শিরোনাম
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা : আরব দুনিয়ায়
প্রকাশ : ০২ মে ২০১৮, ১৭:৫৫
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা : আরব দুনিয়ায়
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

২০১৩ সালের জুলাই মাসে মিশরের সামরিক হর্তাকর্তারা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মেদ মুরসিকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করেন। অভিযোগ। মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য মুরসি মিশরকে একটি মধ্যমপন্থি ইসলামি দেশে পরিণত করতে চান।


মুরসির সমর্থকরা মুরসির অপসারণের বিরুদ্ধে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে প্রতিবাদ জানান – যেমন পূর্ব কায়রোর নসর সিটি এলাকার রাবা-আল-আদাউইয়া চত্বরে।
১৪ই আগস্ট তারিখে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রাবা-আল-আদাউইয়া চত্বরে একটি বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করার জন্যে গুলি চালালে প্রাণ হারান ৮০০-র বেশি মানুষ, আহত হন হাজার জনের বেশি।


আলোকচিত্রী মাহমুদ আবু জায়িদ ওরফে শওকান সেদিন অকুস্থলে ছিলেন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের ছবি তুলছিলেন। কেন তিনি ছবি তুললেন, এ ''অপ্রাধে'' তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে – অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভাষায় – ন'টি ‘‘ভূয়া অভিযোগে'' মামলা করা হয়, যার মধ্যে হত্যাও ছিল। সেই থেকে শওকান কারারুদ্ধ রয়েছেন। তাঁর মামলার শুনানি ৪০ বার পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।


শওকান সম্প্রতি ইউনেস্কোর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার পর মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘‘গভীর দুঃখ'' প্রকাশ করেছে যে, ‘‘সন্ত্রাস ও অপরাধ সংক্রান্ত কার্যকলাপের দায়ে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে'' সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।


অপ্রিয় সাংবাদিকদের ভাগ্যে যা জোটে


শওকানের ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, মিশর কেন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স সংগঠনের প্রকাশিত সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংক্রান্ত তালিকায় ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬১তম স্থান অধিকার করেছে।


রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স সংগঠনের গণসংযোগ কর্মকর্তা ক্রিস্টফ ড্রায়ার বলেন, মিশরের প্রশাসন প্রধানত দু'টি কারণে অপ্রিয় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়ে থাকে : ‘‘সরকার এখন নিজের প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত। বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংকট এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রশাসন কোনো ধরনের সমালোচনাকে আমলে নিতে চায় না। মুবারকের কী ঘটেছিল, সকলের তা স্মরণে আছে এবং তা আরো একবার ঘটতে দিতে সরকার রাজি নয়।''


তলানি


সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আরব দেশগুলোর স্থান সাধারণভাবে নিচের দিকে। তাদের মধ্যে সেরা হলো টিউনিশিয়া। উত্তর আফ্রিকার এই দেশটি রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের তালিকায় ৯৭তম স্থান অধিকার করেছে। আরব দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী কাতার কিন্তু রয়েছে ১২৫তম স্থানে – অথচ কাতার আল-জাজিরার দোহাই দিয়ে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে নিজেদের ''উদারপন্থি সাংবাদিকতার ঘাঁটি'' বলে প্রচার করে থাকে। তারপরও আরব উপদ্বীপে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কাতারের অবস্থানই সবচেয়ে ভালো। কেননা বাহরাইনকে পাওয়া যাবে ১৬৬তম স্থানে, ইয়েমেনকে ১৬৭-তে ও সৌদি আরবকে ১৬৯তম স্থানে।


লক্ষণীয় যে,সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত নয় – তালিকায় আরব বিশ্বের দরিদ্রতম দেশ ইয়েমেনের স্থান ধনী দেশ সৌদি আরবের উপরে। তিন বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলা সত্ত্বেও ইয়েমেনে সাংবাদিকদের পরিস্থিতির অবনতি ঘটেনি, বরং তার উলট। তথাকথিত ‘আরব বসন্ত' শুরুর ঠিক পরে, অর্থাৎ ২০১২ সালে ইয়েমেনে তৎকালীন তালিকায় ১৭১তম স্থান অধিকার করেছিল; দেশটি আজ তার চার ঘর উপরে৷


রাজনৈতিক সংস্কৃতি


সংবাদপত্রের স্বাধীনতা একটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিফলন৷ অপ্রিয় ও অপ্রীতিকর খবরাখবর রোধ করাই অধিকাংশ আরব দেশের সরকারবর্গের লক্ষ্য। যেমন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের লেখক ও সংবাদকর্মী আহমেদ মনসুর ২০১১ সাল থেকে কারাবাস করছেন। কেননা তিনি নাকি দেশের প্রেসিডেন্ট খলিফা বিন জায়িদ আল নাহিয়ানের অবমাননা করেছেন।


মনসুরকে প্রথমে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় এবং পরে রাজক্ষমা করা হয়। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে তাঁকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। এবার অভিযোগ, তিনি নাকি জাতীয় ঐক্যকে বিপন্ন করেছেন। এর স্বল্পদিন আগে মনসুর নিকটপ্রাচ্যে যাবতীয় রাজনৈতিক বন্দির মুক্তির দাবি জানিয়ে প্রকাশিত একটি আবেদনে স্বাক্ষর করেছিলেন এবং আমিরাতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে ফরাশি ল্য মঁদ দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘‘ওরা যাবতীয় স্বাধীন কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে চায়।'' সেটাই ছিল তাঁর অপরাধ। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে মনসুরের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা ছিল – অর্থাৎ তিনি গ্রেপ্তার হবার এক বছর পরে। কিন্তু অভিযোগের বয়ানই নাকি এ পর্যন্ত দাখিল করা হয়নি।


নিপীড়নের যুক্তি হল ‘দেশের স্থিতি'


আরব বসন্ত শুরু হবার সাত বছর পরে আরব দেশগুলোর সরকারবর্গ জনসাধারণকে মোটামুটি আবার নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলতে পেরেছে। আইনশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য নাকি কড়া শাসন ছাড়া আর কোনো পন্থা নেই - এই হলো তাঁদের যুক্তি। এটা অবশ্যই লোকদেখানো যুক্তি। কেননা আরব বসন্তই প্রমাণ করে দিয়েছে যে, বিভিন্ন দেশের ‘স্থিতিশীল' প্রশাসন স্রোতের মুখে কুটোর মতো ভেসে গেছে। আরব বসন্তের সাত বছর পরেও তা ঘটতে পারে। কেননা মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও অসন্তোষ একই রয়ে গেছে। সূত্র : ডয়চে ভেলে


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com