শিরোনাম
ঐতিহ্যের মৃৎশিল্প আজ বিবর্ণ
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০১৬, ০৮:২৩
ঐতিহ্যের মৃৎশিল্প আজ বিবর্ণ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মৃৎশিল্প বাঙালি ও বাংলার ঐতিহ্যের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের লোকজ কর্মকাজে মৃৎশিল্পের অবস্থান ও মৃৎশিল্পের শিল্পীদের অবদান অস্বীকার করার মতো নয়। মাটি দিয়ে তৈরি নানারকম বাহারি তৈজসপত্র ও সৌখিন সামগ্রী বাঙালির নান্দনিক জীবন ও সংস্কৃতিকে করেছে বিকশিত ও উজ্জীবিত।


কিন্তু প্রযুক্তির বিকাশ, টেকসই সামগ্রী ও আধুনিকতার চাপাকলে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের মৃৎশিল্প। লোহা, স্টিল ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র মাটির চেয়ে টেকসই হওয়ায় মাটির তৈরি জিনিসের কদর অনেকাংশে কমে গেছে। বর্তমানে মানুষ শুধুই শখের বসে মাটির তৈরি বিভিন্ন পণ্য সৌন্দর্যবর্ধনে সাজিয়ে রাখে। ফলে মৃৎশিল্পের অস্তিত্ব ক্রমে বিলুপ্তির পথে।


মৃৎশিল্পীরা মাটির সাথে তাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন মূর্তি, হাঁড়ি, চুনপাত্র, ফুলদানি, সরাই, দুধের হাঁড়ি, মালসা, বদনা, থালা, কলসি, পানের বাটা, মটকা, কাজলা বাটিসহ অসংখ্য রকমের বাহারি তৈজসপত্র।


মাটি দিয়ে যারা দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করে জীবিকানির্বাহ করেন তাদেরকে বলা হয় কুমার। আর কুমাররা মাটি দিয়ে মাটি দিয়ে যে জিনিসপত্র তৈরি করে তাকে বলা হয় মৃৎশিল্প। একইভাবে শতবছরের ঐতিহ্যের মৃৎশিল্প তৈরি করতে কয়েকটি কুমার পরিবার সংঘবদ্ধ হয়ে যেখানে বসবাস করে তাকে বলা হয় কুমারপাড়া।



মৃৎশিল্পের এই অবস্থাতে ক্ষুদ্র হয়েছে মৃৎশিল্পের বাজার। তবে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ শিশু একাডেমী এলাকার মৃৎশিল্পের বাজার অতি পরিচিত নাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের অপর পাশে গড়ে উঠেছে এসব মৃৎশিল্পের দোকান। তাছাড়া ধানমণ্ডির রাজারবাজার, সাভারের পর্যটনসহ বিভিন্ন এলাকায় মৃৎশিল্পের দোকান দেখা যায়। এছাড়া বিভিন্ন মেলায় কুমারদের কাছ থেকে মৃৎশিল্প সামগ্রী এনে বিক্রি করতে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সাজিয়ে বসেন।



মাটির তৈরি জিনিসপত্র ছাড়াও ম্যাট, ব্যাগ, দোলনা, ছিকা, প্লাস্টিক ও কাগজের ফুল হরেক রকমের বাহারি পণ্যও শোভা পায় এসব দোকানে। আর এসব দোকানে ভিড় জমায় নগরীর বিভিন্ন এলাকার রুচিশীল মানুষেরা এবং তারা নিজেদের পছন্দ মত সামগ্রী ক্রয় করেন।


ঢাকার দোয়েল চত্বর এলাকার এক মৃৎশিল্প দোকানদার বলেন, ‘দৈনিক যত মানুষ কিনতে আসে তাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই শখ করে আসে। আগের মতো এখন কেউই মাটির তৈজসপত্র নিত্য ব্যবহার করে না।’ রেজওয়ানা শিশির নামের এক ক্রেতাকে জিজ্ঞেস করে জানা যায়, তিনি তার বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে এখানে এসেছেন।’


মেলামাইন, অ্যালমুনিয়াম, স্টিল, সিরামিক, প্লাস্টিক প্রভৃতি আধুনিক ও উন্নত শিল্পের সঙ্গে টিকে থাকতে কষ্ট হচ্ছে কুমারদের। আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব ও কাঁচামালের উচ্চ মূল্যেও কারণে কুমাররা সেভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না। মৃৎশিল্পের জন্য নেই সরকারি ও বেসরকারি ঋণ ও পৃষ্ঠপোষকতা।


তাছাড়া মাটির পণ্যের চাহিদা খুব একটা না থাকায় দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কুমাররা। তাই ঐতিহ্যের এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কুমারদেও সহজ শর্তে ঋণ দেয়া ও তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আধুনিক দৃষ্টিনন্দন মাটির তৈজসপত্র তৈরিতে সহায়তা করা প্রয়োজন। এতে মৃৎশিল্প দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। তাহলে আমরা আবার ফিরে পেতে পারি আমাদের শতবছরের ঐতিহ্যের মৃৎশিল্প।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com