ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে নেপাল বাংলাদেশের সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বাংলাদেশ এ বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছে।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সফররত নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গাওয়ালির সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

টিপু মুনশি বলেন, নেপালের বিরাগনগর থেকে সৈয়দপুরের বিমানবন্দরের ফ্লাইং টাইম প্রায় ২৫ মিনিট। এ বিমানবন্দর তারা ব্যবহার করতে পারলে যোগাযোগ সহজ হবে।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর নেপাল কবে নাগাদ ব্যবহার করতে পারবে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এটা উনাদের চাহিদা। আমি আজকে উনাদের বললাম- আমি এ বিষয়ে ইমিডিয়েটলি সিভিল অ্যাভিয়েশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবো। আজকে প্রস্তাবের পর মনে হয়েছে এটা আমাদের ও উনাদের জন্য ভালোই হবে। প্রতিদিন এখন মোট দশটা ফ্লাইট সৈয়দপুর যাচ্ছে। উনারা যদি একটা-‍দুইটা ফ্লাইট শুরু করে তাহলে যোগাযোগটা বাড়বে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, নেপাল বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র। নেপালের সঙ্গে প্রিফেন্সিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের (পিটিএ) স্বাক্ষরের জন্য কাজ চলছে। আমরা উভয় দেশ স্বাক্ষরের জন্য একমত হয়েছি। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে। আগামী ৩ ও ৪ মার্চ ঢাকায় বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে সচিব পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে পিটিএ স্বাক্ষর ও উভয় দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

বাংলাদেশ নেপালকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, উভয় দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য সড়ক, নৌ এবং আকাশ পথ চালু করার বিষয়ে কাজ চলছে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর ব্যবহারেরও সুযোগ রয়েছে নেপালের। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ নেপালে ৩৮.০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, একই সময়ে আমদানি করেছে ১৮.১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। বাংলাদেশ এখন পাটজাত পণ্য, ব্যাটারি, তৈরি পোশাক, টয়লেটরিজ পণ্য, ঔষধসহ বেশ কিছু পণ্য নেপালে রপ্তানি করছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। এফটিএ স্বাক্ষরের মাধ্যমে এ বাণিজ্য বাড়ানো সম্ভব। নেপালের সঙ্গে বাণিজ্যে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ব্যবহার করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে আগামী দিনগুলোতে উভয় দেশের বাণিজ্য আরো বাড়বে।

নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নেপাল বাংলাদেশকে খুবই গুরুত্ব দেয়। উভয় দেশের মানুষ ও জীবনযাত্রার মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, নেপাল তারপরই অবস্থান করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং পর্যটক বিনিময়ের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা উভয় দেশ এ সুযোগ ও সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে চাই। নেপাল ভারতের সহযোগিতায় হাইড্রো পাওয়ার উৎপাদন করছে, যা বাংলাদেশে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ নেপালকে ট্রানজিট সুবিধা প্রদান করেছে, এজন্য নেপাল বাংলাদেশের কাছে কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া, নেপাল (বিবিআইএন) প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সংশ্লিষ্ট সব দেশ এবং দেশের মানুষ উপকৃত হবেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের বাণিজ্য বৃদ্ধির টেকনিক্যাল বিষয়গুলো অধিক গুরুত্ব দিয়ে নেপাল কাজ করছে জানিয়ে নেপালি মন্ত্রী বলেন, পিটিএ স্বাক্ষরিত হলে উভয় দেশের মধ্যে নতুন অর্থনৈতিক যুগের সূচনা হবে।

নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব শংকর দাস বৈরাগী, ঢাকায় নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ড. বানশিধর মিশ্র, নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ইয়াগা বাহাদুর হামাল প্রমুখ।

আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান (সচিব) ফাতেমা ইয়াসমিনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বিবার্তা/জহির