শিরোনাম
মিয়ানমারে গণমাধ্যম কতোটা ''গণ''
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০১৭, ১৮:২৩
মিয়ানমারে গণমাধ্যম কতোটা ''গণ''
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মিয়ানমার নামে দেশটি প্রায় ছয় দশক ছিল সামরিক জান্তার শাসনাধীনে। এই দীর্ঘ অন্ধকার যুগ পেরিয়ে হালে দেশটিতে একধরনের গণতন্ত্র এসেছে বলে বয়ান করা হচ্ছে। এই তথাকথিত গণতন্ত্রে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যমের অবস্থা কী? এ নিয়ে জার্মান বেতার ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন :


সামরিক জান্তার সময় সব গণমাধ্যমই ছিল সরকার বা সেনানিয়ন্ত্রিত। ২০১১ সাল পর্যন্ত সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন সংবাদপত্রগুলো সবই সরকার কঠিন নিয়মে আবদ্ধ ছিল। কোনো পত্রিকায় কোনো প্রতিবেদন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না। ২০১১ সালের জুনে এই নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হয়। গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ ও নিবন্ধন বিভাগ বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারে ৩১টি দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশের অনুমোদন পায়, যার মধ্যে ২৪টি স্থানীয় ভাষায়।


তবে ২০১১ সালের পরও অনেক সাংবাদিককেই জেল খাটতে অথবা জরিমানা গুনতে হয়েছে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য।


গত অক্টোবরের রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনার পর এক গবেষণায় দুই সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের দু'টি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর বিশ্লেষণ করা হয়। এর একটি হলো ''গ্লোবাল নিউ লাইট অফ মিয়ানমার'', যেটি দেশটির সবচেয়ে পুরোনো পত্রিকা ''নিউ লাইট অফ মিয়ানমার''-এর আন্তর্জাতিক সংস্করণ এবং সরকারনিয়ন্ত্রিত।


অন্যটি ''মিয়ানমার টাইমস''। এটি ব্যক্তিখাতের এবং একমাত্র বিদেশি মালিকানার পত্রিকা। এই ঘটনায় এই পত্রিকার রিপোর্ট ব্যাপক আলোচিত হয়েছে।


গবেষণাটি ছিল, অক্টোবরের ঘটনার পর রোহিঙ্গাদের কিভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। এছাড়া চিত্রায়িত করার সময় কাদের বক্তব্য ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও রোহিঙ্গাদের চিত্রায়নের জন্য ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল, মোটা দাগে ‘ভিক্টিম' বা ‘অপরাধী' – এই দু'টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।


দেখা গেছে, ''গ্লোবাল নিউ লাইট অফ মিয়ানমার'' পত্রিকায় যতবার রোহিঙ্গাদের বিষয়টি এসেছে, ততবারই তাঁদের অপরাধী হিসেবেই তুলে ধরা হয়েছে। আবার, ''মিয়ানমার টাইমসে'' প্রায় ৬০ ভাগ সময় ভিক্টিম হিসেবেই চিত্রায়িত হয়েছেন রোহিঙ্গারা।


''গ্লোবাল নিউ লাইটে'' এমনও খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, দুষ্কৃতিকারীরা ঘরে আগুন জ্বালিয়ে চলে গেছে। তবে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, পত্রিকাটির যে সব রিপোর্ট গবেষণার আওতায় ছিল, তার কোথাও ‘রোহিঙ্গা' শব্দটি ছিল না। এঁদের ‘বাঙালি সেটলার' বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।


এই ‘রাজনীতি' পরিষ্কার। বোঝাই যায়, এটা গণমাধ্যমের নীতি নয়, সরকারি নীতি। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ রিপোর্টেই তারা ইরাবতী বা অন্যান্য সরকারি নিউজ এজেন্সির খবর হুবহু ছাপিয়ে দিচ্ছে।


অন্যদিকে,'' মিয়ানমার টাইমস'' আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা ব্যাপক আলোড়ন জাগায় আন্তর্জাতিক মহলে। তবে মিয়ানমারের ভেতরে এই পত্রিকাটি তেমন কেউ পড়ে না। এর কারণ পত্রিকাটি তুলনামূলক নতুন। তাই সরকারি ভাষ্যগুলোই অন্যান্য এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছায়।


গবেষণায় এ-ও দেখা যায়, ''গ্লোবাল নিউ লাইট '' প্রায় ৯১ শতাংশ বক্তব্য প্রকাশ করেছে সরকারপন্থী ও রোহিঙ্গাবিরোধী গোষ্ঠীর। অন্যদিকে, ''মিয়ানমার টাইমসের'' বেলায় সেটি ছিল ৫৮ শতাংশ।


গবেষণার সীমাবদ্ধতার জায়গায় গবেষক লিখেছেন যে, বার্মিজ ভাষায় দক্ষতা না থাকায় সে ভাষার কোনো পত্রিকা বিশ্লেষণ করা যায়নি।


সরকারি পত্রিকায় যেভাবে ঢালাওভাবে ঘটনাটি প্রকাশ করেছে তা একটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্রহীনতার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হয়। সব মিলিয়ে রাষ্ট্রহীনতার ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক চিত্রই বোধ হয় রোহিঙ্গাদের।


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com