শিরোনাম
ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে বাংলাদেশ থেকে চিরতরে নিপাত করা হবে: হানিফ
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২১, ২১:০১
ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে বাংলাদেশ থেকে চিরতরে নিপাত করা হবে: হানিফ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ থেকে ধর্মান্ধ, জঙ্গি ও মৌলবাদী গোষ্ঠীকে আওয়ামী লীগ চিরতরে নিপাত করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।


বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার প্রতিবাদে গৌরব’৭১ আয়োজিত প্রতিরোধ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


হানিফ বলেন, এই বাংলার হাজার বছরের সংস্কৃতি আছে। আমরা যাত্রা, পালাগান, জারি-সারি, পল্লীগীতি, লোক সংস্কৃতির চর্চা করে এসেছি। গ্রামে লোক সংস্কৃতি ছিলো, মানুষের মধ্যে সামাজিক বন্ধন গড়ে উঠেছিলো। দুর্ভাগ্য আমাদের আজ সমাজ থেকে শত বছরের লোক সংস্কৃতি হারিয়ে গেছে। আজকে গ্রাম থেকে নাটক, পালা গান, জারি সারি, পুঁথি গান হারিয়ে গেছে। আজকে সমাজ থেকে সংস্কৃতি চলে গেছে। ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে মানুষকে ধর্মান্ধ করার কাজ শুরু হয়েছে।


আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরের মাথায় অন্য ধর্ম পালনকারীদের ওপর হামলা করা হয় কেন? এটা জানতে আমাদেরকে গোঁড়ায় যেতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশে রাজনৈতিক বিভেদ সৃষ্টি করেছে, সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে। তারা নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে পাকিস্তানের প্রেতাত্মা জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপণ করেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিলো। এই জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলো। কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আজমকে বাংলাদেশে এনে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার গাছ রোপণ করে দিয়েছিলেন। এরপর এরশাদ, খালেদা জিয়া সেই গাছকে বড় করেছেন।


তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য একাত্তরে আমরা জাতির পিতার নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছিলাম। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলমানের রক্তের স্রোতে গড়া এই বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ স্বাধীন করতে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ রক্ত দিয়েছে। ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিলো। এই বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ ছিলো। জাতির পিতা আমাদের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছিলেন। আজকের সেই বাংলাদেশ আমাদের মাঝ থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।



হানিফ বলেন, বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষ ধর্ম পালন করবে। আমরা ধর্ম পরায়ণ হতে চাই, ধর্মান্ধ হতে চাই না। আজকে মানুষকে ধর্মান্ধ করার মধ্য দিয়ে সমাজকে কলুষিত করা হচ্ছে। একাত্তরে ধর্মের ভূল ব্যাখ্যা করে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, মা-বোনদের নির্যাতন করা হয়েছে। এখনো আবার ধর্মের অপব্যাখ্যা করে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর আঘাত করা হচ্ছে। এটা বরদাশত করার মতো নয়। আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে লড়াই করেছি। শেখ হাসিনার একজন কর্মী থাকতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা যাবে না।


তিনি আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আহ্বান জানাই, ২০১২ সালের রামু, পাবনার সুজানগর, নাসিরনগর, সুনামগঞ্জের শাল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাট ঘটেছিলো সেগুলোর বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি। অতিদ্রুত বিচার করার দাবি জানাই। বিচার বিলম্বের কারণে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বারবার হামলা করার সাহস পাচ্ছে। যদি সাধারণ আইনে বিচার না হয় তাহলে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেছেন, এবারের ঘটনার সাথে জড়িত তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। আমরা সকল ধর্মের মানুষের শঙ্কা, ভীতি দূর করতে চাই। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই।


গৌরব’৭১-এর সভাপতি এসএম মনিরুল ইসলাম মনির সভাপতিত্বে এবং সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য(প্রশাসন) ড. মুহাম্মদ সামাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এমপি।


উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাবেক ছাত্রনেতা আমিনুল ইসলাম আমিন, কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নুরনবী সাগর, আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি, সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব মামুন আল মাহতাব, অভিনেত্রী তানভিন সুইটি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবদুল মতিন,শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী,বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, বিশিষ্ট রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।



প্রতিরোধ সমাবেশের পর সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার প্রতিবাদে লাঠি মিছিলও করে গৌরব’৭১। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে এ মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ। সমাবেশে ১৯৭২ সালের সংবিধান ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি


বিবার্তা/সোহেল/রাসেল/আরকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com