
মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর অভিজ্ঞ এক সাংবাদিক। বেতন না পেয়ে হতাশায় রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) অফিসের নিউজরুমেই আত্মহত্যা করেন তিনি।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেতনের অভাবে আত্মহত্যা করা ভারতীয় ওই সাংবাদিকের নাম টি কুমার। ৫৬ বছর বয়সী এই সাংবাদিক ভারতীয় বার্তাসংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব ইন্ডিয়ায় (ইউএনআই) ফটো জার্নালিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একইসঙ্গে টি কুমার ইউএনআই’র তামিলনাড়ু ব্যুরো প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করছিলেন।
রবিবার সন্ধ্যায় অফিসের নিউজরুমে টি কুমার আত্মহত্যা করেন এবং পরদিন সোমবার অন্য সহকর্মীরা তার মরদেহ উদ্ধার করেন।
এদিকে টি কুমারের এই মৃত্যুতে ভারতের সাংবাদিকতা ও সার্বিক ব্যবস্থপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একইসঙ্গে মাসের পর মাস বেতন ও বকেয়া না পাওয়া এবং সাংবাদিকদের যে বৃহত্তর আর্থিক সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হতে হয়, সেটি নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।
বার্তাসংস্থা ইউএনআই’র কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, গত ৬০ মাস ধরে প্রতিষ্ঠান তাদেরকে কোনো বেতন পরিশোধ করেনি। এক বিবৃতিতে বার্তাসংস্থাটির কর্মীরা আরো জানিয়েছেন, নিয়মিত বেতন না পাওয়ার কারণে তীব্র আর্থিক সংকটের মধ্যে ছিলেন টি কুমার।
অবশ্য ইউএনআই’র এডিটর-ইন-চিফ অজয় কুমার কাউল বেতন না পেয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানের এক সাংবাদিকের আত্মহত্যার ঘটনাকে ‘মর্মান্তিক’ বলে উল্লেখ করেছেন। একইসঙ্গে ‘পুলিশের এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা উচিত’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে তিনি বলেন, ‘আমরা যতোটা জেনেছি, আত্মহত্যার আগে টি কুমার কোনো সুইসাইড নোট রেখে যাননি। (কোনো সমস্যা থাকলে) আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কারণ হিসেবে সেখানে তিনি আর্থিক চাপ বা বেতন বকেয়ার মতো কিছু উল্লেখ করে যেতেন।’
তার দাবি, সাংবাদিকের আত্মহত্যার ঘটনার পেছনে কারণ হিসেবে বেতন বাকি থাকার কথা বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে। তিনি আরো দাবি করেন, ‘কিছু মানুষ ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। এটি কি আত্মহত্যা নাকি অন্য কিছু? আমরা চাই পুলিশ এটি ভালোভাবে তদন্ত করুক।’
অজয় কুমার কাউলের ভাষায়, ‘দুঃখজনক এই ঘটনা ঠিক কী কারণে ঘটলো সেটির যথাযথ কারণ ও প্রেক্ষাপট আমরাও জানতে চাই।’
টি কুমারের মৃত্যুর বিষয়টি গত সোমবার সকালে টুইটারে প্রথম প্রকাশ করেছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক বিশ্ব বিশ্বনাথ। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘ভারতের অন্যতম শীর্ষ ও অগ্রগামী বার্তাসংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব ইন্ডিয়ায় একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে খুব অল্প বয়সে যোগ দিয়েছিলেন টি কুমার। কিন্তু নিজের জ্ঞান ও কর্ম দক্ষতার কল্যাণে তিনি ইউএনআইয়ের তামিলনাড়ু ডিভিশনের ব্যুরো প্রধান হয়ে যান।’
এরপরই বার্তাসংস্থাটির কর্মীদের বেতন না পাওয়ার বিষয়টি সামনে আনেন বিশ্বনাথ। তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ইউএনআই গত ৬০ মাস ধরে কর্মীদের বেতন দিচ্ছে না। ইউএনআইয়ের সকল কর্মীরা কিস্তির মাধ্যমে তাদের মাসিক বেতন পাচ্ছেন। কিন্তু সেই কিস্তিও নিয়মিত পরিশোধ করা হয় না।’
তিনি অভিযোগ করেন, কর্মীদের মানসিক চাপের মধ্যে ফেলছে ইউএনআই। বেতন না দেয়া এবং মানসিক চাপের কারণে একজন চমৎকার সাংবাদিক ও খুবই ভালো একজন মানুষ আত্মহত্যা করলেন।
বিশ্ব বিশ্বনাথ আরো বলেন, ‘টি কুমার অন্য কোথাও না, চেন্নাইতে অবস্থিত ইউনাইটেড নিউজ অব ইন্ডিয়ার তামিলনাড়ু অফিসের সেন্ট্রাল হলে আত্মহত্যা করেছেন। তার পুরো জীবনটা যে ইউএনআই ধ্বংস করেছে এটি তিনি অনুভব করেছিলেন এবং এখানে আত্মহত্যা করা সেটিরই ইঙ্গিত।’
বিবার্তা/ইমরান
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]