শিরোনাম
ভারতীয় গণমাধ্যমের ‘ভিত্তিহীন’ সংবাদে বিজিবির কড়া প্রতিবাদ
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২০, ১৬:৪০
ভারতীয় গণমাধ্যমের ‘ভিত্তিহীন’ সংবাদে বিজিবির কড়া প্রতিবাদ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা ৭ জুলাই ‘অরক্ষিত জমিতে পা পড়ছে বাংলাদেশির’ শিরোনামে যে সংবাদ প্রকাশ করেছে তা ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিহিত করে এর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।


শুক্রবার (১০ জুলাই) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।


প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, পত্রিকায় ঘটনাস্থল রানীনগর সীমান্তের কথা বলা হয়েছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেখানে কোনো ঘটনা ঘটেনি। উল্লেখিত এলাকাটি রাজশাহী বিজিবি এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকা চারঘাট বিওপি হতে শুরু করে তালাইমারি বিওপি পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এখানে পদ্মা নদী বরাবর শূন্য লাইন অতিক্রম করেছে। এর উভয় পার্শ্ব বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল।


সংবাদে বলা হয়, সীমান্তের রানীনগর ১ ও ২ ব্লক এবং জলঙ্গি জুড়ে প্রায় ২২ হাজার একর অরক্ষিত জমিতে বাংলাদেশিরা অবাধে চাষাবাদ করছে। এই প্রসঙ্গে দেখা যায় বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভারতের অভ্যন্তরে গিয়ে চাষাবাদ করা তো দূরের কথা, বর্তমানে আন্তর্জাতিক সীমারেখা বরাবর চাষাবাদ করাই অসম্ভব একটি ব্যাপার। সেখানে প্রতিনিয়ত শূন্য লাইন বরাবর বিজিবি সদস্যরা রাত দিন টহল করে সীমান্ত রক্ষা করছে।


প্রকাশিত সংবাদে আরো বলা হয়, দিন কয়েক আগে দুজন বাংলাদেশি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় এলাকায় চলে আসলে বিএসএফ তাদের আটক করে এবং ফলশ্রুতিতে তার মুক্তিপণ স্বরূপ রানীনগর সীমান্তের গ্রাম থেকে দুজন গ্রামবাসীকে তুলে নিয়েছে বাংলাদেশি দুষ্কৃতিকারীরা। কিন্তু বাস্তবে আসল ঘটনা সম্পূর্ণ উল্টো এবং প্রকাশিত সংবাদটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।


প্রসঙ্গত, ৭ জুলাই আনন্দবাজার পত্রিকাটির ভারতের রানি নগর প্রতিনিধি সুজাউদ্দীন বিশ্বাসের পাঠানো একটি প্রতিবেদন ‘অরক্ষিত জমিতে পা পড়ছে বাংলাদেশির’ শিরোনামে প্রকাশ করে।


প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, ভারতের মুর্শিদাবাদের ডোমকল মহকুমার সীমান্তে কয়েক হাজার একর জমি বিজিবির সহায়তায় বাংলাদেশিরা দখল করছে।


আনন্দবাজার তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ নাকি স্থানীয় আবাদি মানুষদের চাষাবাদ করতে না দেয়ায় বাংলাদেশিরা বিনা বাধায় জমি দখল করে চলেছে। তাদের অভিযোগ ভারতীয় চাষিদের ওই জমিতে চাষ করাই লাটে উঠেছে।


আনন্দবাজারের খবরে আরো বলা হয়েছে, অনেক সময়ে মাঠ থেকে ভারতীয় চাষীদের তুলে নিয়ে গিয়ে বিজিবি নাকি আটকে রাখছে।


প্রতিবেদনে স্থানীয় গ্রামবাসীর উদ্ধৃতির নামে বিজিবির বিরুদ্ধে বিষেদগার করা হয়েছে। তারা এক গ্রামবাসীর বক্তব্যের মাধ্যমে লিখেছে, পদ্মায় মাছ ধরার ক্ষেত্রেও বাধা দিচ্ছে বিজিবি।


এছাড়া মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির ইরফান আলি নামক এক স্থানীয় গ্রামবাসী বক্তব্য হিসেবে উল্লেখ করেছে, ‘‘বিজিবি সব সময়ে বাংলাদেশি গ্রামবাসীদের পাশে থাকে। ঠিক উল্টো ব্যবহারটা করে বিএসএফ, আমরাই যেন অনুপ্রবেশকারী!’


বিজিবি জানায়, মূলত গত ২ জুলাই জলঙ্গি সীমান্তে দুটি ঘটনা ঘটে যা পত্রিকার মূল বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। গত ২ জুলাই আনুমানিক ১১৩০ ঘটিকায় নয়ন শেখ এবং শহিদুল শেখ নামক দুইজন জলঙ্গী নিবাসী ভারতীয় চোরাকারবারি অবৈধভাবে জলঙ্গী সীমান্ত দিয়ে আন্তর্জাতিক সীমারেখা অতিক্রম করে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইউসুফপুর গ্রামে মাদক ব্যবসা এবং অর্থ লেনদেনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় লোকজনের উপর চড়াও হয়।


স্থানীয়রা ব্যাপারটিকে সহজভাবে না নিয়ে তাদেরকে ঘেরাও করে ফেলে। পরবর্তীতে ইউসুফপুর বিজিবি ক্যাম্প খবর প্রাপ্তি সাপেক্ষে ভারতীয় দুজনের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজেদের হেফাজতে তাদেরকে নিয়ে নেয়। অপরপক্ষে একই দিন ১২টায় বিএসএফ টহল দল অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমারেখা অতিক্রম করে ৩০০ মিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে (পিলার ৭২/৪-এস বরাবর) প্রবেশ করে ইউসুফপুর এলাকা থেকে তিনজন নিরীহ ও নিরাপরাধ কৃষককে ধরে নিয়ে যায় যারা চর এলাকায় শুধুমাত্র চাষাবাদ করে বাড়ি ফিরছিল। উভয় ঘটনার রেশ ধরে একই দিনে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ০৩ জুলাই ২০২০ তারিখে শান্তিপূর্ণভাবে উভয় দেশের নাগরিক হস্তান্তর-গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাপারটি সুষ্ঠুভাবে মীমাংসা হয়েছে।


বিজিবি আরো জানায়, মূলত স্থানীয় মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বিএসএফের সাথে জনগণের বৈরী সম্পর্ক, স্থানীয় গরু চোরাকারবারী কর্তৃক এই মৌসুমে কোন কাজ করতে না পারা, মাছ ধরার সময় বিএসএফ কর্তৃক স্থানীয় জেলেদের থেকে চাঁদা আদায় এবং সর্বোপরি স্থানীয় বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্য ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদটি স্থানীয় ভারতীয় জনগণ অথবা স্বার্থান্বেষীমহল কর্তৃক প্রদান করা হতে পারে বলে অনুমেয়।


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com