ক্ষমতার অপব্যবহার করে একক নির্বাহী সিদ্ধান্তে চার মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানকে ১৫২ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করায় মূসকের (ভ্যাট) সাবেক কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

১১ জুন, মঙ্গলবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত কার্যালয়-১-এ মামলাটি করেছেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক শাহ আলম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

আইন বহির্ভূতভাবে একক নির্বাহী সিদ্ধান্তে গ্রামীণ ফোন, রবি, বাংলালিংক ও এয়ারটেল লিমিটেডকে ১৬টি নথিতে ১৫২ কোটি ৮৯ হাজার ৩৯০ টাকা অপরিশোধিত সুদ মওকুফ করেছিলেন ওই কাস্টমস কমিশনার। ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার হিসেবে অবসরে যান।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চারটি প্রতিষ্ঠানের স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর আইনানুগভাবেই ভ্যাট প্রযোজ্য হওয়ায় তা মেনে নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে যথাসময়ে ১৮৯ কোটি ৭৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করার কথা বলে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত কর মেয়াদে পরিশোধ না করায় মূসক আইন অনুযায়ী প্রযোজ্য হারে প্রদেয় সুদের পরিমাণ হয় ১৫২ কোটি ৮৯ লাখ ৩৯০ টাকা। মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ধারা ৩৭(৩) অনুসারে সুদ আদায়ের জন্য কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী অতি দ্রুত সুদের হিসাব করার নির্দেশ প্রদান করেন। সুদ হিসাবে সরকারের পাওনা অর্থের মধ্যে গ্রামীণ ফোন লিমিটেডের কাছে ৫৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯৭ টাকা, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনের কাছে ৫৭ কোটি ৮৮ লাখ ৫৩ হাজার ৫১ টাকা, রবি আজিয়াটার কাছে ১৪ কোটি ৯৪ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৬ টাকা এবং এয়ারটেল বাংলাদেশের কাছে ২০ কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৫২ টাকা রয়েছে। পরবর্তীকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৩ থেকে ৫ মাস পর ভিন্ন আদেশে ওই সুদ মওকুফ করে দেন ওয়াহিদা রহমান।

এনবিআর সদস্য হোসেন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত টিমের প্রতিবেদনেও এর সত্যতা পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১৮/৪০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি করা হয়।

এদিকে, ওয়াহিদার বিরুদ্ধে দেশের বেশ কয়েকটি সংস্থা তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেসব তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন।

খোরশেদা ইয়াসমীন নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মূসকের সাবেক কমিশনার ওয়াহিদা রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করে একক সিদ্ধান্তে চারটি মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানকে এই সুবিধা দিয়েছিলেন। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন, সাবেক কর কমিশনার ওয়াহিদা রহমান একক নির্বাহী আদেশে অসৎ উদ্দেশ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান থেকে সুদ আদায় না করে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি সাধন করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার মামলা করে দুদক। অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট চারটি মোবাইল কোম্পানির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান দুদক সচিব।

বিবার্তা/লিমন