রাজধানীর মালিবাগে মগবাজার-মৌচাকের একটি অংশ ধসে নিহত স্বপন মিয়া একজন কাঠমিস্ত্রী। তিনি ওই রাতে ৫ শ’ টাকার বিনিময়ে ফ্লাইওভারের কাজ করতে এসেছিলেন। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই প্রাণ হারাতে হয়েছে তাকে।
এমন তথ্য জানিয়েছেন ছখিনা বিবি নামের এক নারী। ৫০-উর্ধ্ব ওই নারীর বাসা মালিবাগ রেল ক্রসিংয়ের পাশে।
তিনি জানান, স্বপনের কাজ ছিল রাতে ফ্লাইওভারের ওপর গার্ডার তোলার সময় নিচে দিয়ে চলাচলকারী মানুষগুলোকে বিরত রাখা।
ছখিনা বিবি আরো জানান, গভীর রাতে বড় একটি আওয়াজ শুনে ঘুম ভাঙ্গে। পরে দৌঁড়ে তিনি রেল ক্রসিংয়ে চলে আসেন। ভোর হওয়ার আগেই তিনি জানতে পান স্বপন মারা গেছে।
নিহত স্বপনের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। তিনি অনেক দিন থেকে ঢাকায় বসবাস করেন। তার পরিবারের সদস্যরা গ্রামে থাকায় স্বপন ছখিনা বিবির বাসায় খাওয়াদাওয়া করতেন। ওইদিন ফ্লাইওভারের ঠিকাদার তাকে ৫ শ’টাকা দেবে বলে কাজে দেয়। বাড়তি আয়ের আশায় স্বপনও কাজটি নেয়।
কান্না জড়িত কণ্ঠে ছখিনা বলেন, হায় আল্লাহ, ছেলেটা কেন বাড়তি ইনকাম করতে এলো। এখন লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। আফসোস করে তিনি বলেন, স্বপনের তিনটি সন্তান রয়েছে। ওরা এখন কি করবে?
মালিবাগ রেলক্রসিংয়ের গেইটম্যান কাশেম জানান, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ওই জায়গাতে ফ্লাইওভারের ওপর একটি গার্ডার তোলে শ্রমিকরা। কিন্তু সেটি জয়েন্ট না করে ওই রাতে আরো একটি গার্ডার তুলতে গেলে এ মর্মান্তিক দুর্ঘনাটি ঘটে।
তিনি জানান, ফ্লাইওভারের কাজ রাতে করা হয়। সেই সময় নিচে লোক চলাচল তেমন থাকে না। কিন্তু সেই সময় যদি একটি ট্রেন যেত, তাহলে আরো অনেকের প্রাণ যেত।
স্বপন মিয়ার শ্যালক মাহফুজুর রহমান জানান, ময়না তদন্ত শেষে তারা লাশ কিশোরগঞ্জ নিয়ে যাবেন।
জানা গেছে, ফ্লাইওভারের নির্মাণ করছিল মেসার্স তমা কনস্ট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ওই রাতে ফ্লাইওভারের একটি গার্ডার উপরে তুলছিল। এছাড়া উপরে আরো একটি গার্ডার ছিল। সেই সময় একই সাথে দুটি গার্ডার নিচে পড়ে যায়। তখন কাজের তদারকি করতে আসা পলাশ বরণ ধর নামের একজন প্রকৌশলী, স্বপন মিয়া ও শাহ সিমেন্ট কোম্পানীর গাড়িচালক নুরুন্নবী হেলাল গুরুতর আহত হন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা স্বপনকে মৃত ঘোষণা করেন।
সোমবার রাত সোয়া ৭টার দিকে রাজধানীর রমনা মডেল থানার ওসি মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি, কাউকে আটকও করা হয়নি।
বিবার্তা/খলিল/মৌসুমী/হুমায়ুন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]