চলতি বছর আরও ‘ভয়ঙ্কর’ হতে পারে ডেঙ্গু
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ২২:৫৭
চলতি বছর আরও ‘ভয়ঙ্কর’ হতে পারে ডেঙ্গু
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

‘মশা মারতে কামান দাগা’ বাগধারার ব্যবহার হয় তুচ্ছার্থে। কিন্তু মশা অতি সামান্য প্রাণী। সেটি মারতে এত হাঁকডাকের কী আছে! তবে মশাকে সামান্য জ্ঞান করাটা যে কত ভয়ঙ্কর হতে পারে, সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দিনের পর দিন নানা কার্যক্রম আর কোটি কোটি টাকা খরচ করেও দেশজুড়ে মশার উপদ্রব কমানো যাচ্ছে না।


চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে এবং তা হতে পারে ভয়ঙ্কর। গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় এই বছরের প্রথম তিন মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার দ্বিগুণেরও বেশি। গবেষণায় ঢাকাসহ ৯টি জেলায় ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার উচ্চঘনত্ব দেখা গেছে। আর ডেঙ্গু এখন সারা বছরের রোগে পরিণত হয়েছে৷


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার জানান, এই বছর ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাঁদপুর, নরসিংদী, গাজীপুর, বরিশাল, বরগুনা ও মাদারীপুরে ডেঙ্গুর প্রকোপ গত বছরের চেয়েও বাড়বে। মার্চ মাসে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করে দেখা গেছে, এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি ওই জেলাগুলোতে আরো খারাপ হবে। আমরা ডেঙ্গু মশার ঘনত্ব, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, ডেঙ্গু রোগী এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নেই। তাতে দেখা গেছে, এবার ওই জেলাগুলোতে শীতকালেও এডিস মশার ঘনত্ব ১০-এর উপরে। এটা মার্চ মাসের হিসেব। বৃষ্টি হলে এটা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এবার আগাম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ধারণা করি এখন এডিস মশার ঘনত্ব দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আর যদি রোগীর সংখ্যা বিবেচনা করি, ২০২৩ সালের তুলনায় এবছরের মার্চ মাসে দ্বিগুণেরও বেশি ছিল। ফলে আমরা যে তথ্য উপাত্ত পাচ্ছি তাতে ডেঙ্গু এবার অনেক প্রকট হবে।


স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত বছর প্রথম তিন মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ৯ জনের। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২২ জন যা গত বছরের একই সময়ে দ্বিগুণের বেশি। এ বছর একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। গত বছর প্রথম তিন মাসে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ছিল ৮৪৩ জন। এবার প্রথম তিন মাসেই ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৭০৫ জন।


২০২৩ সালে তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় এবং মারা যায় ১ হাজার ৭০৫ জন। গত বছর জুলাই-আগস্টের দিকে হঠাৎ ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় কোথাও কোথাও স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছিল। তখন স্যালাইনের দামও বেড়ে যায়। চলতি বছরে সেরকম পরিস্থিতি যাতে না হয়, সেজন্য গত ৩১ মার্চ বৈঠক করেছে স্বাস্থ্যবিভাগ।


স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জাহঙ্গীর আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, কৃত্রিম সংকট মোকাবিলা করতে চাহিদার চেয়ে বেশি স্যালাইন উৎপাদন হওয়া প্রয়োজন। এ কারণে উৎপাদন বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সব হাসপাতালে এখন থেকে স্যালাইন কিনে মজুত রাখতে হবে। পাশাপাশি ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ) চিকিৎসার জন্য প্ল্যাজমা ও রক্তক্ষরণ প্রতিরোধী ওষুধ আমদানি করা যায় কিনা, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।


মার্চ থেকে অক্টোবরকে ডেঙ্গুর মৌসুম ধরা হয়। এ সময়ে সারাদেশে প্রতি মাসে স্যালাইনের চাহিদা থাকে প্রায় ৫০ লাখ লিটার। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ কম থাকে। ওই সময়ে এ ধরনের স্যালাইনের মাসিক চাহিদা থাকে প্রায় ৩০ লাখ লিটার।


ডেঙ্গু ‘সারা বছরের’ রোগ


জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের চিকিৎসকরা এখন যথেষ্ঠ দক্ষ হয়ে উঠেছেন। হাসপাতালগুলোতেও ব্যবস্থাপনা এখন ভালো। তারপরও প্রস্তুতি প্রয়োজন। জেলা, উপজেলার সব হাসপাতালেরই আগাম প্রস্তুতি দরকার। সেই সঙ্গে দরকার মানুষকে সচেতন করা। তবে সমস্য হলো আগেই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করে ডেঙ্গু রোগ যাতে না হয় তার ব্যবস্থা তেমন নেয়া হচ্ছে না। আর এখন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে না গিয়ে অপেক্ষা করেন। রোগীর অবস্থা জটিল হলে হাসপাতালে যায়। ফলে ডেঙ্গুতে মৃত্যুও হার বাড়ছে।


ডা. লেনিন বলেন, ডেঙ্গু এখন সারা বছরের রোগ। এটা এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এডিশ মশার একটি ধরন হলো শহুরে এডিস। কিন্তু ২০১৯ সালের পর আমরা আরেকটি প্রজাতির এডিস মশা দেখতে পাচ্ছি যেটি বুনো এডিস। এটা বনে বাদাড়ে, গাছের কোটরে থাকে। ফলে এখন গ্রামেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে।


অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এখন দেশের মানুষ ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে জানে। এডিস মশা চেনে। এই মশা প্রতিরোধে কী করতে হয় তাও জানে। জানার পরও তারা বাড়িঘর পরিস্কার করেন না। স্বচ্ছ পানি জমতে দেন। আর এই পানিতেই এডিস মশা জন্মায়। আর সিটি কর্পোরেশনের মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেই।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com