শিরোনাম
বিলুপ্তপ্রায় ফসলের জাত সংরক্ষণে কর্মযজ্ঞ
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০১৬, ১০:১৩
বিলুপ্তপ্রায় ফসলের জাত সংরক্ষণে কর্মযজ্ঞ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দেরিতে হলেও সরকার অবশেষে বিলুপ্তপ্রায় ফসলের জাত সংরক্ষণের প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার জন্য এসব ফসলের জাত সংরক্ষণ করা জরুরি বলে মনে করেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন, গবেষণা ও জাত সংরক্ষণের উদ্যোগ না থাকায় এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে প্রায় ১৫ হাজার দেশীয় জাতের ধানের প্রজাতি।


একসময় বালাম ধানের জন্য বিখ্যাত ছিল বরিশালের বানারীপাড়া। এ ধানের খোঁজে দেশ-বিদেশ থেকে পাইকাররাও আসতেন সেখানে। কিন্তু উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড ধানের বিস্তারের পর তুলনামূলক কম ফলনশীল বালাম ধান চাষে আগ্রহ কমতে শুরু করে কৃষকের। এখন সেখানে আর বালাম চাল পাওয়াই যায় না।


তবে দেরিতে হলেও ঐতিহ্যবাহী বালামসহ বিলুপ্তপ্রায় দেশী প্রজাতির ধান ও অন্যান্য ফসল রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। ‘দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে বীজবর্ধন খামার স্থাপন’ নামের প্রকল্পটির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের পতিত জমিতে বালাম ধান চাষ করে বছরে বাড়তি ৩০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।



এদিকে ধানের পাশাপাশি স্থানীয় বা বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন ফসলের ৭০০ জাত সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। কৃষকদের জন্য স্বল্প খরচে স্বল্প সময়ে অধিক ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান ও অন্যান্য ফসলের বিলুপ্তপ্রায় জাত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে তিল, সরিষা, বাদাম, মুগ, মসুরসহ বিভিন্ন ফসল।


কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ উইংয়ের মহাপরিচালক ফজলে ওয়াহেদ খোন্দকার জানান, হারিয়ে যাওয়া ফসলের বিভিন্ন প্রজাতি সংরক্ষণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে একাধিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রজাতি ও জাত সংরক্ষণে সিড ব্যাংক ও জিন ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। আমাদের বিজ্ঞানীরা নতুন জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া জাত সংরক্ষণেও কাজ করছেন। ভবিষ্যতে যাতে কোনো জাত হারিয়ে না যায়, সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।


বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিলুপ্তপ্রায় স্থানীয় জাতের এসব ফসলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য শনাক্তকরণে কাজ চলছে। পরবর্তীতে কৃষি প্রজননবিদ ও বায়োটেকনোলজিস্টরা দেশের পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে উৎপাদনক্ষম জাত উদ্ভাবনে সক্ষম হবেন।


জানা গেছে, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) জিন ব্যাংকে দেশী চার হাজার ৬০০ জাতের ধানসহ মোট আট হাজার প্রজাতির ধানের বীজ সংরক্ষিত আছে। চলমান আছে পরিবেশবান্ধব দেশী জাতের ধান সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রক্রিয়া। উচ্চতাপমাত্রা সহনশীল ও মেঘলা আকাশে বেশি ফলন হয়, এমন ধানের জাত নির্বাচনে গবেষণাকর্ম জোরদার করা হয়েছে। এ জাতগুলোর বৈশিষ্ট্য আধুনিক জাতে রূপান্তরের মাধ্যমে নতুন উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনে গবেষণা চলছে। এরই মধ্যে স্বল্প খরচে বেশি ফলন হয়, এমন একটি লো ইনপুট ভ্যারাইটি জাত ব্রি ধান৬৯ হিসেবে অনুমোদিত হয়েছে।



দেশের হারিয়ে যাওয়া ফসলের প্রজাতির জার্মপ্লাজম সংরক্ষণের কাজ করছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) কৌলিসম্পদ কেন্দ্র। একই সঙ্গে সেসব জার্মপ্লাজম ব্যবহার করে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের চেষ্টাও চলছে। এরই মধ্যে স্বল্প খরচে বেশি ফলন হয়, এমন বিভিন্ন ফসলের ৪৫১টি জাত উদ্ভাবন করেছে বারি।


ফসলের ফলন বাড়ানোর জন্য আরো নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে স্বল্প সময়ে অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য ব্রডকাস্টিং পদ্ধতি অনুসরণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম। এছাড়া সরকার কৃষি শ্রমিক ও পশুশক্তির ঘাটতি বিবেচনায় নিয়ে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে লাভজনক ও টেকসই করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় খামার যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে।


এজন্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) আওতায় দেশের ৫১টি জেলায় কৃষক পর্যায়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে এসব যন্ত্রপাতির ব্যবহার জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এসব প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এছাড়া প্রকল্পটির মাধ্যমে যন্ত্র কিনতে আগ্রহী কৃষকদের ৩০ শতাংশ হারে উন্নয়ন-সহায়তা (ভর্তুকি) প্রদান করা হচ্ছে।


যন্ত্রপাতির উন্নয়নে কাজ করছে কৃষি-সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই মধ্যে পাওয়ার টিলার অপারেটেড সিডার, ড্রাম সিডার, লিথাওসহ আরো বেশকিছু কৃষিযন্ত্রের উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।


ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশীয় ধান ও বিলুপ্তপ্রায় ধানের প্রজাতি সংরক্ষণে কাজ করছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী ধান গবেষক ও জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী। হাইব্রিড পদ্ধতি ছাড়াই দেশীয় ধান থেকে ক্রস ব্রিডিং করে নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনের কাজ করছেন তিনি। ২০১২ সালে উদ্ভাবন করেন দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় কাসালত ধানের জাত। কাসালত সিলেটের আঞ্চলিক ধান।


ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, ‘হারিয়ে যাওয়া ফসলের প্রজাতি সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। বিলুপ্তপ্রায় ধানের জাত নিয়ে আমি আমার মতো কাজ করছি। আমার গবেষণায় পাওয়া তথ্য নিয়মিতই সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানাই। নিজ উদ্যোগ আর ভালোবাসা থেকেই আমি হারিয়ে যাওয়া ধানের প্রজাতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত ধানের একশরও বেশি জাত সংরক্ষণ করতে পেরেছি।’


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com