লাবুর পাখি খুব ভালো লাগে। এবার লাবু তৃতীয় শ্রেণীতে উঠেছে। ক্লাসের বন্ধুরা তাকে খুব ভালোবাসে। এমনকি ক্লাসের স্যার এবং মেমও খুব আদর করেন।
একদিন লাবু স্কুল থেকে বন্ধুদের সাথে বাড়ি আসার পথে রাস্তার পাশের একটা গাছের ডালের দিকে তার নজর গেল। দেখল, একটা দোয়েল পাখি গাছের ডালে বসে কাঁপছে। লাবু তার বন্ধুদের বললো, তোরা একটু দাঁড়া, আমি আসছি। এই বলে লাবু গাছটির কাছে গিয়ে দেখলো দোয়েল পাখিটির একটা পায়ে ক্ষত চিহ্ন। দোয়েল পাখিটা লাবুকে দেখেও উড়াল দিলো না, উড়ে যাবার ততোটুকু শক্তিও যেন নেই।
লাবু অসুস্থ দোয়েল পাখিটিকে সুস্থ করার জন্য নীড় থেকে তার বাড়িতে নিয়ে এলো। বাড়িতে এসে লাবু পাখিটির সেবাযত্ন শুরু করলো। মা বললেন লাবু, ভাত খাবে না?
লাবু বললো, মা এদিকে একটু আসো তো।
মা তাড়াতাড়ি লাবুর কাছে এসে দেখেন তার হাতে একটা দোয়েল পাখি। জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি পাখিটিকে ধরেছো কেন?
লাবু বললো, পাখিটি খুব অসুস্থ। আমি স্কুল থেকে আসার সময় একে অসুস্থ দেখে নিয়ে এলাম।
মা বললেন, খুব ভালো করেছো বাবা।
লাবু বললো, মা, আমি এই পাখিটিকে সেবা যত্ন করে আবার তার বাসায় দিয়ে আসবো।
বিকাল বেলায় লাবু পাখিটিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। ডাক্তার আঙ্কেল পাখিটির পায়ে একটা ব্যান্ডেজ করে দিলেন। কিছু ওষুধ ও ক্ষতস্থানে লাগানোর জন্য ক্রিম দিলেন।
দিনের বেলা যখন লাবু স্কুলে যায় সে পাখিটিকে তার মায়ের কাছে রেখে দিত। রাতের বেলা তাকে খাবার খাইয়ে নিজের কাছে রেখে দিত। লাবু পাখিটিকে খাঁচায় বন্দি না করে মুক্ত অবস্থায় রাখতো।
কয়েকদিন এভাবে চলে গেল। কয়েক দিন পর দোয়েল পাখিটা পুরো সুস্থ হয়ে গেল। এবার লাবু ভাবল, দোয়েলটিকে তার বাসায় দিয়ে আসবে।
লাবু সেখানে গিয়ে দেখে, দোয়েলের বাসাটা বাতাসে ভেঙে গেছে। লাবু পাখিটিকে সেখানে না রেখে তার বাড়িতে নিয়ে এলো। এবার সে পাখিটির জন্য একটা সুন্দর খাঁচা বানালো। কিন্তু সে পাখিটিকে সারাক্ষণ নিজের কাছে রাখে। গোসল করার সময় পাখিটিকেও গোসল করিয়ে দেয়। খাবার খাওয়ার সময়ও পাখিটিকে পাখির খাবার খাইয়ে দেয়।
একদিন লাবু তার স্কুল থেকে বাড়িতে দেরি করে এসেছিল। পাখিটি সারাদিন মুখে কিছু দেয়নি। খাঁচার মধ্যে সারাক্ষণ ছটফট করতে লাগল। লাবু যখন বাড়িতে এলো দোয়েল পাখিটি খুশিতে ডাকাডাকি করতে লাগল। যেন বলতে চায়, তাড়াতাড়ি আমাকে খাঁচার দরজা খুলে দাও।
লাবু স্কুলব্যাগটা রুমে রেখেই সরাসরি পাখিটির কাছে চলে এলো। পাখির প্রতি তার মমতা আরো বাড়তে লাগল।
একদিন লাবু তার মামার বাড়িতে বেড়াতে গেল। সাথে পাখিটিকেও নিয়ে গেল। লাবুর মামা-মামি পাখিটি দেখে তো হতবাক হয়ে গেল। লাবুকে জিজ্ঞেস করাতে সে বলল, শুধু পাখি নয় যে কোনো সৃষ্টির সাথে ভালো ব্যবহার করলে সে আপনার বন্ধু হয়ে যাবে।
লাবুর কথা শুনে মামা-মামি খুব খুশি হলো। লাবু পরের দিন তার পাখিটিকে নিয়ে বাড়িতে চলে এলো। তাদের বন্ধুত্ব আগের মতো অটল থাকলো।
বিবার্তা/হুমায়ুন/কামরুল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]