শিরোনাম
অবশেষে আলোর মুখ দেখছে বে-টার্মিনাল
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০১৬, ১৪:৩৬
অবশেষে আলোর মুখ দেখছে বে-টার্মিনাল
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

অবশেষে আলোর মুখ দেখছে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল। এটা বন্দরের মেগা প্রকল্প হিসেবে পরিচিত। অথচ সাগরপাড়ের ৯০৭ একর জায়গা অধিগ্রহণ করার ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের জিজ্ঞাসাপত্র জমা দিতেই বন্দরের পার হয়ে গেছে আড়াইটি বছর। ২০১৪ সালের মে মাসে আবেদনের পর জেলা প্রশাসনের জিজ্ঞাসাসহ ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা আগামীকাল মঙ্গলবার অথবা পরদিন বুধবার জমা দেয়া হতে পারে। এরপরই শুরু হবে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম।


ভূমি হুকুম দখল নোটিশ, অনাপত্তি, আপিল, শুনানি ও সর্বশেষ জাতীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভায় চূড়ান্ত হতে পারে এই বরাদ্দের কার্যক্রম। হালিশহর আনন্দবাজার থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমণি ঘাট পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় সাগরের ভেতরের অংশে গড়ে উঠবে বহুল আলোচিত এই বে-টার্মিনাল।


চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ও সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে জানিয়ে বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন জিজ্ঞাসা ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে এবং অধিগ্রহণের প্রস্তাবনাটি চূড়ান্ত হয়ে গেছে। কাল-পরশু তা জমা হতে পারে।এরপরই জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৩, ৪, ৫ ও ৬ ধারায় নোটিশ ৭ ধারায় ক্ষতিপূরণ এবং বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকে শুনানির পর তা ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।



তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের অনেকগুলো শর্ত ছিল। এসব শর্তের মধ্যে সম্প্রতি আমরা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অবস্থানগত ছাড়পত্র পেয়েছি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে অনাপত্তিপত্র পেতে ১৮ মাস লেগে যায়। এছাড়াও তাদের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ করতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে এখন থেকে দ্রুত কাজ শুরু হবে।’


অন্যদিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) দৌলতুজ্জামান খান বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে বে-টার্মিনালের বিষয়ে ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাবনা পাইনি। তারা একটি আবেদন করেছিল, কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণের জন্য যেভাবে আবেদন করতে হয় সেভাবে আবেদন না করায় আমরা তাদেরকে কিছু জিজ্ঞাসা জমা দিয়েছি। বন্দর কর্তৃপক্ষ সেই অনুযায়ী এখনো কিছুই জমা দেয়নি, তাই ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমও শুরু হয়নি। তারা সব ঠিকঠাক জমা দেওয়ার পরই আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করবো।’


তবে বাধা অনেকটাই কেটে গেছে জানিয়ে জাফর আলম বলেন, ‘এখন আর দেরি হবে না। সম্ভাব্যতা জরিপের জন্য একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তাদের কাজের মধ্যেই আমরা সাগর থেকে মাটি তুলে মাটি ভরাটের কাজটি করে ফেলবো এবং যতটা দ্রুত টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হবে।’


সরেজমিনে দেখা যায়, হালিশহর আনন্দবাজার থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমণি ঘাট পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, সাগরের পাড়ে আউটার রিং রোড নির্মাণের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। আর পোর্ট এক্সেস রোডের (টোল রোড) হালিশহর অংশে বে-টার্মিনালের জন্য সাইট বরাদ্দ লিখে বন্দর কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে।


উল্লেখ্য, হালিশহর আনন্দবাজার থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমণি ঘাট পর্যন্ত সাগরের ভেতরের প্রায় দুই হাজার ৩শ একর জায়গায় বে-টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। সাগর থেকে জেগে ওঠা এই ভূমিতে গভীর সমুদ্রে যে ড্রাফটের (গভীরতা) জাহাজ ভিড়ে, হালিশহর আনন্দবাজার এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরের অংশে সাগর থেকে জেগে ওঠা ভূমিতে সেই ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে। এতে জোয়ার-ভাটা, দিন-রাত, বাঁকা চ্যানেল কিংবা ড্রাফটের বিবেচনা কর্ণফুলী নদীর জেটিতে ভিড়লেও বে-টার্মিনালের ক্ষেত্রে সেই সীমাবদ্ধতা নেই।


সূত্র মতে, বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর জেটিতে পৌঁছাতে একটি জাহাজকে ১৫ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু বে-টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে তা শূন্য কিলোমিটারের মধ্যেই বার্থিং করতে পারবে। বে-টার্মিনাল নির্মাণ হলে যেকোনো দৈর্ঘ্য ও যেকোনো ড্রাফটের জাহাজ এখানে ভিড়তে পারবে। বিপরীতে বর্তমান চ্যানেলে মাত্র ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ কর্ণফুলীতে ঢুকতে পারে। সেক্ষেত্রেও জাহাজকে দুটি বাঁক অতিক্রম করতে হয় এবং দিনের মাত্র চার ঘণ্টা সময় পাওয়া যায়। আর রাতে বন্দর চ্যানেলে কোনো জাহাজ চালানো যায় না। কিন্তু বে-টার্মিনালে ২৪ ঘণ্টা জাহাজ পরিচালনা করা যাবে।


উল্লেখ্য, বিদ্যমান পোর্ট জেটিতে একসাথে ১৬টি জাহাজ বার্থিং করতে পারলেও বে-টার্মিনালে গড়ে প্রায় ৫০টি জাহাজ একইসাথে বার্থিং করতে পারবে। কারণ বন্দরের জেটির দৈর্ঘ্য চার কিলোমিটার হলেও বে-টার্মিনালের দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার।


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com