শিরোনাম
একাদশ সংসদ: প্রস্তুতি আ.লীগ-বিএনপি
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৪:৪৫
একাদশ সংসদ: প্রস্তুতি আ.লীগ-বিএনপি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বিষয়টিকে যেভাবেই বিবেচনা করা হোক না কেন, এই মুহূর্তের বাস্তবতা হচ্ছে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নির্বাচনে জেতার লক্ষ্যে নানামুখী কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা নিলেও দুই দলেরই নজর রাজনীতির মাঠে তৃতীয় অবস্থানে থাকা জাতীয় পার্টির (জাপা) দিকে। তবে জাতীয় পার্টি ঝোপ বুঝে কোপ মারার অপেক্ষায় আছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির লড়াই হবে, এমন ধারণা দেশের রাজনীতিবিদ, বিশ্লেষকসহ সাধারণ মানুষেরও। কিন্তু জাপার কর্মকৌশল কেমন হতে পারে, তাতে চোখ গেঁথে আছে সবার।


দেশের অন্যতম বৃহৎ এই তিনিটি রাজনৈতিক দল বিভিন্ন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করেছে। কখনো একে অপরের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছে; আবার জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনও করেছে। নবম সংসদ (২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মহাজোটভুক্ত হয়ে বিশাল জয় পেয়ে সরকার গঠন করে। বিএনপি-জামায়াত জোট মাত্র ৩০টি আসন পেলেও সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদা পায়। দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায়, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি (আসন ভাগাভাগি করে) পৃথকভাবে নির্বাচন করে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ আসনসহ মোট ২৩০টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। ২৭টি আসন পাওয়া জাতীয় পার্টিকে বিরোধীদল এবং সরকার উভয় জায়গায় স্থান দেয় ক্ষমতাসীনরা। ওই নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি সংসদের প্রতিনিধিত্ব হারানোর পাশপাশি আন্দোলনের নামে নাশকতা, সন্ত্রাস করে, স্কুল-কলেজে আগুন দিয়ে, যানবাহনে পেট্রোল বোম ছুড়ে, অগ্নিসংযোগ করে অসংখ্য সাধারণ মানুষকে হতাহত করে রাজনীতির মাঠেও নিজেদের অবস্থান হারায়; যার খেসারত এখনও পদে পদে দিচ্ছে দলটি। তবে নিজের অবস্থান পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য নানমুখী ছক কষছে পথহারা বিএনপি।


দশম সংসদ নির্বাচনের ভোট হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। সে হিসেবে ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারির মধ্যেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ প্রায় শেষ হওয়ায়, সংবিধান অনুযায়ী নতুন ইসি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পর্টিসহ দেশের অধিকাংশ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বিষয়ে সংলাপে বসেছেন তিনি। আলোচনা শেষ হয়েছে। অচিরেই সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনেই একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।


একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের আশায় দেশের উন্নয়ন চিত্রের ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন, জনগণ যদি সরকারের উন্নয়নের বিষয়টি অনুধাবন করতে পারে, তাহলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে পুনরায় নির্বাচিত করবে। প্রাক-নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিএনপি একদিকে ইসি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসেছে, অপরদিকে সার্চ কমিটি ও ইসি গঠন ইস্যুতে রাজপথে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে নেতাকর্মীদের উজ্জ্বীবিত করার চেষ্টা করছে। তবে সামর্থ্য না থাকলেও জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে এককভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন সমাবেশে।


আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর জনগণের আস্থা আছে বলেই আমরা সরকারে আছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার আমলে বিগত ৮ বছরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তা দৃশ্যমান।



হানিফ বলেন, বিগত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণ করেছে। তাই আগামী নির্বাচনেও জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রাখবে বলে আমি মনে করি। এরপরও দেশব্যাপী সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে কুষ্টিয়া-৩ আসনের সরকারদলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় আগামী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনিও চান উন্নয়ন সম্পর্কে দেশের মানুষ জানুক। আগে দেশের অবস্থা কি ছিল, এখন কেমন হয়েছে- মানুষ যদি বুঝতে পারে তাহলে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আবারও সরকার গঠনের সুযোগ দেবে।


