শিরোনাম
বদলে যাচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা, যা বলছেন শিক্ষাবিদরা
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:৫১
বদলে যাচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা, যা বলছেন শিক্ষাবিদরা
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

পঞ্চম শ্রেণির পিএসসি, অষ্টম শ্রেণির জেএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষাগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য ভীষণ মানসিক চাপ। এগুলো না রাখাই ভালো। তাহলে শিক্ষার্থীরা চাপমুক্ত থেকে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবে। ২০২৩ সাল থেকে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া জাতীয় শিক্ষাক্রমের নতুন রূপরেখার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বিবার্তা২৪ডটনেটকে এসব কথা বলেন।


নবম শ্রেণির বিভিন্ন গ্রুপের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে গ্রুপ না রেখে সামগ্রিক করা হলে কী কী কোর্স রাখা হবে সে সম্পর্কে আমি এখনো অবগত নয়। কাজেই আমি মনে করি, এখানে বিজ্ঞান ও মানবিক দুইটা গ্রুপ রাখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে যারা বিজ্ঞানে ভালো তারা বিজ্ঞান পড়বে আর যারা মানবিক নিতে চায় তারা মানবিক পড়বে।


শিক্ষাক্রমের নতুন রূপরেখার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিবার্তাকে বলেন, শিক্ষাক্রমে আধুনিকায়ন একবিংশ শতাব্দীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে শিক্ষাকে ঢেলে সাজানোর যে রুপরেখা করা হয়েছে আমি সেটাকে স্বাগত জানাই। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এরআগে বহুবার শিক্ষার্থীদের চাপ কমাতে বই কমানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। শিক্ষাবিদরাও এ বিষয়ে বহুবার কথা বলেছেন। অবশেষে এ বিষয়টি আমলে নিয়ে রুপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে।


তিনি বলেন, শুধু শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনলে হবে না, বরং এ পরিবর্তনকে বাস্তবায়ন করতে হবে। দক্ষ ও যোগ্য লোককে এ পেশায় নিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীরা পেশা হিসেবে এখানে কেন থাকতে চায় না, তা ভাবতে হবে। প্রয়োজনে সুযোগ -সুবিধা বাড়িয়ে দিয়ে যোগ্য লোকদের এ পেশায় রাখতে হবে। তাহলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা যোগ্য শিক্ষকের ছোঁয়ায় প্রকৃত শিক্ষাটা পাবে।


পঞ্চম শ্রেণির পিএসসি ও অষ্টম শ্রেণির জেএসসি পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, এ পরীক্ষাগুলোতে জিপিএ ৫ নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। তখন শিক্ষার্থীদের চাপ দেয়া হয়। চাপে পড়ে শিক্ষার্থীরা আর শিক্ষার্থী থাকে না, তারা পরীক্ষার্থী হয়ে যায়। এটা থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে হবে। পিএসসি-জেএসসি পরীক্ষাগুলো থাকা উচিত নয় বলেও মনে করেন তিনি।


নবম শ্রেণির গ্রুপ নেয়ার বিষয়ে ঢাবির সাবেক এ উপাচার্য বলেন, আমি মনে করি এ শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা এসব বিভাজন থাকা উচিত নয়। কেউ বিজ্ঞান পড়বে না, কেউ সমাজ পড়বে না, আবার কেউ অন্য বিষয় পড়বে না এতো বিভাজন এ শ্রেণিতে ঠিক নয়। বরং তথ্য প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে এ শ্রেণির শিক্ষাকে সামগ্রিক পাঠ্যক্রমে নিয়ে আসতে হবে। পরে কলেজে গেলে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দ মতো বিভাগ নিতে পারে।


বিশিষ্ট এ শিক্ষাবিদ আরো বলেন, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করবেন। আর শিক্ষার্থীরাও মুক্তভাবে পড়বেন। এখানে প্রেসার থাকবে কেন? এ প্রেসার তো শিক্ষার্থীদের মারাত্মক ক্ষতি করছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দূর করতে হবে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বিবার্তাকে বলেন, শিক্ষাক্রমের নতুন রুপরেখা আমি এখনো দেখিনি। দেখলে পরে কথা বলতে পারবো।


কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এমরান কবির চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, বিশেষজ্ঞ আর এক্সপার্টদের সহায়তা নিয়ে শিক্ষাক্রমের এ রুপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। অনেক চিন্তা ভাবনা আর পরিকল্পনা নিয়ে এটা করা হয়েছে।


এর আগে সোমবার ( ১৩ সেপ্টেম্বর) নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে জানানো হয়। এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখা উপস্থাপন করা হলে তিনি তা অনুমোদন করেন। এরপর দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন রুপরেখা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।


এসময় বলা হয়, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না। আর নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্যের মতো বিভাজন থাকবে না। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন বই থাকবে। এসএসসির আগে থাকবে না কোনো পাবলিক পরীক্ষা। নতুন এ রূপরেখায় বর্তমানে চালু থাকা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেডিসি) ও সমমানের পরীক্ষার কথা উল্লেখ নেই।


২০২৩ সাল থেকে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া শিক্ষাক্রমের এ রুপরেখা ২০২৫ সাল থেকে পুরোপুরি বাস্তবায়নে আগামী বছর থেকে কাজ শুরু হবে। আগামী বছর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১০০টি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হবে। ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে শুরু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি এবং ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম শুরু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।


বিবার্তা/রাসেল/গমেজ/শাহিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com