শিরোনাম
বিশ্বের কনিষ্ঠতম সাংবাদিক
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০১৭, ২০:১১
বিশ্বের কনিষ্ঠতম সাংবাদিক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ফিলিস্তিনি মেয়ে জান্না জিহাদ আয়াদ বর্তমান বিশ্বের কনিষ্ঠতম সাংবাদিক। ইতিমধ্যে এর স্বীকৃতিও পেয়েছে সে। এই মাসের মাঝামাঝি সময়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের এক অনুষ্ঠানে 'সেরা সাংবাদিক' হিসেবে তার হাতে ‘ইন্টারন্যাশনাল বেনেভোলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। বিশ্বব্যাপী মানবকল্যাণ ছড়িয়ে দিতে যারা কাজ করছে, তাদের এই পুরস্কারটি দেয় তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেই পুরস্কার পেয়ে এখন রীতিমতো তারকা বনে গেছে জান্না জিহাদ।


তিন বছর ধরে সাংবাদিকতা করে আসছে এই ফিলিস্তিনি মেয়ে। সাত বছর বয়সে প্রথম হাতে তুলে নিয়েছিল হ্যান্ডি ক্যামেরা। সেই থেকে শুরু।


পশ্চিম তীরের নবি সালেহ গ্রামে বাস করে জান্না। সম্প্রতি তুরস্কের আনাদলু নিউজ এজেন্সিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সে বলে, ‘আমি বিশ্ববাসীর কাছে একটি বার্তাই পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি যে, ফিলিস্তিনের শিশুরা অবিচারের শিকার। এই ভূখণ্ডটির নাম ফিলিস্তিন এবং এখানকার মানুষরা হচ্ছে ফিলিস্তিনি। তারা সন্ত্রাসী নয়।’


সাহসী এই মেয়ে আরো বলে, ‘আমরা ইসরায়েলি দখলদারিত্বে অবরুদ্ধ আমাদের অধিকারের জন্য কথা বলছি। ফিলিস্তিনের শিশুরাও বিশ্বের অন্য অঞ্চলের শিশুদের মতো। তাদের দরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার।’


যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া জান্না ইংরেজি ও আরবি - দুই ভাষায়ই পারদর্শী। তার ফেসবুক পেজে বর্তমানে অনুসারীর সংখ্যা আড়াই লাখের মতো। সে জানায়, প্রতিদিনই নিজেদের আত্মীয়ের রক্ত দেখতে হয় ফিলিস্তিনিদের। ইসরায়েলি চেক পয়েন্টের কাছে খেলতে গেলেই তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।


জান্নার চাচা একজন আলোকচিত্রী এবং তার কাছ থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে ভিডিও করা শুরু করে সে। এর আগে আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ১০ বছর বয়সী এই মেয়ে বলে, ‘ফিলিস্তিনিদের কথা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা সাংবাদিকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমি কেন সেই কাজটি করি না এবং বিশ্বকে কেন আমি দেখাই না যে, আমার গ্রামে কী হচ্ছে।’


জান্নার বয়স যখন সাত তখন একবার দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বসবাসরত ইসরায়েলিদের আক্রমণে তার এক চাচা রুশদি তামিমি এবং চাচাতো ভাই মুস্তফা তামিমি প্রাণ হারায়। রুশদিকে টিয়ার গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এবং মুস্তফাকে কিডনি বরবার গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনাই তার সাংবাদিকতায় আসার পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে বলেও জানায় সে।


তার ভাষায়, ‘যখন ইসরায়েলি সেটলাররা আক্রমণ করে, আমরা একটি খামারে ছিলাম। ইসরায়েলি সেনারা টিয়ার গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে আমার দাদী অসুস্থ হয়ে পড়েন।’


পরিবারের সঙ্গে যখনই জেরুসালেম, হেবরন, নাবলুস, জর্দানসহ যেখানেই বের হয়েছে সেখানেই মায়ের আইফোন ব্যবহার করে ভিডিও ধারণ করেছে জান্না। সেসব ভিডিওতে উঠে এসেছে চেকপয়েন্টে শিশুদের আটকের দৃশ্য। বিক্ষোভ সমাবেশ। ফিলিস্তিনি শিশুদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা।


শিশু হওয়ার কারণে এসব করতে গিয়ে সুবিধা পেয়েছে এই জান্না। কারণ প্রাপ্তবয়স্ক বা পেশাদার সাংবাদিক এসব ছবি ধারণ করলে তার ক্যামেরা কেড়ে নেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু জান্নার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না। ফেসবুকে সে নিজেকে একজন সংবাদকর্মী হিসেবেই পরিচয় দেয়। বিক্ষোভ ও ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সংঘাতে অংশ নেয়া তার ভিডিও রয়েছে ফেসবুকে। তার রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় আরবি ও ইংরেজি ভাষায়।


জান্না বলে, ক্যামেরাই আমার অস্ত্র। বন্দুকের চেয়েও তা শক্তিশালী। আমি এগুলো অল্প মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি। তারা তা ছড়িয়ে দেয় অন্যদের কাছে।


জান্নার মা নাওয়াল তামিমি মেয়েকে নিয়ে গর্ব করলেও তার জীবন নিয়ে সঙ্কিত তিনি।


পশ্চিম তীরের অবরুদ্ধ অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে এই ক্ষুদে সাংবাদিক বলে, ‘ইসরায়েলি ব্যারিকেড ও চেকপয়েন্টের কারণে আমার প্রতিদিন স্কুলে যেতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। অথচ তা মাত্র ২০ মিনিটের পথ।’


তুরস্কে পুরস্কার গ্রহণ শেষে জান্না বলে, ‘ফিলিস্তিনিদের বার্তা তুরস্ক এবং বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে পেরে আমি গর্বিত। এই পুরস্কার পেয়ে আমি খুশি হলেও আমার দুঃখ হচ্ছে, ফিলিস্তিনে অনেক শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে। আমি বিশ্ববাসীকে জেগে ওঠার আহ্বান জানাই। ফিলিস্তিনি শিশুদের বিরুদ্ধে কী হচ্ছে, দেখুন। আমরা স্বাধীনতা শান্তি ও ন্যায়বিচার চাই। আমরা রক্তপাতহীন একটি পৃথিবী চাই। আমরা আশা হারাবো না। একদিন আমাদের ভূখণ্ড শত্রুমুক্ত হবেই।’


কেমন পৃথিবী দেখতে চাও - এমন প্রশ্নের জবাবে ফিলিস্তিনি এই মেয়ে শিশুসুলভ ভঙ্গিতে বলে, ‘আমি একটি গোলাপী পৃথিবী দেখতে চাই।’ সূত্র : আনাদলু ও আল জাজিরা


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com