শিরোনাম
‘রেল দুর্ঘটনার পেছনে চক্রান্ত আছে কিনা তদন্ত করে ব্যবস্থা’
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ০৮:৫১
‘রেল দুর্ঘটনার পেছনে চক্রান্ত আছে কিনা তদন্ত করে ব্যবস্থা’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ট্রেন দুর্ঘটনার পেছনে কোনো চক্রান্ত বা দূরভিসন্ধি আছে কিনা, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ দেশে একটা ঘটনা ঘটার পর পরই আরো ঘটনা ঘটে। এর পেছনেও কিছু আছে কি না, তা খুঁজে বের করতে হবে।


বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) একাদশ সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। এসময় অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।


ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। কুয়াশার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় রেল দুর্ঘটনায় কিছু মানুষ মারা গেছে। সঙ্গে সঙ্গে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে আমরা আছি। উল্লাপাড়ায় আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিছু মানুষ আহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনার পেছনে কোনো চক্রান্ত বা দূরভিসন্ধি আছে কিনা, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। কারণ দেশে একটা ঘটনা ঘটার পর পরই আরও ঘটনা ঘটে। এর পেছনেও কিছু আছে কি না, তা খুঁজে বের করতে হবে।


প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটা মর্যাদার আসনে নিয়ে এসেছি। আমি জানি দেশের কিছু লোকের এটা পছন্দ হয় না। একটি চক্র আছে যারা নানাভাবে একটা ঘটনা ঘটিয়ে দেশের বিরুদ্ধে একটা বদনাম করতে পারলেই বেশি খুশি হয়।


তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় প্রকল্প বন্ধ করার জন্য যারা বিদেশে তদবির করে বিশ্বব্যাংকের টাকা বন্ধ করে দেয়, তারা দেশের কত বড় শত্রু সেটা সবাইকে বিবেচনা করতে হবে। এরা কখনো জনগণের স্বার্থ দেখে না, নিজের স্বার্থ দেখে। কিন্তু সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ভেদ করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করব ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। বাংলাদেশ বিজয়ের পতাকা নিয়েই বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে।


তিনি আরো বলেন, বিএনপির আমলে রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমরা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক করে দিচ্ছি। রেলে জনবল নিতে হবে, প্রশিক্ষণও দিতে হবে। তবে একটা-দুটো ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে যদি ট্রেন বন্ধ করতে হয়, তবে গাড়ি দুর্ঘটনার পর কি গাড়িও বন্ধ করে দিতে হবে? কোথায় কখন মেট্রোরেল দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা তৈরি করা বন্ধ করে দেব? বিমানও ক্র্যাশ হয়, আবার হারিয়েও যায়। তবে কি বিমানও বন্ধ হয়ে যাবে। কেউ তো বিমানে চলাচল বন্ধ করেনি। সময় ও গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে অবশ্যই চলতে হবে।


প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, সমাজ থেকে অনিয়ম দূর করার জন্য সন্ত্রাস-দুর্নীতি-মাদকবিরোধী অভিযান চলছে, তা অব্যাহত থাকবে। মাদক-সন্ত্রাস নামক দুষ্টচক্র থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হবে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি প্রবেশ করেছে, তার কারণ সামরিক স্বৈরাচাররা অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করতে দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিল, দুর্নীতির সুযোগ করে দিতে একটা এলিট শ্রেণি তৈরি করেছিল। দেশে গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা ছিল না। তখন দেশের মানুষ থেকেছে অবহেলিত, বঞ্চিত। যার কুফলটা আমাদের দেশ ও সমাজ ভোগ করে। অতীত সরকারের সময় (বিএনপি) পুরস্কার না পেয়ে বারবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের তিরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ। তারপরও দুর্নীতির বিষাক্ত জিনিস সবার মাঝে, প্রতিস্তরে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছি, তা অব্যাহত থাকবে। আমাদের উন্নয়নের কর্মসূচি যথাযথভাবে কার্যকর হয় সেই ব্যবস্থা করে যাব।


খাদ্যে ভেজাল সম্পর্কে তিনি বলেন, মানুষের চরিত্র বদলায় না। সরকার অভিযান চালাচ্ছে বলেই মানুষ জানতে পারছে খাদ্যে ভেজাল রয়েছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে, চালিয়ে যাব। তবে ভেজাল খেয়ে খেয়ে আমরা মনে হয় অভ্যস্ত হয়ে গেছি, কারণ গড় আয়ু বেড়ে গেছে। গড় আয়ু এখন ৭২ বছরে উন্নীত হয়েছে।


শিক্ষকদের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার আসার পর সবার যত বেতন বাড়িয়েছি, অন্য কোনো সরকার কোনোদিন বাড়াতে পারেনি। শ্রমিক থেকে শুরু করে শিক্ষক পর্যন্ত সবার বেতন অনেকগুণ বাড়িয়েছি। আড়াই হাজারের মতো স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্ত করে দিয়েছি। শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বাড়ানো হয়েছে, এখন বেতন কিন্তু অনেক বেশি।


পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, বিশ্বের বহু দেশে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও তিন-চারটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রাশিয়া নির্মাণ করছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে, সকল বর্জ্য রাশিয়াই নিয়ে যাবে। এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তিনস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের ট্রেনিং দিয়ে নিয়ে আসছি। এক্সপার্ট আমরা তৈরি করছি। রূপপুরের পর দক্ষিণে একটি দ্বীপ খুঁজছি, সেখানেও আরেকটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করব। আর রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে, এটা সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন। এর চিমনি এত ফুট উঁচুতে, কোনো বাতাস সুন্দরবনে যাবে না। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই সিমেন্ট ব্যবহারে লাগে। লাইন লেগেছে এই ছাইগুলো নিতে। এতে কোনোভাবেই পরিবেশ নষ্ট হবে না, বরং পাঁচ লাখ গাছ লাগানো হচ্ছে।


বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, একজন ভিসি নিয়োগ দিলেই তার বিরদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। শিক্ষকরা তাদের স্বার্থের জন্য ছাত্রদের ব্যবহার করবে কেন? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা বন্ধ করে ছাত্রদের লেখাপড়া নষ্ট করা হচ্ছে। অনেক কষ্ট করে আমরা সেশনজট বন্ধ করেছি। কিন্তু চক্রান্ত করে সেটা আবার সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। মুষ্টিমেয় কয়েকজনের জন্য শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে দিতে পারি না, আমরা দেব না।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com