
বাঙালির দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। সেই স্বপ্ন আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। তবে এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেশি-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয়েছে। অভিযোগের পাহাড় ছিল এই সেতুকে ঘিরে। সেতুর টাকা দুর্নীতি হয়েছে, সেতু ভেঙে পড়বে, অর্ধেক কাজ করে আটকে যাবে, আরো কত কী! কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা, সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার কাছে সব অভিযোগ পদ্মার জলে ভেসে গেল। আর পদ্মার বুক চিরে দাঁড়াল স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এই সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বিশ্ববাসীকে জানান দিচ্ছে, বাঙালিরাও পারে।
বাঙালির গর্বের প্রতীক স্বপ্নের সেতুকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত সর্বস্তরের মানুষ। দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপরিসীম ধৈর্য, অসম সাহস ও অতুলনীয় প্রজ্ঞার প্রতীক এই পদ্মা সেতু। একইসাথে এটি আস্থা, স্বচ্ছতা, গতিময়তা ও আত্মনির্ভরতার প্রতীক, যা পরবর্তীতে আমাদের অন্যান্য মেগা প্রকল্পে কাজ করতে অনুপ্রেরণা জোগাবে বলেও মন্তব্য তাদের।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়ে অনুভূতি জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ বিবার্তাকে বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের সার্বিক সক্ষমতার প্রতীক। শুধু তাই নয়, এটি আমাদের অহংকার এবং কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের বাস্তব রূপ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে উন্নয়নের যে কর্মযজ্ঞ চলছে, তার সার্বিক সক্ষমতার প্রতীক হচ্ছে আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যার মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ বহুগুণে ত্বরান্বিত হবে।
তিনি বলেন, এই সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নেই শুধু প্রভাবই ফেলবে না, বরং এই সেতুর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এটি একদিকে যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, কারিগরি এবং বাস্তবায়নের সক্ষমতা প্রকাশ করছে, অন্যদিকে বিশ্ববাসীকে জানানো সম্ভব হয়েছে, আমরাও পারি, আমাদেরও সক্ষমতা আছে। যার মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর জন্য আমাদের দেশে বড় বড় বিনিয়োগ/ শিল্প কারখানা তৈরিতে তাঁদের আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। যেটি আমাদের দেশের অর্থনীতিকে উন্নত অর্থনীতির দেশের দিকে ধাবিত হতে সহায়তা করবে। তাছাড়া এই সেতু আমাদের বিরাট তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে আমি মনে করি।
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বাঙালিদের নতুন করে বিশ্ববাসী চিনবে জানিয়ে অধ্যাপক ড. পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দাতা সংস্থাকে অবগত করা সম্ভব হয়েছে, বাংলার মানুষ স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে যেটা প্রয়োজন, সেটাই করবে, কোন কিছু জোর করে চাপিয়ে দেয়া যাবে না। সকল দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর অপরিসীম ধৈর্য, অতুলনীয় প্রজ্ঞা ও বলিষ্ঠ সাহসী পদক্ষেপের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বিবার্তাকে বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতিশীলতা আসবে, যাতায়াতের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। কৃষি, শিল্পসহ আধুনিক সমাজের গতিময়তা আনবে এই সেতু। ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক গতি এমনিতেই বেড়ে যাবে। আর তখন আস্থাও বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে আমরা আত্মনির্ভরশীল হতে শিখেছি। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে আমাদের যে কারিগরি যোগ্যতা তৈরি হয়েছে, সেটার স্পিড যদি আমরা ধরে রাখতেই পারি, তাহলে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, এর মাধ্যমে শহর ও গ্রামের বৈষম্যও দূরীভূত হবে।
তিনি আরো বলেন, একসময় উত্তরবঙ্গকে মঙ্গাঞ্চল বলা হলেও যমুনা সেতুর মাধ্যমে এই এলাকার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। দারিদ্র্যতাও কমেছে। একইভাবে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের নানা পরিবর্তনসহ দারিদ্রতাও কমে আসবে। একইসাথে এর মাধ্যমে অলস কর্মঘণ্টা মুক্ত হওয়া যাবে। ফলে শহর ও গ্রামের মধ্যে সাংস্কৃতিক দূরত্বও কমে যাবে।
অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, একসময় আমাদের যে নির্ভরতার সংস্কৃতি ছিল, সেটা এই সেতুর মাধ্যমে ভেঙে দেয়া হয়েছে। ফলে এই সেতু আমাদের আস্থা ও উদ্ভাবনী শক্তি হিসেবে কাজ করবে। একইসাথে স্বচ্ছতা প্রমাণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এই সেতু। তাই আমি মনে করি, পদ্মা সেতু আস্থা, স্বচ্ছতা, গতিময়তা ও আত্মনির্ভরতার প্রতীক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য ও স্বনামধন্য কবি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বিবার্তাকে বলেন, একজন দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অপরিসীম ধৈর্য, অসম সাহস ও অতুলনীয় প্রজ্ঞার প্রতীক এই পদ্মা সেতু। সারা বিশ্বের দ্বিতীয় খরস্রোতা নদী পদ্মার ওপর নির্মিত এই সেতু দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের পথে এক অনন্য মাইল ফলক। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও প্রকৌশলের সমন্বয়ে নির্মিত পদ্মা সেতু আজ সারা বিশ্বের অন্যতম বিস্ময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আমরা খুবই গর্বিত বোধ করছি।
বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র শক্ত হাতে মোকবিলা করে তাঁর স্বপ্নের পদ্মা সেতুর বাস্তবরূপ দিয়েছেন। আজ ২৫ জুন বঙ্গবন্ধুকন্যা এই সেতু উদ্বোধন করেছেন। বাঙালি জাতির জীবনে ২৫ জুন এক স্মরণীয় ও আনন্দের দিন। এদিন সারাদেশ উৎসবে মেতে ওঠে। আমাদের এমন একটি সেতু উপহার দেয়ার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। জয় পদ্মা সেতু।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে। এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন করেন।
বিবার্তা/রাসেল/রোমেল/জেএইচ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]