ডিজিটাল ইকোনোমি, শিক্ষা, গণমাধ্যমের সঙ্গে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়াও দুই দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হবে। আবার রোহিঙ্গা সংকট আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
মিয়ানমারে যুদ্ধ থামাতে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলছে চীন-যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ উন্মুক্ত করবে এ কথা জানিয়ে ইয়াও ওয়েন বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে চীন সকল পক্ষকে একত্রিত করে ইতিবাচক কাজ করে যাচ্ছে। গত বছর চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এ নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছে। এটি দুর্ভাগ্যজনক গত বছর সেপ্টেম্বরে মিয়ানমারের সংঘর্ষ শুরু হলে এ নিয়ে অগ্রগতি স্থগিত হয়ে যায়।
তিনি বলেন, দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে। কিন্তু যত জটিলই হোক, আমরা চেষ্টা করে যাব যুদ্ধবিরতি আনার। যুদ্ধবিরতি না হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কঠিন। আমরা আরাকান আর্মির সঙ্গেও কথা বলেছি এ বিষয়ে। আরাকান আর্মিসহ সব আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তৃতীয়পক্ষীয় আলোচনা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এটিকে আমরা বন্ধ বলতে চাই না। এটাও নিশ্চিত নই যে, কবে প্রত্যাবাসন শুরু হবে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে, গৃহযুদ্ধ থামে এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দ্বার উন্মুক্ত হয়।
এসময় ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার চীন সফর নিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ অনেকদিন ধরেই একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ রয়েছে, যা উন্নতিকে ত্বরান্বিত করেছে। চীনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফর আগামী ৫ বছর বা তারও পরেও দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করার পথ সুদৃঢ় হবে।
তিনি জানান, এ সফরে দুই দেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। দুই দেশের মধ্যে উইন উইন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
কয়টি ডুকুমেন্ট সই হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, এ সম্পর্কে আমি বলার উপযুক্ত নই। তবে আমি বলতে পারি এই সফরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্প, চীনা বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, ব্রিকসে সদস্য হতে চীন সহযোগিতা করবে। অচিরেই বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য হবে বলে আশা করি।
প্রসঙ্গত, আগামী ৮ জুলাই চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৯ জুলাই তিনি ওই দেশের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ১০ জুলাই বৈঠক করবেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে। একই দিন চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস অব চায়নার প্রেসিডেন্ট ঝাও লেজির সঙ্গেও বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। সফরে বাংলাদেশের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাবে। সেখানে চীনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]