শিরোনাম
বিএনপির দৃষ্টিতে ভয়াল ২১ আগস্ট
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০১৯, ০৯:৫১
বিএনপির দৃষ্টিতে ভয়াল ২১ আগস্ট
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি জঘন্যতম হৃদয়বিদারক ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে দেড় দশক আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সংগঠিত হয় নারকীয় এ হামলার ঘটনা।


রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন-ঘটনাটি দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে জন্ম দিয়েছে অবিশ্বাস এবং চিরকালীন শত্রুতা।


তবে বিএনপি বিশ্লেষকদের এমন মতের সঙ্গে একমত নয়। ঘটনার দেড় দশক পর এসেও দলটির নেতারা বলছেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ঘটনা ছিল একটি সন্ত্রাসী ঘটনা। সে ঘটনার সঙ্গে জোট সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।ঘটনার পর তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে। কিন্তু ওই ঘটনার শিকার আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।


গত সোমবার (১৯ আগস্ট) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরবলেন, ‘দেড় দশক আগে ২১ আগস্ট যে ঘটনাটি ঘটেছিল, সেটি ছিল একটি সন্ত্রাসী ঘটনা। এ ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা করি, ঘৃণা করি, নিন্দা জানাই, জানিয়েছি, জানাচ্ছি এবং এ ধরনের ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, নেজন্য সবাইকে সচেতন থাকা দরকার।’


এদিকে ঘটনার ১৪ বছর পর গত বছর ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালত থেকে যে রায় দেয়া হয়, সে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়। এ হামলা ছিল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা।’


ওই রায়ের পর বিশ্লেষকরা বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো বর্বরোচিত রাজনৈতিক পাশবিকতার সঙ্গে কোনো বিচারেরই তুলনা চলে না। বিএনপি এ থেকে কখনো নিস্তার পাবে না।


এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখানে বিএনপি দায়ী হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ সন্ত্রাসী ঘটনা। যারা দোষ করেছে, সঠিকভাবে তদন্ত করে তাদের বের দরকার। যে তদন্ত হয়েছে, সেটি সঠিক হয়নি বলে আমরা মনে করি। আর যাদের সাজা দেয়া হয়েছে, তাদের সম্পর্কে যেভাবে এসেছে, মুফতি হান্নান যে স্টেটমেন্ট দিয়েছে, এগুলো তো রাজনৈতিক। তারেক রহমানকে জড়িয়ে ওটাকে রাজনৈতিককরণ করা হয়েছে।’


বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বচন্দ্র রায় বলেন, ‘যারা লেখেন, সব সময়ই বিজয়ীর পক্ষে লেখেন। বিজয় কীভাবে এলো- সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো ইতিহাস বিজয়ীর পক্ষে যাবে। হিটলার যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভ করত, তাহলে হিটলারের পক্ষেই ইতিহাস লেখা হতো। বিএনপিকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। দেশে যখন গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরবে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার নিশ্চিত হবে, তখন বানানো ইতিহাস পরিবর্তন করা হবে।’


তিনি বলেন, ‘সে কারণেই আজকের ঘটনা দিয়ে কিছু পরিমাপ করতে পারব না। নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ দিয়ে যখন সিদ্ধান্তে আসতে পারব, সেদিন প্রকৃত চিত্রটা ফুটে উঠবে। আজ আমি অনেক কথাই বলতে পারব। কিন্তু অনেক কথা বলা আমার জন্য নিরাপদ নয়।’


বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে হিংসা-প্রতিহিংসা থাকলেও দেশের প্রধান দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। দুজন দুজনের ব্যাপারে খুব একটা কঠিন হননি। ১৯৯১-১৯৯৬ আমলে শেখ হাসিনার সঙ্গে খালেদা জিয়ার এবং ১৯৯৬-২০০১ আমলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার ব্যবহার খুব একটা কঠিন ছিল না। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে সংঘটিত ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সব হিসাব বদলে দেয়। এ গ্রেনেড হামলার কারণেই তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না।


কিন্তু বিশ্লেষকদের এ মতকেও স্বীকার করছেন না বিএনপি।


বিএনপি নেতা গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ‘রাজনীতিতে বিভক্তি রেখাটা ২১ আগস্টের ঘটনা নয়। বিভক্তি রেখাটা শুরু হয়েছে ভিন্ন মতাবলম্বীদের অস্তিত্ব বা তাদের কর্মকাণ্ডে অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে। ২১ আগস্টের ঘটনাটা অনাকাঙ্ক্ষিত। কোনো নাগরিকই হত্যাকাণ্ড পছন্দ করে না, করার যৌক্তিক কারণও নেই। কিন্তু এ ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।’


তবে বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন, প্রতিটি অপরাধের মানদণ্ড অনুযায়ী বিচার করারও সুযোগ আছে। যে কোনো ব্যক্তিকেই বিচারের আওতায় এনে বিচার করা যায়। সুতরাং ২১ আগস্ট ঘটনারও বিচার হওয়া উচিত। কারণ এ মর্মান্তিক ঘটনা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে একটা আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে খুন, গুম, অপহরণের মতো যেসব বিষয় সংযোজন হচ্ছে, সেগুলোও জনগণের কাছে কাম্য নয়।


বিবার্তা/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com