শিরোনাম
জীবনপাতার অনেক খবর
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৩১
জীবনপাতার অনেক খবর
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার
প্রিন্ট অ-অ+

নদীতীরের বাসিন্দা ইমদাদ ও নওশীন ৫ ছেলে এক মেয়ে নিয়ে কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। জীবনের সঙ্গে পাল্লা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল এ দম্পতিকে। যোগানের চেয়ে চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছিল। বার বার ব্যর্থ হচ্ছিলেন জীবনের কাছে। এক পর্যায়ে কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন নওশীন - গৃহকর্মীর চাকরি নিয়ে বিদেশে চলে যাবেন তিনি। বিদেশে নারী শ্রমিদের করুণ পরিণতির ইতিহাস জেনেও এক পর্যায়ে দুবাই চলে যান নওশীন।


নওশীন বেগম দুবাই থেকে এক বছর আগে দেশে ফিরেন। কিন্তু সংসারের অভাব যায় না। বাধ্য হয়ে গ্রামের এক বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেন।


মাঝে মাঝে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো। পেটের আহারের যোগান না থাকলে ভালবাসার পুঁজি দিয়ে কতদিন আর চলে। সহ্যক্ষমতারও তো শেষ আছে।


বসন্তের রাত ছিল সেদিন। মৃদু উষ্ণতার মাঝে হালকা শীতল পরশ। জোৎন্সার আঁচলে ঢাকা পৃথিবী। আকাশের তারাগুলো মাতামাতি করছে। এমন রাতেও ইমদাদ আর নওশীনের মধ্যে বাধল তুমুল ঝগড়া। ঝগড়ার ধারাবাহিকতাও প্রতিদিনের স্বাভাবিক নীতির বিপরীত নয়। কেউ ঝগড়া থামাতেও এগিয়ে আসছে না। কারণ তাদের সন্তান ও প্রতিবেশীরাও তাদের ঝগড়ার মধ্যে আর বিশেষ কিছু পায় না। তাই আজকাল তারা ঝগড়া থামাতেও আসে না।


সকালে দম্পতির মেয়ে আলেয়া তার মা-বাবার ঘরের দরজা খুলতে না পেরে বেড়ার ছিদ্র দিয়ে মায়ের গলাকাটা মরদেহ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে। ঘরে ঢুকে দেখে ঘরের চালের সঙ্গে ঝুলছে বাবার লাশ।


এভাবেই রাষ্ট্র, সমাজ ও মানবতাবাদীদের দৃষ্টির আড়ালে হারিয়ে যায় নিভৃত পল্লীর হতদরিদ্র বহু কৃষক-কৃষাণীর তাজা প্রাণ। কারণে-অকারণে স্তব্ধ হয়ে যায় ধুলো-কাদার সঙ্গে আলিঙ্গণ করা কর্মচঞ্চল জীবনগুলো, যাদের দেহের ঘামকে পুঁজি করে সজীব থাকে সমাজ, রাষ্ট্র।


আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন তাদেরকে শুধুমাত্র কৃষকদের জন্য বিশাল বিশাল উক্তি উচ্চারণ করতে দেখা যায়। তাদের দুঃখ-বেদনার গ্লানি ও ধুলোবালি-কাদায় মাখা জীবনযাত্রা শুধুমাত্র জাদুঘরের প্রদর্শনী আর ব্যানার-ফেস্টেুনে স্থান পায়, তৈরি হয় মোটা অংকের টাকা খরচ করে দৃষ্টিনন্দন চিত্রকর্ম, কোটি টাকা খরচ করে করুণ কাহিনীসমৃদ্ধ চলচ্চিত্র। তাদের নিয়ে রচিত আবেগপূর্ণ গানের মধ্যে করুণ সুর দিয়ে শুধু শ্রুতিমধুর করা হয়। যা শুরু ক্ষণিকে আবেগের খোরাক দেয়ার কাজেই ব্যবহার হয়ে থাকে।


কেউ সামান্য আহত হলে সুশীল সমাজ ও মন্ত্রীদের হাসপাতালে কোলাহল পড়ে যায়। আবার কারো জীবন বিনাশ হলেও রাষ্ট্র ও সমাজের কর্ণধারদের শ্রুতিযন্ত্র স্পর্শ করে না। কারো জ্বর-পেটের ব্যথা গণমাধ্যমকে এমন নিবিড় করে আপন করে নেয় তা গণমাধ্যম তাকে ছাড়তেই পারে না। আবার কারো জীবন পতনের খবরও গণমাধ্যম পর্যন্ত আসার সৌভাগ্য লাভ করে না। যে জীবন গুলো সহস্র জীবন টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে নিয়োজিত সেগুলোই ঝরে যায় নীরবে।


বিদায়ের বেলাও ভাল কাটে না তাদের। কোনো অভিজাত হাসপাতাল কিংবা কোনো বিলাসবহুল যান দুর্ঘটনায় নয়, প্রতিদিন খালের পাড়ে, ডোবার ধারে, ফসলের মাঠে অথবা পরিত্যক্ত কোনো স্থানে তাদের লাশের সন্ধান মেলে। কতগুলো জীবনের খবর রাখি আমরা! মূলত পরোক্ষভাবে শুধুমাত্র নিজের জীবনের খবরই রাখি আমরা প্রত্যেকে।


(বি.দ্র.: এ গল্পের চরিত্র ও স্থানের নাম রূপক, তবে গল্পটি বাস্তব জীবন হতে নেয়া)


বিবার্তা/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com