শিরোনাম
হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘ইউটোপিয়া’ এবং ‘ঘেরাটোপে আওয়ামী লীগ’
প্রকাশ : ১১ জুন ২০১৮, ১৪:৪১
হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘ইউটোপিয়া’ এবং ‘ঘেরাটোপে আওয়ামী লীগ’
হায়দার মোহাম্মদ জিতু
প্রিন্ট অ-অ+

সমাজ হলো এমন একখানা পাটাতন, যেখানে দাঁড়িয়ে যে-কেউ তার চিন্তার প্রয়োগ ঘটাতে পারেন। সেক্ষেত্রে এই প্রায়োগিক মাধ্যম হতে পারে শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণ এবং লেখনীসহ আরো হাজারো পন্থায়। হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘ইউটোপিয়া’ উপন্যাস লিখিত মাধ্যমের তেমনি এক পন্থা।


ইউটোপিয়া


মুক্তিযুদ্ধপূর্ব-পরবর্তী বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ঘটনাপ্রবাহের ফসল ‘ইউটোপিয়া’। যার অর্থগত দিক-‘এক ধরনের কল্পিত সামাজিক ব্যবস্থা। যেখানে সমাজতান্ত্রিক সাম্যাবস্থানে সকলের অধিকার সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিত থাকে’।


প্লট সংক্ষেপ


সাংবাদিক রণেশদার শেষকৃত্যে যোগ দিতে শহীদ মিনারে আসে মুইন ও হাসান। কিন্তু সময় পেরুলেও লাশ আসে না। ফলাফল, ‘অপেক্ষার বায়বীয়তায় শব্দ ছন্দে’ দু’জনেই পাড়ি জমান স্মৃতির উঠোনে।


উন্মোচিত হতে থাকে বর্তমান এবং তৎকালীন সময়ের পূর্ব-বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা, প্রতিবেশী দেশের দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের ক্ষুদ্র আয়োজনের কমিউন চিন্তাসমূহ।


কমিউন বৈপরীত্য


উপন্যাসের প্লট কাঠামো এবং মুইন চরিত্রের মধ্য দিয়ে লেখক চেষ্টা করেছেন কমিউন চিন্তা ধরতে।


কিন্তু চার বন্ধুর শুরু কমিউন চিন্তা শেষ পর্যন্ত একীভূত থাকে না। সময়ের প্রয়োজনে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং মুইনের একক চেষ্টায় চলে ক্ষুদ্র অঞ্চলে কমিউন আয়োজন।


আবার মুইনের দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তান বিদেশে বিনিয়োগকারী। যার মালিকানাও তাদের। কমিউন চিন্তা ব্যক্তিমালিকানাহীন। সে হিসেবে উপন্যাস কিংবা মুইনের পরিবার কোনোটাই পরিপূর্ণ কমিউন নয়।


বাম ও বিশ্বাসহীনতা


মুক্তিযুদ্ধে ভারত সহযোগিতা করেছিল রাষ্ট্র হিসেবে, ব্যক্তি বা গোষ্ঠী হিসেবে নয়। সে হিসেবে বাঙ্গালীর কৃতজ্ঞতাও রাষ্ট্রকেন্দ্রিক। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কিছু বাম কতিপয় আওয়ামী লীগ সদস্যকে অতর্কিত ঘেরাটোপে ফেলে ভারত সরকারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার প্রস্তাব দেয় ।


তারা চেয়েছিল স্বাধীন বাংলার মাটি ব্যবহার করে ভারতে হামলা চালাতে। অর্থাৎ, বিশ্বাসঘাতকতার সংস্কৃতি তাদের বেশ পুরনোই।


