শিরোনাম
বাসায় ঢুকে ডা. সারওয়ার আলীকে সপরিবারে হত্যার চেষ্টা
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২০, ১১:০৯
বাসায় ঢুকে ডা. সারওয়ার আলীকে সপরিবারে হত্যার চেষ্টা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলীর বাড়িতে ঢুকে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সারওয়ার আলী ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ও চিকিৎসক। তার ধারণা, জঙ্গিগোষ্ঠী এই কাজ করেছে।


রবিবার (৫ জানুয়ারি) রাতে উত্তরার বাড়িতে ভয়াবহ এ ঘটনা ঘটে।


দুর্বৃত্তরা সারওয়ার আলীর স্ত্রী কমিউনিটি ক্লিনিকের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মাখদুমা নার্গিস, মেয়ে সায়মা আলী, জামাতা হুমায়ুন কবিরকেও হত্যার চেষ্টা চালায়। তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসা দুই প্রতিবেশীকেও ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা।


হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত-পরিচয় চার–পাঁচজনকে আসামি করে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সোমবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মামলা করেছেন সারওয়ার আলী।


প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত রবিবার (৫ জানুয়ারি) রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে অজ্ঞাতপরিচয় দুই দুর্বৃত্ত উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে সারওয়ার আলীর বাড়িতে ঢুকে। তারা ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় গিয়ে তার মেয়ে সায়মা আলীর বাসার দরজায় ধাক্কা দেয়। দরজা খুলে দেয়া হলে দুর্বৃত্তরা ভেতরে গিয়ে সারওয়ার আলীর মেয়ে ও জামাতাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা চালায়। পরে বাড়ির চতুর্থ তলায় গিয়ে সারওয়ার আলী ও তার স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করে। এসময় তাদের চিৎকারে ওই ভবনের এক বাসিন্দা ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ওই বাসা থেকে দুর্বৃত্তদের ফেলে যাওয়া মোবাইল ফোন, একটি ব্যাগে থাকা ৭টি চাপাতি, বৈদ্যুতিক শক দেয়ার যন্ত্র, টিভি ক্যামেরার স্ট্যান্ড, সিনথেটিক দড়ি ও কেমিক্যাল স্প্রে উদ্ধার করেছে।


সোমবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সারওয়ার আলী বলেন, দুর্বৃত্তদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর হবে। তারা প্রথমে তার মেয়ের বাসায় ঢুকে মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ঠিক ওই সময় জামাতা এগিয়ে এলে তাকেও জিম্মি করে। পরে দুর্বৃত্তরা ভবনের চতুর্থ তলায় গিয়ে সারওয়ার আলী ও তার স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করে।


সারওয়ার আলী বলেন, দুর্বৃত্তরা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা চালায়। আমার স্ত্রী এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা চালায়। তখন তিনতলা থেকে আমার মেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ ফোন করে। তারা বাঁচার জন্য চিৎকার করে। এরই মধ্যে দোতলার ভাড়াটে শাহাবুদ্দিন চাকলাদার ও তার ছেলে মোবাশ্বের চাকলাদার এগিয়ে আসেন। এরপর দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।


তিনি বলেন, ফোন করার চার মিনিটের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তার সন্দেহ, ভবনের দারোয়ান হাসানের সঙ্গে দুর্বৃত্তদের যোগসাজশ রয়েছে। সে আগে থেকেই বাড়ির ফটক খোলা রেখেছিল।


সারওয়ার আলীর মেয়ে সায়মা আলী থাকেন ওই ভবনের তৃতীয় তলায়। গতকাল রাতে তিনি জানান, দুর্বৃত্তরা তৃতীয় তলায় বাসায় ঢুকে তাকে প্রথমে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়। এসময় তার স্বামী এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। তাদের ১৩ বছরের মেয়ে এ দৃশ্য দেখে এগিয়ে এলে তাকেসহ তিনজনকে ছুরি ধরে জিম্মি করে বসার ঘরের এক কোনায় আটকে রাখা হয়। দুর্বৃত্তদের একজন তাদের ঘিরে রাখে আর ফোন করে দলের লোকজনকে ডাকতে থাকে। এসময় অন্য দুর্বৃত্তরা ওপর তলায় গিয়ে তার মা ও বাবাকে হত্যার চেষ্টা করে। চারতলা থেকে তখন অনেক শব্দ হচ্ছিল, এসময় তাদের জিম্মি করে রাখা দুর্বৃত্তটি দরজা খুলে দেখার চেষ্টা করলে তাকে ধাক্কা মেরে দরজা বন্ধ করে দেন তারা। এরপর ৯৯৯–এ ফোন করে তারা পুলিশের সহায়তা চান এবং ‘বাঁচাও’, ‘বাঁচাও’ চিৎকার করতে থাকেন।


