
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পিকআপ ভ্যানে করে হাসপাতালে নেয়ার সময় তিনি বাঁচার জন্য পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকতের কাছে অক্সিজেন চেয়েছিলেন। কিন্তু অক্সিজেনের বদলে লিয়াকত তাকে পিকআপে বসেই আরো দুটি গুলি করেন। এসব তথ্য বন্ধুদের সাথে শেয়ার করেছেন পিকঅ্যাপের চালক আবুইয়া।
শনিবার (৮ আগস্ট) আবুইয়ার বন্ধু সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক গণমাধ্যমকে এ বিষয়টি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিনড্রাইভে সেনা, পুলিশ ও বিজিবি’র তল্লাশি চৌকি রয়েছে। অন্যান্য চেকপোস্টের থেকে শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টটি একটু আলাদা। অন্য চেকপোস্টগুলো নির্জন জায়গায় হলেও এই চেকপোস্টটির পাশে বাজার, মসজিদ, লোকালয় রয়েছে।
অটোরিকশা চালক বলেন, ঘটনার পর সেই মিনি পিকআপ চালক বেলাল ওরফে আবুইয়া তাকে বলেছেন হাসপাতালে নেবার পথে সিনহাকে আরো দুই রাউন্ড গুলি করে পুলিশ।
তিনি বলেন, গাড়ি করে নিয়ে যাচ্ছিল। সে অবস্থায় গুলিবিদ্ধ লোকটি অক্সিজেন চেয়েছিল। তখন তাকে আবার দুইটি গুলি করা হয়।
এদিকে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্যাতন, ক্রসফায়ার, মামলা বাণিজ্য, হুমকিসহ আমানবিক ও লোমহর্ষক ঘটনার প্রকাশ পাচ্ছে প্রতিনিয়তই। একেক মানুষের ওপর চালানো অত্যাচারের বর্ণনা শুনলে গা শিউরে ওঠে।
জনশ্রুতি রয়েছে, কে কতদিন প্রদীপের টর্চার সেলে আটকে ছিল তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানতেন না। এমন ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনা হল টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড পশ্চিম মহেশখালীয়া পাড়ার মৃত আলী আহাম্মদের পুত্র সিএনজি চালক আব্দুল জলিলের প্রকাশ (গুরা পুতুইক্কা)।
সূত্রমতে, সিএনজি চালক জলিলের রয়েছে দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রীসহ ভাইবোন আত্মীয়-স্বজন। গাড়ি চালিয়ে যে কোনো মতেই সংসার চালাত জলিল। কিন্তু বেশি দিন তার কপালে সয়নি সন্তান, স্ত্রী ও ভাই, বোনসহ আত্মীয়স্বজনের ভালবাসা।
একদিন প্রদীপ নামের ‘আজরাইলের’ শনি ভর করে তার ওপর। শেষ রক্ষাও হয়নি জলিলের। ধরেছিল তরতাজা ক্লিন সেভ করা টগবগে ৩৪ বছরের যুবক জলিলকে। আর যখন বন্দুকযুদ্ধের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তখন জলিলকে চেনার কোন উপাই নেই। দাড়ি আর চুল ও ক্ষুধার যন্ত্রনায় এমন নির্মম পরিস্থিতি জলিলের শরীরের উপর দিয়ে গেছে ৯০ বছরের বৃদ্ধকে হার মানাবে। পাশাপাশি গুলি না করে সামান্য আঘাতেই মরে যেত জলিল। কিন্তু প্রদীপ তাতে বিশ্বাসী নয়।
প্রদীপের চাহিদা পূরণ করতে না পারায় সরকারি বুলেটের অপচয় করে কথিত বন্দুকযুদ্ধেরনামে চারটি গুলি জলিলের বুক ঝাঝরা করে দেয়। এমন লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিলেন সিএনজি চালক আবদুল জলিলের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম (২৬)।
ছেনুয়ারা বেগম জানান, গত বছরের ২ ডিসেম্বর সিএনজি চালক স্বামী বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশ্যে মেডিকেল দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। পরদিন ৩ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় কক্সবাজার পৌঁছে ব্যক্তিগত কাজে কক্সবাজারের আদালত পাড়ার মসজিদ মার্কেটে যায়। ওই সময় ডিবি পুলিশের এক ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে সাদা পোশাকদারী কয়েকজন স্বামী জলিলকে আটক করে নিয়ে যায়।
পরে এই খবর শুনার পর স্বামীর সন্ধান পাওয়ার জন্য কক্সবাজার-টেকনাফের সংশ্লিষ্ট আইন-শৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন দফতরের দরজায় কড়া নাড়েন তিনি। কিন্তু কোথাও স্বামীর খোঁজ মেলেনি। খেয়ে না খেয়ে স্বামীর খোঁজে পার করে কয়েক মাস। পরে কক্সবাজারের স্থানীয় সংবাদিকদের মাধ্যমে "আমার স্বামী দুই মাস ধরে নিখোঁজ" শিরোনামে পত্রিকায় সংবাদ প্রচার করে। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি।
কিন্তু একদিন প্রদীপের টর্চার সেল থেকে জেলহাজতে যান হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জাহেদ। আর জাহেদ থেকে খবর পায় জলিল টেকনাফ থানায় ওসি প্রদীপের টর্চার সেলে রয়েছে। তাকে ডিবি ধরার পর হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি মশিউরের মাধ্যমে টেকনাফ থানায় হস্থান্তর করা হয়।
তারপর থেকে বেশ কয়েকবার স্বামীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করে ছেনুয়ারা। অঝরে কান্নাকাটি করে পৌঁছায় ওসি প্রদীপের দরজায়। কিন্তু প্রদীপের দাবি বিশাল। ৩০ লাখ টাকা দিতে হবে। না হয় স্বামী ক্রসফায়াওে যাবে। পরে হাতে পায়ে ধরে বিদেশ যাওয়ার জন্য জমিয়ে রাখা ৫ লাখ টাকা দেন ছেনুয়ারা। তাতে কোন কাজ হয়নি। শত চেষ্টায় দেখাও করতে পারেনি স্বামীর সঙ্গে। তবে জীবনের শেষ পর্যায়ে দেখা হয় স্বামী জলিলের সঙ্গে। কিন্তু কথা হয়নি। কারণ তখন স্বামী জলিলের রক্তাক্ত শরীর নিয়ে নিতর দেহে পড়ে ছিল হাসপাতালের মর্গে।
বিবার্তা/আবদাল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]