হানিফ আরও বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আমরা জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পেয়েছি। জঙ্গিবাদবিরোধী চলমান কর্মকাণ্ডও আমরা অব্যাহত রাখবো। আশা করি আগামী নির্বাচনেও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকদের বয়কট করে মুক্তিযুদ্ধের চেনতার পক্ষের দলকে ভোট দিয়ে দেশ পরিচালনার ভার দেবে জনগণ।


এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরাও নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা হতে পারে। নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবেই আমরা ইসি গঠন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসেছি। বিএনপি মনে করে, নির্বাচন হতে হবে সহায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ, সাহসী, যোগ্য নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়, সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। বিরোধীদল নির্মূল করার যে প্রক্রিয়া চলছে, তা বন্ধ করতে হবে। সব রাজনৈতিক নেতাকে মুক্তি দিতে হবে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সভা, মিছিল, সমাবেশ করার সমান সুযোগ দিতে হবে।


জাতীয় পার্টির শীর্ষ অনেক নেতার অভিযোগ, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে মিলেমিশে থাকলেও আশানরূপ সুযোগ-সুবিধা পায়নি তাদের দল। পার্টি চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সরকারের নানামুখী সমালোচনায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। তবে পার্টি চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও বর্তমান সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং তার আস্থাভাজনদের অবস্থান সরকারের পক্ষে। এসব নিয়ে পার্টিতে দীর্ঘদিন যাবৎ অভন্ত্যরীণ কোন্দল চলছে; যা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। পার্টির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ৩০০ আসনে নির্বাচন করার বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের অধিকাংশ নেতার আপত্তি রয়েছে। একটি অংশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটভুক্ত হওয়ার পক্ষে, বিপক্ষে অপর অংশ।


এদিকে বিএনপি-জামায়াত বিগত দুটি সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে জোটভুক্ত করতে চাইলেও সফল হয়নি। জানা গেছে, এবার বিএনপি এই সুযোগ নেয়ার অপেক্ষায় আছে। আওয়ামীবিরোধী (অপর) অংশের সঙ্গে বিএনপির শীর্য পর্যায়ের একাধিক নেতা নিবিড় যোগাযোগ রেখেছেন।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনে কি হয়েছিল সেটা করো অজানা নয়। পার্টি চেয়ারম্যান হাসপাতাল থাকাকালীন নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমরা নির্বাচনে অংশ না নিলে দশম সংসদ নির্বাচন কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতো না। আমাদের জন্যই আওয়ামী লীগ সরকার টিকে আছে। অথচ তারা কথা রাখেনি। পার্টি চেয়ারম্যানের মামলাগুলো এখনও ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাই সময় এসেছে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার। অপর এক নেতা বলেন, কথামতো মন্ত্রিত্ব দেয়া হয়নি। উভয় নেতার মতে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করলে দলের জন্য ভুল হবে। দল এখনই পরগাছায় পরিণত হয়েছে; এরপর অস্তিত্ব হারাবে।


৩০০ আসনে নির্বাচন প্রসঙ্গে এক নেতা বলেন, পার্টির এখন আর সেই শক্তিসামর্থ্য নেই। তাই জোটভুক্ত নির্বাচন করলে যতগুলো আসন ভাগে পাওয়া যাবে, সেসব আসনে জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি থাকবে।


আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করতে চাইলে, কিংবা বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনের ঘোষণা দিলে আওয়ামী লীগের করণীয় কি হবে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা বলেন, এই মুহূর্তে বলার কিছু নেই। যখন ঘটনা ঘটবে সেটা তখনকার বিষয়। আপাতত এসব বিষয় নিয়ে দল ভাবছে না।


রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি যদি পৃথকভাবে অংশ নেয়, তাহলে সমীকরণ একরকম হবে; জোটগত হলে অন্যরকম হবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লড়াইয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তারা বলছেন, নবম সংসদে আওয়ামী লীগের বিশাল বিজয়ে জাতীয় পার্টির অবদান ছিল। এবার জাতীয় পার্টি যদি বিএনপির সঙ্গে হাত মেলায়, পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ নিতে পারে।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com