শিরোনাম
গেজেট করে সনদ চায় ১৩ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবী
প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২০, ২১:১৫
গেজেট করে সনদ চায় ১৩ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবী
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

লিখিত পরীক্ষা মওকুফ করে অথবা লিখিত ও ভাইভা উভয় পরীক্ষা মওকুফ করে গেজেট প্রকাশ করে সনদ প্রদানের দাবি জানিয়েছেন ১৩ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবী।


মঙ্গলবার ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন ১৩ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবী।


বক্তারা বলেন, দীর্ঘ প্রায় তিন বছর বার কাউন্সিল কর্তৃক এনরোলমেন্ট পরীক্ষা সম্পন্ন না হওয়ায় আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি, উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ২০১৮ ও ২০১৯ সালে কোনো এনরোলমেন্ট পরীক্ষা না হওয়ায় শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে পরীক্ষার দাবিতে আমরণ অনশনের পর ২৮ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী তালিকাভুক্তকরণ পরীক্ষার প্রিলিমিনারি সম্পন্ন হয়। কিন্তু বর্তমান করোনা ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীর কারণে লিখিত পরীক্ষা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অনিশ্চিত হয়ে যায়। এমন অবস্থায় বর্তমান করোনা পরিস্থিতি ও শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের বিষয় মানবিকভাবে বিবেচনা করে লিখিত পরীক্ষা মওকুফ করে অথবা লিখিত ও ভাইভা উভয় পরীক্ষা মওকুফ করে ২০১৭ ও ২০২০ সালে এমসিকিউ উত্তীর্ণদের গেজেট প্রকাশ করে সনদের প্রদানের জন্য গত ৬ জুন বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও আইন মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয় কিন্তু তিন সপ্তাহ হয়ে গেলেও এখনো বার কাউন্সিল কর্তৃক দৃশ্যমান কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে দেখা যায়নি। এমন অবস্থায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে মঙ্গলবার (৩০ জুন) ২০১৭ ও ২০২০ সালে এমসিকিউ উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের লিখিত বা লিখিত ও ভাইভা উভয় পরীক্ষা মওকুফ করে সনদের দাবিতে সারা দেশব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।


ইতিপূর্বে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা বিষয়টি সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করার জন্য গত ৯ জুন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয়।


এখানে উল্লেখযোগ্য এই যে, গত ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ "বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বনাম দারুল ইহসান ট্রাস্ট" মামলার রায়ে বলে “The Bar Council shall complete the enrollment process of the applicants the enrolled as advocates in the district court each calendar year." অর্থাৎ, প্রতি বছর এনরোলমেন্ট প্রসেস সম্পন্ন করার জন্য বার কাউন্সিলের প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে। এরপরও ২০১৮ ও ২০১৯ সালে কোনো এনরোলমেন্ট পরীক্ষা হয়নি। উপরন্তু, ২০১৭ সালের ২১ জুলাই শুরু হওয়া এনরোলমেন্ট পরীক্ষার কার্যক্রম সমাপ্ত হয় ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। আমরা দেখেছি স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই সর্বশেষ এনরোলমেন্ট পরীক্ষা সম্পন্ন হতে সময় লেগেছে ১ বছর ৫ মাস। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা কবে নিরসন হবে সেই বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কেউই বলতে পারে না। এমন অবস্থায় বর্তমান করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এনরোলমেন্ট পরীক্ষার দীর্ঘ জট নিরসনের জন্য ২০১৭ ও ২০২০ সালে প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ লিখিত পরীক্ষা মওকুফ করে অথবা লিখিত ও ভাইভা উভয় পরীক্ষা মওকুফ করে গেজেট প্রকাশ করে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য বার কাউন্সিলের নিকট আবেদন করছি।


The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order, 1972 এর অনুচ্ছেদ (৮) এ বার কাউন্সিলের নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে এবং নির্বাচন কবে হবে সেই তারিখও উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিয়মিত নির্বাচন হয় কিন্তু (১০) অনুচ্ছেদে আইনজীবী তালিকাভুক্তির পরীক্ষার কথা বলা হলেও গত প্রায় (৩) বছর যাবৎ আইনজীবী তালিকাভুক্তির পরীক্ষা হচ্ছে না। অনুচ্ছেদ ( ৮) এ নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ থাকলেও অনুচ্ছেদ (১০) এ পরীক্ষা কবে হবে সেই তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। তাই উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর নিয়মিত পরীক্ষা হচ্ছে না। তাই প্রতি বছর যেনো নিয়মিত পরীক্ষা হয় সেজন্য বছরের কোন সময়ে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা অনুষ্ঠিত হবে সে সময়টি বার কাউন্সিল অর্ডারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বার কাউন্সিলের নিকট অনুরোধ জানাই। শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের যৌক্তিক দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আগামী (৭)ই জুলাই থেকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অফিসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো।


বার কাউন্সিলের বর্তমান কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর একটি এনরোলমেন্ট পরীক্ষাও সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পারেনি। যদি আগামী ১১ মাসের মধ্যে বার কাউন্সিলের বর্তমান কমিটি কোনো এনরোলমেন্ট পরীক্ষা সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে না পারে তবে বর্তমান কমিটিই হবে বার কাউন্সিলের ইতিহাসে একমাত্র কমিটি যে কমিটির অধীনে কোনো এনরোলমেন্ট পরীক্ষা সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে না। বর্তমান বার কাউন্সিলের কমিটিতে যেসব নির্বাচিত সদস্য আছেন তাদের প্রায় সকলেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। তাই বার কাউন্সিলের বর্তমান কমিটির সফলতায় হচ্ছে সরকারের সফলতা, বার কাউন্সিলের বর্তমান কমিটির ব্যর্থতায় হচ্ছে সরকারের ব্যর্থতা। তাই বিষয়টি অতীব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন জানাই।


এখানে আরো উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, বর্তমান করোনা ভাইরাস মহামারীতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল ও আইনজীবীদের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ এবং সহায়তা প্রদান করেনি। দীর্ঘ ৫ বছরে একটি মাত্র এনরোলমেন্ট পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ায় এবং বর্তমান করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। বর্তমানে ১২৮৪৮ জন লিখিত পরীক্ষার অপেক্ষায় আছে এছাড়াও ৫০ হাজারেরও বেশি শিক্ষানবিশ আইনজীবী পরবর্তী প্রিলিমিনারি পরীক্ষার অপেক্ষায় আছে। এমন অবস্থায় ২০১৭ ও ২০২০ সালে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের গেজেট প্রকাশ করে ২০২০ সালের মধ্যে সনদ প্রদান করা না হলে পরীক্ষার জট আরো দীর্ঘায়িত হবে। "The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order, 1972" এর Article 4 1972" এর Article 40(1) এবং 40(2)(m) অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে ২০১৭ ও ২০২০ সালে এমসিকিউ উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের গেজেট প্রকাশ করতে কোনো বাধা নাই। উচ্চ আদালতের নির্দেশ, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা, দীর্ঘদিনের পরীক্ষাজট নিরসনের বিবেচনা করে ২০১৭ ও ২০২০ সালে এমসিকিউ উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের লিখিত পরীক্ষা মওকুফ অথবা লিখিত ও ভাইভা উভয় পরীক্ষা মওকুফ করে গেজেট প্রকাশ করে সনদ প্রদান করার জন্য এবং বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী থেকে প্রতি ক্যালেন্ডার ইয়ারে এনরোলমেন্ট প্রসেস সম্পন্ন করার আপিল বিভাগের নির্দেশ কার্যকর করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নিকট আকুল আবেদন জানাই।


বিবার্তা/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com