পুঁজিবাদ, আদরের নিপীড়ন


স্বাধীনতাপূর্ব সময়ের মতো এখনও একটি লুটেরা শ্রেণী রাষ্ট্রযন্ত্রের চার স্তম্ভের একটি সমাজতান্ত্রিকতাকে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। যার প্রমাণ, শ্রেণীসমস্যার স্রোত এবং দরিদ্র শ্রেণীর দুর্বৃত্তায়নকালে পুঁজিবাদকে চ্যালেঞ্জ করে ডাকাতের উক্তি,


“কিসের ভালা লোক। হ্যারা আমাদের চাইতে বড় ডাকাত (পৃ.১৩)”।


ভূমিষ্ঠ বাংলা এবং আওয়ামী লীগ


মুক্তিযুদ্ধে বাঙ্গালীকে সংগঠিত ও নেতৃত্বদানকারীএকমাত্র দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে আওয়ামী লীগই ছিল এবং এই দল করলেই পাকিস্তানী কর্তৃক নিপীড়ন।


পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তকাল ২৩ জুন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাও ২৩ জুন। অর্থাৎ, এমনভাবেও বলা যায়, আওয়ামী লীগের জন্মই হয়েছে বাংলার স্বাধীনতার সূর্যকে আবার উদিত করতে।


প্রতিবেশীর সহযোগিতা


বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ভারত নিঃসঙ্কোচে সহযোগিতা করেছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের কথা বিশেষভাবে স্মরণীয়। এক্ষেত্রে দুইখানকার আবেগ অর্থাৎ জাতিসত্ত্বা, ভাষা ও সংস্কৃতির মিলই প্রধান কারণ। পশ্চিমবঙ্গে অন্য জাতিসত্ত্বার মানুষ থাকলে এমন সহযোগিতা পাওয়া সহজ হত না।


ধর্মীয় রাজনীতি, আমলাতান্ত্রিকতা এবং আপস


ধর্মের কাঁধে স্বার্থ লুকিয়ে বিশ্ব বিভাজন এবং রাজনীতিতে আমলাতান্ত্রিকতা এই ইতিহাস বেশ পুরনো। যার প্রমাণ তৎকালীন সমাজবাস্তবতায় ভারত ভাগ। যদিও ‘বাংলাদেশ’ এসব সংকীর্ণতাকে জয় করে স্বাধীন হয়েছিল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ঘিরে।


তবুও একটা বড় সময় বাংলাদেশে শাসনক্ষমতা স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে থাকায় এসব প্রাচীন সমস্যা এখনও রয়ে গেছে। যা মুইনকে মৌলবিকে বলতে শোনা যায়,


‘দেশে মৌলবাদের বিষবৃক্ষ বপন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন (পৃ.১২৫)’।


এই ক্রান্তিলগ্নে, মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র উত্তরাধিকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকেই এই সমস্যাগুলোর আপসহীন সমাধানের দায়িত্ব নিতে হবে।


নারী স্বপ্ন এবং বীরাঙ্গনা


বীরাঙ্গনা বলতেই আমাদের চোখে ভেসে উঠে নিগৃহীত এবং বঞ্চিত নারীর ইমেজ। কিন্তু লেখক বীরাঙ্গনা সীমাকে সরাসরি উৎপাদনব্যবস্থার সাথে যুক্ত করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাকে দুমড়েমুচড়ে দিয়েছেন।


পাশাপাশি নারীকে চ্যালেঞ্জ এবং অনুপ্রেরণায় ‘শরীরনির্ভর জীবনকে’ চিঁরে নিজে এবং অন্যকে স্বপ্ন দেখানোর তাড়না দিয়েছেন।


অনন্ত অন্ত


হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘ইউটোপিয়া’ পাঠক চিন্তায় উস্কানি যোগায়, কিন্তু সমাধান খোঁজে না। হয়ত সমাধান মানেই আরেক সমস্যার অবতারণা এ কারণেই। সে বিচারে তাঁর এই ঔপন্যাসিক চিন্তা উস্কানি নতুনেরে আরো নতুন নতুন ভাবনার দুয়ারে নিয়ে যাবে এইভাবনাই জাগে।


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com