শিরোনাম
বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান আমির হোসেনের
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০১৭, ২১:০৩
বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান আমির হোসেনের
কলকাতা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কলকাতায় অনুষ্ঠিত ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেট সামিট’ শিল্প সম্মেলন থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে দেশটির শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। শুক্রবার কলকাতার মিলন মেলা প্রাঙ্গণে শুরু হওয়া তৃতীয় ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’ এ তিনি এ আহ্বান জানান।


আমির হোসেন আমু বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ এখন একটি উপযুক্ত স্থান। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে আমাদের সরকার ইতিমধ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিনিয়োগনীতি এবং শিল্পনীতি আধুনিক ও যুগোপযোগী করে ঢেলে সাজানো হয়েছে।


দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় সেবা ও ইনসেনটিভ জোরদার করা হয়েছে উল্লেখ করে আমু বলেন, আমরা জ্ঞানভিত্তিক উচ্চপ্রযুক্তি ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠানকেও তুলে ধরার জন্য সবরকম সহায়তা করছি। বাংলাদেশকে একটা শিল্পভিত্তিক দেশ হিসাবে উন্নীত করার যে স্বপ্ন আমরা সেটা বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছি।


আমু আরো বলেন, ‘বিদ্যুৎ, তেল ও গ্যাস, আইসিটি, সফটওয়্যার, স্বাস্থ্য, উচ্চশিক্ষা, কৃষি পণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ইলেক্ট্রনিকস যন্ত্রপাতি, টেলিকমিউনিকেশন, ওষুধ, সিরামিক, প্লাস্টিক, অটোমোবাইল, চামড়া ও চামড়া জাত পণ্য, পাট ও পাটজাত দ্রব্যসহ একাধিক ক্ষেত্রে আমরা ভারতীয় বিনিয়োগের দিকেও তাকিয়ে রয়েছি। এই সব সেক্টরে সহায়তার জন্য স্থানীয় ও বিদেশি প্রতিটি বিনিয়োগেই আমাদের সরকার অবকাঠামো, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে শিল্পায়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০০টি ইকনোমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। ভারতের উদ্যোক্তরা আসলে তাদের জন্যও একটি বিশেষয়াতি শিল্পাঞ্চল বরাদ্দ দেয়া হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে যে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজমান, তাতে ভারতীয় শিল্প উদ্যোক্তরাও এদেশে নিশিন্তে বিনিয়োগ করতে পারেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ সাড়ে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। এই বাণিজ্য ভারতের অনুকূলে রয়েছে। এই বিজনেট সামিট দুই দেশের বাণিজ্য ঘটাতি দূর করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। এতে অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্ত, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ভারতের সাথে বাংলাদেশসহ অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার ব্যাপারে একটি কার্যকর রূপরেখা প্রণয়ন সম্বব হবে বলেও আমি আশাবাদী।


শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের সাথে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতায়াত ও কানেকটিভিটি জোরদার হয়েছে। এ কানেকটিভিটি ও যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যেই শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমরা পশ্চিমবঙ্গের সাথে সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ চালু করেছি।


শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশে অর্জিত অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, এশিয়ার অন্য দেশের মত বাংলাদেশের অর্থনীতিও দ্রুত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ এখন গোটা বিশ্বের কাছে রোল মডেল। গত প্রায় দশক ধরে বাংলাদেশ ৬ শতাংশেরও বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে যাচ্ছে। বিদায়ী অর্থবছরে ৭.১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে। ফলে বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক মূল্যায়নে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে শিল্পসমৃদ্ধ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে বর্তমানে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ লক্ষ্য অর্জনে প্রতি বছর ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং দেশে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন কার্যক্রম জোরদারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের শিল্পখাত ক্রমেই বিকশিত হচ্ছে এবং নতুন নতুন উদীয়মান শিল্পখাত আত্মপ্রকাশ করছে। বর্তমানে শিল্পখাতে ১০.১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে এবং জিডিপির আকার ২২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবসময় ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত সরকার ও সেদেশের মানুষ যেভাবে সহযোগিতা করে ছিল তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হত্যকাণ্ডের কারণে প্রায় ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, বিহার, মেঘালয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী সেসময় প্রশিক্ষণ, অস্ত্রশস্ত্র সহ বিভিন্ন দিক দিয়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা দিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সেদিন ভারতের সেনা জওয়ানরা যুদ্ধ করেছিলেন এবং তাদের জীবন বলিদান দিয়েছিলেন।


ভারতের তৎকালের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে এবং বাংলাদেশের মাটিতে যে গণহত্যা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে প্রচারের জন্য ইন্দিরা গান্ধী তখন সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সারা বিশ্বের গণতন্ত্রমনা জনগণকে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড় করিয়েছিলেন। তাঁর সফল কূটনীতির ফলে বিশ্ববিবেক বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছিল। ভারতের সেনাবাহিনীও বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে এগিয়ে এসেছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ বাঙালি শহীদানের আত্মাহুতির পাশাপাশি অনেক ভারতীয় সৈন্যও প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল।


রাজ্যে বিদেশি লগ্নি টানার লক্ষ্যে শুক্রবার শুরু হয়েছে এই ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’, চলবে শনিবার পর্যন্ত। এদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরী নাথ ত্রিপাঠি, রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, সাবেক ভারত ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী, বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বেগম তারানা হালিম, পোল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী কাজিমিয়ের্চ ক্যারোলজ্যাক, জার্মানির অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ড: গুনটার হরজেস্কি সহ কয়েকজন বিদেশি অতিথি।


প্রদীপ প্রজ্বলন করে বেঙ্গল গ্লোবাল বাণিজ্য সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রণব মুখার্জি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকরের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে এক সময়ে শিল্পে ভাটা এসেছিল কিন্তু অতীতের বোঝা সরিয়ে এগিয়ে গিয়েছে এ রাজ্য। এই রাজ্যে বিনিয়োগের আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগের উপযুক্ত অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রেও এই সরকার খুবই সাফল্য পেয়েছে। এই রাজ্যে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করেছে তা এককথায় অবিশ্বাস্য। আমি দীর্ঘদিন অর্থমন্ত্রী ছিলাম, আমি জানি রাজস্ব বাড়ানো কতটা কঠিন।


এর আগে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেন, এই বাংলাই হতে পারে বিনিয়োগের আদর্শ জায়গা। এরাজ্যে বিনিয়োগ করলে গোটা উত্তরপূর্ব ভারতের সাত দরজা খুলে যাবে। একইসঙ্গে নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের বাজার পাওয়া যাবে, ফলে সেখানেও আপনারা বিনিয়োগ করতে পারবেন। কারণ এদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগটা খুবই ভাল।


মিলন মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই সম্মেলন থেকে সৌরভ গাঙ্গুলীও এই রাজ্যে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে আসুন বিনিয়োগ করুন। বাংলায় বিভিন্ন রকম শিল্পের উপযুক্ত পরিবেশ আছে। সবরকম সহায়তার জন্য আমাদের মুখ্যমন্ত্রী তৈরি আছেন।


তবে এদিনের সম্মেলনে অনুপস্থিত ছিলেন দেশটির কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি। জেটলির অনুপস্থিতির কারণ হিসাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়, তাই হয়তো বেঙ্গল গ্লোবাল বাণিজ্য সম্মেলনের তৃতীয় পর্বে অনুপস্থিত থাকলেন জেটলি।


বিবার্তা/ডিডি/পলাশ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com