শিরোনাম
শীতে জবুথবু উত্তরাঞ্চলের জনজীবন
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০১৬, ১০:০৮
শীতে জবুথবু উত্তরাঞ্চলের জনজীবন
সুমন মুখার্জী, নীলফামারী
প্রিন্ট অ-অ+

‘মাঘের শীতে বাঘ কান্দে’-রংপুর অঞ্চলের এ প্রবাদের প্রতিফলন ঘটতে শুরু করেছে নীলফামারীতে। এখানে নতুন করে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষ। বিশেষ করে শ্রমজীবীসহ নদীপারের মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে। প্রচণ্ড শীতের কারণে বাড়ি থেকে বের হতে না পারায় হাজার হাজার ক্ষেতমজুর পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। শীতের দাপটে হাট-বাজার, রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় বিপর্যস্ত হয় পড়েছে গোটা জেলা।


হিমালয়ের চারদিক দিয়ে অক্টোপাসের মতো ধেয়ে আসছে শীতের সাঁড়াশি আক্রমণ। পারদ নিম্নমুখী হওয়ায় রীতিমত শৈত্যপ্রবাহ দিন দিন বেড়েই চলছে, আর থরথরে কাঁপছে উত্তরের মানুষজন। শীতের এই দাপটে আছে আকাশ মেঘাছন্ন হয়ে যাওয়ায় উত্তরী হাওয়ার অবাধ গতিতে মানুষের শরীরে হাড় কাঁপানো কাঁপুনী ধরেছে।


দেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা শহর তেঁতুলিয়া হলেও হিমালয়ের পাদদেশ থেকে নীলফামারী জেলাও বেশি দূরে নয়। তাই দেশের দক্ষিণে শীতের প্রকোপ আসতে কিছুকাল দেরি হলেও নীলফামারী জেলায় শীতের ছোঁবল একমাস পূর্বে থেকেই পড়ে গেছে। শিশুসহ বয়স্কদের দূরাবস্থা চোখে পড়ার মতো। আরো আছে গরীব-দুস্থ মানুষজন।


হিমালয় কাছাকাছি হওয়ায় সন্ধ্যা না হতেই কুয়াশা বুড়ি এসে ঢেঁকে দেয় চারপাশ। পথঘাটে চলাচলের সমস্যা দেখা দেয়। বিপাকে পড়ে যায় হাটুরে মানুষজন। গরম কাপড় ছাড়া চলাই কষ্টকর হয়ে পড়ে। সমস্যায় পড়ে সকালের দিকে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।


গ্রাম-গঞ্জে আগুন তাপানোর মেলা বসে যায় বাড়ির উঠানে উঠানে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা লেপ তোষকের বন্দোবস্ত করে। আর যাদের সামর্থ্য নেই তারা পথ চেয়ে থাকে দাতব্য সংস্থার দিকে। কখন একটি কম্বল দেবে।


জোড়াবাড়ী ইউনিয়নের মির্জাগঞ্জের ষাটোর্দ্ধ বৃদ্ধ আলতাফ হোসেন বিবার্তাকে বলেন, ‘গতবার তো একখান কম্বল দিছিলো। পাতেলা কম্বল খান ছিঁড়ি গেইছে। এইবার আশায় আছো কাহো যদি খেতা-কম্বল দেয়। তাহালে এইবার শীতখান কাটেবার পারিম। বাঁচিম আর কয়কাল?’


চিলাহাটি স্টেশন পাড়ার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্দ্ধ জমিলা বেওয়া বিবার্তাকে বলেন, এলাইতে যে শীত পইচ্ছে, হামার মরণ বাহে। প্যাটোত ভাতে জুটে না, আর গমর কাপড়! দয়া করি কাহো যদি দান করে তাহালে ঠাণ্ডাখান কাটিবার পারিম। মোর তো কাহো নাই যে কিনি দিবে। আর যায় আছে তায় তো দ্যাখে না।


এই শীত মৌসুমে শিশু, বৃদ্ধদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে শিশুদের ঠান্ডা জনিত রোগ যেমন, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি-কাঁশি, বমি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বয়স্কদের বাঁত ব্যথা এই ঠাণ্ডায় প্রকট আকার ধারণ করে।


শীতের পুরানো গরম কাপড়ের দোকানে শুরু হয়েছে উপচে পড়া ভিড়। জেলা, উপজেলা থেকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থায় সরকারের ত্রাণভাণ্ডার থেকে রংপুর বিভাগের আট জেলায় গড়ে চার হাজার করে কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কম্বলগুলো জনসংখ্যা অনুযায়ী বিতরণের অপেক্ষায় রয়েছে।


সুত্রমতে, আরো শীতবস্ত্র চেয়ে ঢাকায় ফ্যাক্সবার্তা পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসকগণ। এর মধ্যে নীলফামারীর জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন বিবার্তাকে কম্বলের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন।


তিস্তাসহ বিভিন্ন নদীর চর এলাকায় দেখা যায়, আগুনের কুণ্ডলি জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করার চেষ্টা করছে অসহায় পরিবারগুলো। শীতবস্ত্রের অভাবে বিপাকে অসহায় জনগোষ্ঠী। বেশি বিপাকে পড়েছে সহায় সম্বলহীন হতদরিদ্র পরিবারগুলো। পুরনো গরম কাপড়ের দোকানে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আজও সারাদিন ঘন কুয়াশায় ঢাকা আছে প্রকৃতি।


পশ্চিমা বাতাসে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় মানুষজন ঘরের বাইরে বের হতে পারছে না, রাস্তা-ঘাট ও হাট-বাজার অনেকটাই ফাঁকা। মাঠেও কাজ করার সাহস পাচ্ছেনা কৃষি শ্রমিকরা।


গত শনিবার থেকে এ অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায় যা আরো কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে।


বিবার্তা/সুমন/জেমি/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com