সারওয়ার আলীর স্ত্রী মাখদুমা নার্গিস বলেন, দরজা খুলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুরি হাতে একজন লোক ভেতরে ঢুকে সারওয়ার আলীকে মেঝেতে ফেলে দিয়ে তার বুকের ওপর চড়ে বসে। এরপর তিনি এগিয়ে গেলে তাকেও ফেলে দেয়া হয়। এসময় তিনি পা দিয়ে পাশের টেবিলে জোরে লাথি দিচ্ছিলেন যাতে শব্দ হয়। তিনি প্রাণপণ চিৎকারও করছিলেন। সেই চিৎকার শুনে দোতলা থেকে শাহাবুদ্দিন ও তার ছেলে এগিয়ে আসেন।


দোতলার বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন চাকলাদার বলেন, চিৎকার শুনে তিনি ও তার ছেলে মোবাশ্বের চাকলাদার চারতলায় গিয়ে দেখেন, এক দুর্বৃত্ত সারওয়ার আলী ও মাখদুমা নার্গিসের শরীরের ওপর দুই পা দিয়ে বসে আছেন। তখন তিনি ধমক দিয়ে পরিচয় জানতে চাইলে ওই দুর্বৃত্ত তাকে ও তার ছেলের হাতে ছুরিকাঘাত করে। এসময় তার ছেলে টেবিলের কাচ ছুড়ে মারার চেষ্টা করলে দুর্বৃত্ত পালিয়ে যায়।


পরে উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে ওই বাড়ির পার্কিং স্থল থেকে একটি স্ক্রু ড্রাইভার, ব্যাগে থাকা সাতটি চাপাতি, বৈদ্যুতিক শক দেয়ার যন্ত্র, টিভি ক্যামেরার স্ট্যান্ড, সিনথেটিক দড়ি ও একটি কেমিক্যাল স্প্রে উদ্ধার করে।


উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ জানায়, বাড়ির দারোয়ান হাসানের কাছ থেকে একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে। ফোনটি ছিল মাখদুমা নার্গিসের গাড়িচালক নাজমুলের, সেটি দারোয়ান হাসান ব্যবহার করছিলেন। হামলার দিন দারোয়ানের ওই ফোনে অন্তত ২৫টি কল এসেছিল।


সারওয়ার আলীর স্ত্রী জানান, কিছুদিন আগে তিনি তার গাড়িচালক নাজমুলকে সেনানিবাসের রাস্তা ব্যবহার করতে বলেন। কিন্তু তিনি ওই রাস্তা ব্যবহার করতে আপত্তি জানান। পরে বাসায় ফিরে নাজমুল আর চাকরি করবেন না বলে চলে যান। তিনি বলেন, বাসার কোনো কিছু খোয়া যায়নি।


উত্তরা পশ্চিম থানার (ওসি) তপন চন্দ্র বলেন, এ ঘটনায় সোমবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সারওয়ার আলী বাদী হয়ে বাড়ির দারোয়ান হাসান, তাদের সাবেক গাড়িচালক নাজমুলসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনকে আসামি করে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।


তিনি জানান, ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে পুলিশের টহল টিম দ্রুত ওই বাড়িতে হাজির হয়। ততক্ষণে ওই যুবকরা পালিয়ে যায়। বাড়ির দারোয়ান হাসান (৫২) ও মান্নান নামের এক গাড়িচালককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্যই পালিয়ে যাওয়া যুবকরা বাড়িতে ঢুকেছিল। পুরো বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আরো একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাত বছর আগে থেকে ওই বাড়িতে দারোয়ানের চাকরি করেন হাসান। তার বাড়ি বরিশালে। সে-ই খুনিদের ঢুকতে দেয়া থেকে শুরু করে বের করে দেয়া পর্যন্ত সহযোগিতা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।


পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হাসান জানিয়েছেন, চাকরি ছেড়ে যাওয়া গাড়িচালক নাজমুলই চাপাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ওখানে রেখে গেছে। আর আটককৃত চালক মান্নানই নাজমুলকে গাড়িচালক হিসেবে চাকরির সুপারিশ করেছিলেন।


বিবার্তা/এনকে/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com