শিরোনাম
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে আজ, শিবিরে আতঙ্ক
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০১৯, ০৯:৫৭
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে আজ, শিবিরে আতঙ্ক
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

কক্সবাজার থেকে শরণার্থী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) শুরু হবার কথা রয়েছে।


এই খবরে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসকারী শরণার্থীরা আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে বাস করা শরণার্থীরা।


তারা বলছেন, মিয়ানমার তাদের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন করতে চায় না তারা।


উখিয়ায় ১৩ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা খিন মং। একইসাথে রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের পক্ষে কাজ করা সংগঠন রোহিঙ্গা ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।


খিন মং জানান, রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি এই মুহূর্তে স্বাভাবিক। ইউএনএইচসিআরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জোর করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে তারপরও তাদের মধ্যে এক ধরণের ভয় কাজ করছে যে, তাদেরকে জোর করে ফেরত পাঠানো হবে কিনা।


২০১৭ সালের ২৫ অগাস্টের পর মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন কয়েক লাখ রোহিঙ্গা।


এরপর জাতিসংঘসহ নানা সংস্থার নানা উদ্যোগের পর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সরকারের আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।


এবার আবারও ২২ অগাস্ট প্রত্যাবাসনের একটি সম্ভাব্য তারিখ মিয়ানমারের তরফ থেকে প্রকাশের পর বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশন জানায়, প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে ২২ অগাস্ট ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কাজ চলছে।


রোহিঙ্গা নেতা মিস্টার খিন মং বলেন, প্রত্যাবাসন নিয়ে এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা শিবিরের কেউই কোনো ধরণের মন্তব্য করতে চায় না। এমনকি যেসব পরিবার প্রত্যাবাসনের তালিকায় রয়েছে তারা এ বিষয়ে খোলাখুলি ভাবে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছে।


তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা জানিয়েছে দিয়েছে যে তারা ফেরত যেতে চায় না।


তিনি আরো বলেন, মিয়ানমার সরকার যে ভেরিফিকেশন কার্ডের কথা বলছে তা আসলে নিতে চান না তারা। এমন কার্ড বিদেশিদের দিয়ে থাকে মিয়ানমার সরকার। এর পরিবর্তে মিয়ানমারের বৈধ ও পূর্ণ নাগরিকত্বের স্বীকৃতি চান তারা।


তার দাবি, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের বসতবাড়ি ফিরিয়ে দিতে হবে। সাথে তাদের যেসব ঘরবাড়িসহ সব ধরণের সম্পত্তি অন্যরা দখল করে নিয়েছে সেগুলো উদ্ধার করে ফেরত দিতে হবে। আর এসব দাবি নিশ্চিত হলেই স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে রাজি তারা।


রোহিঙ্গা শিবিরের আরো দুই বাসিন্দা একই ধরণের কথা জানিয়েছেন।


প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিয়ানমার সরকার তাদের দাবি মেনে না নিলে ফেরত যেতে চান না তারা।


ওই বাসিন্দা বলেন, "২২ তারিখে ন। আরার কার্ড, আরার রোহিঙ্গা মানি লইলে আরা যাইয়ুম দি। আরার ক্ষতিপূরণ ব্যাককান দি চাইলে, আরা যিন হইর, হেনদি ওরে যাইলে, তয় আরা যাইয়ুম। নইলে আরা ন যাইয়ুম।"


"বিহানে দিলে সন্ধ্যায় যাইয়ুম। অহন দিলে অহন যাইয়ুম," তিনি বলেন।


যাদেরকে প্রত্যাবাসিত করার জন্য তালিকাভূক্ত করা হয়েছে তারা স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে চান কিনা তা জানতে ওই রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন, ইউএনএইচসিআরসহ সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা।


তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যাবাসনের এই তালিকায় থাকা এক নারী রোহিঙ্গা শরণার্থী জানান, ভয়ে সাক্ষাৎকার দিতেই যাননি তিনি।


রোহিঙ্গাদের এমন আতঙ্কের বিষয়ে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশে কর্মরত ৬১টি স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা বুধবার এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছে।


যাতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছা ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সূত্র: বিবিসি


বিবার্তা/তাওহীদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com