শিরোনাম
পাহাড়ে কুমির চাষে ঈর্ষণীয় সাফল্য
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০১৭, ১৩:৩৩
পাহাড়ে কুমির চাষে ঈর্ষণীয় সাফল্য
নুরুল করিম আরমান, লামা
প্রিন্ট অ-অ+

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি ঘুমধুম এলাকায় কুমির চাষে বিস্ময়কর সাফল্য দেখা দিয়েছে। এ চাষ প্রকল্পে ৮শ বাচ্চা প্রজনন হওয়ায় উদ্যোক্তারা মহাখুশি। এ কুমির চাষ প্রকল্পটি কেবল বাংলাদেশে নয়, ইতিমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ কুমির চাষ প্রকল্প হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে এটি।


তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ি এলাকার মাটি, আবহাওয়া ও পরিবেশ কুমির চাষের জন্য উপযোগী বিধায় পাহাড়ি এলাকায় এ চাষে উদ্যোক্তরা এগিয়ে আসলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বেকারত্ব দূরীকরণে বিরাট ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এখন ঘুমধুমের কুমির চাষ প্রকল্প দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ও দর্শনার্থীদের সমাগম হচ্ছে।


জানা যায়, ২০০৯ সালে পাহাড়ি এলাকায় ২৫ একর জায়গার উপর এ বৃহৎ কুমির চাষ প্রকল্পটি গড়ে তুলেন- দেশের বৃহত্তর বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠান আকিজ ওর্য়াল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেড। এর স্বত্ত্বাধিকারী হলেন সাংসদ শেখ আজিজ উদ্দিন। মালয়েশিয়া থেকে ৫০টি কুমিরের বাচ্ছা আমদানি করে ঘুমধুমের পাহাড়ে আধুনিক ও প্রযুক্তির মাধ্যমে কুমিরের চাষ শুরু করা হয়। এর মধ্যে ৩টি কুমির মারা যায়। পরবর্তীতে ৪৭টির মধ্যে লালিত-পালিত ৩১টি স্ত্রী কুমির বাচ্চা দেয়া শুরু করে। কয়েক মাসে প্রায় ৮শ’ কুমিরের বাচ্চার প্রজনন হয়। নিবিড় পরিচর্যা, চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত খাবার প্রয়োগ করায় বর্তমানে সকল বাচ্চা সুস্থ অবস্থায় দিন দিন বড় হচ্ছে।


এ প্রকল্পের মাঠ কর্মকর্তা সুলতান আহমদ জানান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে কুমিরের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে এ প্রকল্পে উৎপাদিত কুমির এসব দেশে রপ্তানি করে হাজার কোটি টাকা আয় করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ব্যাপক অবদান রাখবে।



তিনি আশা প্রকাশ করে আরও বলেন, কুমির চাষের পাশাপাশি এ প্রকল্পে প্রজাপতির চাষ, বার্ড পার্কসহ কটেজ ও মিউজিয়াম হাউজ গড়ে তুলে প্রকল্পটিকে একটি পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এতে দেশি-বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটলে সরকার পর্যটন খাতেও প্রচুর রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হবে।


কুমির চাষ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম জানান, সপ্তাহে এসব কুমিরদের খাবার হিসাবে ২‘শ কেজি মাছ ও ৩শ কেজি মাংস সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি বাচ্চা কুমিরদের মাছ-মাংস কিমা বানিয়ে খাওয়াতে হয়। তিনি জানান, প্রতি মাসে এসব কুমিরদের জন্য ব্যয় হয় দেড় লাখ টাকা। এ প্রকল্পে থাকা ৩১টি স্ত্রী কুমির ২ বছরে ৮’শ বাচ্চা প্রসব করেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন কারণে ১১টি বাচ্চা মারা গেলেও বাকি বাচ্চাগুলো বর্তমানে সাড়ে ৩ ফুট থেকে সাড়ে ৪ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়েছে। ওজনেও বেশ ভাল। সব কুমিরই সুস্থ আছে। আগামী বছর এসব কুমির বিদেশে রপ্তানী করলে প্রায় হাজার কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।


খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সুন্দরবনে সরকারি অর্থায়ানে আরও একটি কুমির চাষ প্রকল্প রয়েছে। তবে ঘুমধুমের পাহাড়ে আধুনিক পদ্ধতিতে গড়ে ওঠা দেশের সর্ববৃহত্তম ও দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কুমির চাষ প্রকল্প।


স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম কেন, তিন পার্বত্য জেলার প্রতিটি জেলা উপজেলার মাটি, আবহাওয়া ও পরিবেশ কুমির চাষের জন্য উপযোগী। সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে পাহাড়ে এ চাষের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি বেকারস্ত দূরীকরণে বিরাট ভূমিকা পালন করবে।


কুমির চাষ প্রকল্পের উপদেষ্টা ঝুলন দাশ বলেন, প্রকল্পে থাকা স্ত্রী কুমিরগুলো এক সাথে গড়ে ৫০-৫৫টি ডিম ছাড়ে। এসব ডিম সমূহ সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নজর রাখা হলে প্রতিটি ডিম থেকেই বাচ্চা ধারণ করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের শুরুতেই বিদেশে রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরু হবে তার মধ্যে কোরিয়ায় রপ্তানি করা হবে কুমিরের মাংস, জাপানে রপ্তানি করা হবে চামড়া ও হাড় অন্যান্য সামগ্রী যাবে চীনে।


ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (ইউপি) একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, অবহেলিত একটি ইউনিয়নে কুমির চাষ প্রকল্পের মত একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় এলাকার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। পাশাপাশি আকিজ গ্রুপের বদন্যতায় এখানে একটি পর্যটন স্পট গড়ে তোলারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে শুনেছি। তা যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে ঘুমধুম একটি বাণিজ্যিক নগরীতে পরিণত হবে বলে মনে করি।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com