শিরোনাম
দিনভর সবার চোখ ছিল ‘ধর্ষক’ মজনুর দিকে
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২০, ২২:৪৪
দিনভর সবার চোখ ছিল ‘ধর্ষক’ মজনুর দিকে
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

বুধবার সকাল ৯টা। হঠাৎ র‌্যাব সদস্যরা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় এক সন্দেহবাজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এর পর থেকে গণমাধ্যম কর্মীরা চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার তথ্য সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর এ খবর জানতে প্রতিমুহূতে টিভি ও অনলাইন গণমাধ্যমগুলোর দিকে নজর রাখেন দেশেবাসী। এক পর্যায়ে নির্যাতিতা ছাত্রীর বর্ণনা ও আটককৃত সন্দেহবাজন ওই ব্যক্তির স্বীকারোক্তিতে তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে দুপুর দুইটার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।


এ সময় র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম ঢাবি ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। একই সাথে ধর্ষণকারী ওই ব্যক্তিকে কিভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে তা গণমাধ্যমকে অবগত করেন। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীরাও এসব তথ্য গুরুত্বের সাথে সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।


যেভাবে গ্রেফতার হলেন ধর্ষক:


গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলায় ধর্ষণের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে ক্যান্টরমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন। পরে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এছাড়াও মামলাটি ছায়া তদন্তে নামে র‌্যাব।


পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের সকল ইউনিট মাঠে কাজ শুরু করেন। প্রায় ৪৮ ঘন্টা কাজ করার পর গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুরাতলী এলাকা থেকে ভিকটিমের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। ভিকটিমের মোবাইলটি খায়রুল ইসলাম (৩৮) নামের এক রিকশা চালকের কাছে পাওয়া যায়। তারপর ওই রিকশা চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব। খায়রুল ইসলামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়।


আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, অরুণা বিশ্বাস (৪৫) নামের একজনের কাছ থেকে খায়রুল মোবাইল ফোনটি পেয়েছে। অরুণা তাকে মোবাইলটি মেরামতের জন্য দিয়েছিল। পরে অরুণা বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় অরুণা বিশ্বাস জানায়, মোবাইলটি সে ডিসপ্লে ভাঙা অবস্থায় মজনু নামের এক জনের কাছ থেকে ক্রয় করেছে।পরে ভিকটিমের দেয়া তথ্য ও অরুণার কথা মত র‌্যাব বুধবার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটের সময় শেওড়া রেল গেইট এলাকা থেকে মজনুকে গ্রেফতার করে।


মনজু বিবাহিত ও মাদাকাসক্ত ছিল:


মজনু নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা গ্রামের মৃত মাহফুজুর রহমানের ছেলে। সে পেশায় দিনমজুর এবং ১০ বছর আগে সে বিয়েও করেছিল। এক পর্যায়ে তার স্ত্রী মারা যায়। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এক পর্যায়ে ঢাকায় চলে আসে মজনু। ঢাকা এসে বনানী, ক্যান্টরমেন্ট এলাকায় বসবাস করত সে। সর্বশেষ সে শেওড়া এলাকায় রেলের পাশে বসবাস করত। শুধু তাই নয়, সেখানে থেকে সে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ পরিচালনা করে আসছিল।


প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক নারীদের ধর্ষণ করত মজনু:


সারোয়ার বিন কাশেম জানান, মজনু পেশায় দিনমজুর হলেও মাদকাসক্ত ছিল। তাই প্রায় সময় চুরি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপকর্ম করে আসছিল। এছাড়াও বিভিন্ন সময় প্রতিবন্ধী নারী ভিক্ষুক ও পাগল নারীদের সে ধর্ষণ করেছে। ঢাবি ছাত্রীকে যে জায়গায় ধর্ষণ করেছে; সেই জায়গায় মজনু আগে একাধিক নারী ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ করেছে।


যেভাবে ঢাবি ছাত্রীকে টাগের্ট করে মজনু:


গত ৫ জানুয়ারি কুর্মিটোলা হাসপাতালে গিয়েছিল মাদাকাসক্ত মজনু। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে কুর্মিটোলা বাস স্ট্যান্ডের পাশে ওঁৎ পেতে ছিল। এক পর্যায়ে ঢাবি ছাত্রীকে পেয়ে তাকে জোরপূর্বক রাস্তার পাশের ঝোপে নিয়ে যায় এবং তাকে ধর্ষণ করে। এসময় তাকে একাধিকবার হত্যা করার চেষ্টা করছিল।


র‌্যাবে মিডিয়া প্রধান বলেন, সেদিন মজনু অসুস্থতার কারণে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীকে দেখেন ও তাকে ধর্ষণ করার জন্য টার্গেট করেন। ধর্ষণের পর সে এয়ারপোর্ট রেলস্টেশন, নরসিংদী রেলস্টেশন এবং বনানী রেল স্টেশনে আত্মগোপনে চলে যায়। সেখান থেকে গত মঙ্গলবার রাতে শেওড়াতে মোবাইল বিক্রি করে আসে। এ খবর পেয়ে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে।


যেভাবে সনাক্ত করা হয় সেই ধর্ষক মজনুকে:


গ্রেফতার করার পর ধর্ষক মজনুর ছবি নিয়ে নির্যাতিতা ছাত্রীর কাছে যায় র‌্যাব। এ সময় নির্যাতিতা ওই মেয়ে তার ছবি দেখে সনাক্ত করে। এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, আমরা মেয়েকে অনেকবার অভিযুক্ত মজনুর ছবি দেখিয়েছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করেছি। মেয়েটি বলেছে, এই সে ধর্ষক। আমি পৃথিবীর সব চেহারা ভুলে গেলেও কখনো এই চেহারা ভুলবো না। এছাড়াও সে নিশ্চিত করার আগে ও পরে অভিযুক্তকেও জিজ্ঞেস করেছি। সেও স্বীকার করেছে যে, সে একাই ঘটনাটি ঘটিয়েছে।


র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, মজনু ১২ বছর আগে ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে দাঁত ভেঙে ফেলেছিল। এটিই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। কারণ নির্যাতিতা ছাত্রীর বর্ণনা অনুয়ায়ি ধর্ষনকারীর সামনের দাঁত ভাঙা থাকার কথা। সেই অনুয়ায়ী মজনুর সামনের দাঁতও ভাঙা। তাই তাকে শনাক্ত করতে সহজ হয়েছে।


বিবার্তা/খলিল/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com