শিরোনাম
নদী ভাঙ্গন রোধে
ভোলায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০১৭, ১২:৩০
ভোলায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প
ফাইল ছবি
ভোলা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ভোলা জেলার চারটি সংসদীয় এলাকায় নদী ভাঙ্গন রোধে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে চার প্রকল্পের মাধ্যমে সদর উপজেলা, বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, তজুমুদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলায় নদী তীরে ব্লক ও জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন বন্ধে কাজ হচ্ছে।


এর মধ্যে ভোলা-১ (সদর উপজেলা) ২৮০ কোটি। ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন) ৫৫১ কোটি। ভোলা-৩ (তজুমুদ্দিন) ৪৪৯ কোটি ও ভোলা-৪ (চরফ্যাশন) আসনের জন্য ২১০ কোটি টাকাসহ মোট ১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে জেলার নদী ভাঙ্গন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কাজ দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


এ ব্যাপারে ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন) আসনের সংসদ সদস্য আলী আযম মুকুল জানান, বিএনপি-জামায়াতের সময়ে এই এলাকায় নদী ভাঙ্গন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলেও বর্তমান সরকার ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিল ব্লকের মাধ্যমে নদীর গতি রোধ করা। তাই তার এলাকাতে ভাঙ্গন রোধে ৫৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। পাশাপাশি এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ভোলা জেলাকে স্থায়ীভাবে মেঘনার করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করা যাবে বলে মনে করেন এমপি মুকুল।


ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর অধীনে জেলা সদর, দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার ২টি নির্বাচনী আসনে ২টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৮৩১ কোটি টাকার কাজ চলছে। এর মধ্যে ‘মেঘনা নদীর ভাঙ্গন থেকে সদর উপজেলার রাজাপুর ও পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন রক্ষা প্রকল্প’র মাধ্যমে সদর উপজেলায় (ভোলা-১) ২৮০ কোটি টাকার কাজ চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছে। এ দুটি ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ১৫ লাখ সিসি ব্লক ও প্রায় ৮ লাখ জিও ব্যাগ নদী পাড়ে স্থাপনের মাধ্যমে পাড় সংরক্ষণ করা হবে। আর ৩ লাখ ৫৪ হাজার ২০৩টি সিসি ব্লক ও ১৩ হাজার ৪৪৭টি জিও ব্যাগ পাড়ে স্থাপন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কাজের ১৬ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।


এছাড়া ‘ভোলা জেলার দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার পোল্ডার ৫৬৫৭ রক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে ভোলা-২ আসনে নদী ভাঙ্গন বন্ধে ৫৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে কাজ শুরু হয়েছে। মোট ২৪টি প্যাকেজের মাধ্যমে ৯ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার এলাকায় ব্লক ও জিও ব্যাগে নদী পাড় সংরক্ষণ করা হবে। ইতিমধ্যে ৮টি প্যাকেজের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। ৩টি প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছে। আরো ৪টি প্যাকেজের কাজ শুরুর পক্রিয়া চলছে। এখানে দৌলতখান পৌরসভা এলাকা থেকে বোরহানউদ্দিনের পক্ষীয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত ৯ কিলোমিটারের বেশি এলাকা নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকি থেকে মুক্ত হবে।


ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকোশলী বাবুল আক্তার বলেন, নদী ভাঙ্গনরোধে সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ স্থাপনের কাজের গতি সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে। কাজের গুণগত মান সঠিকভাবে বজায় রাখার জন্য নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই নদী শাসনের কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাবুল আক্তার।


এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর তত্তাবধানে জেলার ভোলা-৩ (তজুমুদ্দিন) ও ভোলা-৪ (চরফ্যাশন) আসনের ২টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সিসি ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে নদীর পাড় রক্ষার কাজ চলছে। ‘মেঘনা নদীর ভাঙ্গন রোধে তজুমুদ্দিন উপজেলা সদর সংরক্ষণ প্রকল্পের’ মাধ্যমে গত মাসে ৪৪৯ কোটি টাকার ব্লকের কাজ শুরু হয়েছে। মোট ১৫টি প্যাকেজের মাধ্যমে উপজেলার চৌমোহনী এলাকা থেকে সোনাপুর পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকার নদী পাড় জুড়ে প্রায় ২৫ লাখ ব্লক স্থাপন করা হবে। ২০১৯ সালের জুন মাসে এর কার্যক্রম শেষ হবে।


অন্যদিকে জেলার সর্ব দক্ষিণের আসন ভোলা-৪ (চরফ্যাসন) উপজেলায় ২১০ কোটি টাকার ‘চরফ্যসন পৌরসভা সংরক্ষণ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন হচ্ছে। মোট ১১টি প্যাকেজের মাধ্যমে চরমাদ্রাজ এলাকা থেকে সামরাজ বাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকায় ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ভাঙ্গন বন্ধে কাজ দেবে। ইতিমধ্যে ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫টি প্যাকেজের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালের জুন মাসে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।


পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আলম বলেন, চরফ্যাশন ও তজুমুদ্দিন উপজেলা নদী ভাঙ্গন প্রবণ এলাকা। বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙ্গনের শিকার হতে হয়েছে এখানকার বহু পরিবারের। তাই বৃহৎ এ দুটি প্রকল্প চালু হওয়ায় মানুষের মাঝে সামাজিক নিরাপত্তা ও আশার সঞ্চার হয়েছে। তাই তজুমুদ্দিন ও চরফ্যাশন পৌরসভা সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলে নদী ভাঙ্গন অনেকটাই কমে যাবে।


এদিকে দ্বীপ জেলা ভোলাকে রক্ষা করার জন্য ভাঙ্গন রোধে সর্ব বৃহৎ ৪টি প্রকল্প চালু হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেছে ভোলাবাসী। বিগত দিনে অন্যান্য সরকারের মেয়াদে জেলায় নদী ভাঙ্গনরোধে টেকসই কোনো ভূমিকা না নেয়ায় হুমকির মুখে ছিল দক্ষিণের এই জনপদ। অবশেষে বর্তমান সরকার নদী নিয়ন্ত্রণে দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ায় স্বস্তি ফিরে পেয়েছে ভোলাবাসী। ব্লকের কাজের অগ্রগতির সাথে সাথে নিরাপত্তা বাড়ছে তাদের। এজন্য স্থানীয় এমপি ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান ভোলার মানুষ। একইসাথে উন্নয়ন কাজের গুণগতমান বজায় রাখার দাবি জানান তারা।


বিবার্তা/প্লাবন/সফিকুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com