২৮ অক্টোবর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৩, ২২:৩২
২৮ অক্টোবর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করা হবে কর্ণফুলী টানেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত থেকে এ মেগা প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন। টানেল উদ্বোধনকে ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। তৈরি করা হচ্ছে উদ্বোধনী নামফলক। টানেলের দুই প্রান্তকে সাজানো হচ্ছে অপরূপভাবে। ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম এ সুড়ঙ্গপথ নির্মিত হচ্ছে।


চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এখন টানেলের ভেতরে-বাইরে নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। টানেলের সুরক্ষার জন্য দুই পাশে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ফাঁড়ির ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ চলছে। টানেল প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৯ শতাংশ। ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে পুরো কাজ।


টানেলে নিরাপত্তায় ১০০টির বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। টানেলে চলাচলকারী গাড়ির গতিবেগ প্রথম দিকে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত রাখতে পারবে গাড়ি চালকরা। পায়ে হেঁটে টানেল পার হওয়া যাবে না। একইভাবে মোটরসাইকেল এবং তিন চাকার যানবাহনও চলাচল করবে না টানেল দিয়ে। নির্ধারিত ওজনের বেশি ভারী যানবাহন এ টানেল দিয়ে চলতে দেওয়া হবে না। এজন্য টানেলের প্রবেশমুখে নির্মাণ করা হয়েছে ওজন স্কেল। কোন যানবাহন থেকে কী ধরনের টোল নেওয়া হবে তা ইতোমধ্যে নির্ধারণ করেছে মন্ত্রণালয়।


পতেঙ্গা টানেলের প্রবেশমুখে নৌবাহিনীর সদস্যরা দিনরাত টহল দিচ্ছে। টানেল নির্মাণে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যতীত অন্য কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। টানেলে দুটি মুখ রয়েছে। এর মধ্যে একটি পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় অপরটি আনোয়ারা প্রান্তে।


এ টানেল শুধু দুই পাড়কেই সংযুক্ত করেনি বরং বাস্তবায়ন করেছে
ওয়ান সিটি টু টাউন কনসেপ্ট। তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটারের টানেলটি তিন মিনিট থেকে সাড়ে তিন মিনিটের মধ্যে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পার হওয়া যাবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার নিচে এ টানেল দিয়ে মানুষ চলাচল করবে।


টানেল এর ভেতর রয়েছে অত্যাধুনিক ফায়ার সিস্টেম। পুরো টানেল মনিটরিংয়ের জন্য একটি কন্ট্রোল রুম রয়েছে। সেখান থেকে টানেলের ভেতর কী হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। টানেলের ভেতর অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে তা কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ আছে। টানেলের (পতেঙ্গা) প্রান্তে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) এরিয়া এবং (আনোয়ারা) প্রান্ত জেলা পুলিশের সীমান্ত।


বঙ্গবন্ধু টানেলে মোট ১২ ধরনের যানবাহনের টোল দিতে হবে। সর্বনিম্ন টোল ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। প্রতিবার পিকআপ, প্রাইভেটকার পারাপারে টোল ২০০ টাকা। মাইক্রোবাসের টোল ২৫০ টাকা। ৩১ আসনের কম বাসের টোল ৩০০ টাকা। ৩২ আসনের বেশি বাসের টোল ৪০০ টাকা। তিন এক্সেল বিশিষ্ট বড় বাসের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। পাঁচ টন পর্যন্ত পণ্য বহনে সক্ষম ট্রাকের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা। আট টনের ট্রাক পারাপারে ৫০০ টাকা এবং ১১ টনের ট্রাকে ৬০০ টাকা টোল দিতে হবে। তিন এক্সেলের ট্রেইলারে টোল লাগবে ৮০০ টাকা। চার এক্সেলের ট্রেইলারে দিতে হবে এক হাজার টাকা। পরবর্তী প্রতি এক্সেলের জন্য বাড়তি দিতে হবে ২০০ টাকা। টানেলে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার দিন থেকে এই টোল হার কার্যকর হবে।


প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চালু হলে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এক ধাপ এগিয়ে যাবে। টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম নগরীর পরিধি বাড়বে। টানেলের এক প্রান্তে চট্টগ্রাম শহর। অপর প্রান্তে রয়েছে আনোয়ারা উপজেলা। শহরের খুব কাছে থাকলেও এ উপজেলা এতদিন অবহেলিত ছিল। টানেল নির্মাণের মধ্য দিয়ে আরেকটি শহরে রূপ নিচ্ছে আনোয়ারা। ইতোমধ্যে আনোয়ারা উপজেলায় জমির দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আনোয়ারা উপজেলা প্রান্তে টানেল সংযোগে সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠছে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্পকারখানা। টানেল চালু হলে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র তিন মিনিট। বেঁচে যাওয়া সময়ে অর্থনীতি গতি পাবে। টানেলকে ঘিরে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরী এবং পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে


কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে টানেলটি নির্মাণ করা হচ্ছে। চার লেন বিশিষ্ট দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য দুই দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। এছাড়া মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে পাঁচ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ফ্লাইওভার থাকবে।


উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল আট হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। পরবর্তীতে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ সুদে পাঁচ হাজার ৯১৩ দশমিক ১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।


বিবার্তা/পুলক/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com