শিরোনাম
চারন কবি কবিয়াল বিজয় সরকারের মৃত্যুবার্ষিকী কাল
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১১:৪৫
চারন কবি কবিয়াল বিজয় সরকারের মৃত্যুবার্ষিকী কাল
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+
এ পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে” - বিখ্যাত এরকম হাজারো মরমী গানের স্রষ্টা কবিয়াল বিজয় সরকার। বাংলাদেশের কবি গানের উৎকর্ষ সৃষ্টিতে কবিয়াল বিজয় সরকারের অবদান অসামান্য।


আগামীকাল সোমবার (৪ ডিসেম্বর) উপমহাদেশের বিখ্যাত চারন কবি কবিয়াল বিজয় সরকারের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিরল ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভা সম্পন্ন এই আধ্যাতিক পুরুষ ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে পিতা নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মাতা হিমালয় অধিকারীর সংসারে জন্ম গ্রহন করেন। দশ ভাইবোনের মধ্যে বিজয় ছিলেন সবার ছোট।


তিনি ভারতে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন অবস্থায় ১৯৮৫ সালের আজকের এই দিনে মৃত্যুবরন করেন। শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি।


গ্রামবাংলার মানুষের হৃদয়ের আকুতিকে তিনি চমৎকার সুর ব্যঞ্জনায় তুলে ধরে সাধারন মানুষের অন্তরে ঠাঁই নিয়েছেন। প্রচারবিমুখ ও নিভৃতচারী এই সংগীত সাধক আসরের প্রয়োজনে মঞ্চে বসেই গান রচনা করে তাৎক্ষনিকভাবে সুর করে তা পরিবেশন করেছেন।


জানাগেছে, বিজয় সরকারের মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও বিজয় সরকার ফাউন্ডেশন দুই দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করেছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে।


বিজয় সরকারের ভাবধারা ও সংগীত প্রসঙ্গে পল্লী কবি জসিম উদ্দিন বলেছিলেন,“ মাঝে মাঝে দেশীয় গ্রাম্য গায়কদের মুখে বিজয়ের রচিত বিচ্ছেদ গান শুনিয়া পাগল হই। এমন সুন্দর সুর বুঝি কেহই রচনা করিতে পারে না।”


দীর্ঘ সংগীত সাধনার জীবনে তিনি প্রায় দুই হাজার গান লিখেছেন। যার মধ্যে রয়েছে বিচ্ছেদিগান, শোকগান, ইসলামীগান, আধ্যাতিœক গান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্মভক্তি, মরমী গান, বাউল, কৃঞ্চপ্রেম, শ্রেনী সংগ্রাম ইত্যাদি।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাল্যকাল থেকে তিনি ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। মাধ্যমিক শিক্ষার গন্ডি পেরোতে না পারলেও স্কুল জীবন থেকেই তিনি গান রচনা ও সুর করে নিজে গাইতেন। শিশুকাল থেকে তার প্রতিভা বিমোহিত হয়ে তৎকালীন সময়ে বিখ্যাত লোককবি মনোহর সরকার মুগ্ধ হন। ১৯২৯ সালে বিজয় সরকার নিজেই কবি গানের দল গঠন করেন। ১৯৩৫ সালে কলকাতার এ্যালবার্ট হলে কবি গানের এক আসর বসে।


ওই আসরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরু ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তফা, কন্ঠ শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন। তারা বিজয় সরকারের গান শুনে মুদ্ধ হয় এবং আর্শীবাদ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেবব্রুয়ারী কলকাতার “ ভারতীয় ভাষা পরিষদ” তাকে সংবর্ধিনা দেয়।


এ অনুষ্ঠানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্য, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর দেবীপদ ভট্রাচার্য উপস্থিত ছিলেন। তিনি একাধিকবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ডক্টর মোঃ শহিদুল্লাহ, দার্শনিক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, বিশ্ব নন্দিত চারু শিল্পী এস.এম, সুলতান সহ অসংখ্য গুনীজনের সান্নিধ্য লাভ করেন।


প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের তারিখে উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই চারন কবি কবিয়াল বিজয় সরকারের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হলেও এবছর ৪ ডিসেম্বর (আগামীকাল সোমবার) মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হবে।


কবিয়ালের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও বিজয় সরকার ফাউন্ডেশন দুইদিন ব্যাপী মেলার আয়োজন করেছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে। মেলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন, মেলার উদ্বোধন, শিল্পী বলদেব অধিকারীর চিত্র প্রদর্শনী, বিজয়গীতি প্রতিযোগিতা, স্মৃতি চারণ অনুষ্ঠান, কবি গানের আসর, বিজয়গীতি পরিবেশনা, ধুয়োগান ও বিজয় স্বর্ণ পদক প্রদান।


এবারের বিজয় মেলায় সেমিনারে অংশগ্রহন করবেন ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.পবিত্র সরকার। এবারের বিজয় মেলায় ২০১৫-২০১৭ এই তিন বছরের জন্য তিনজন কবি কে বিজয় সরকার স্বর্নপদক প্রদান করা হবে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে কবিয়াল সঞ্জয় মল্লিক (নওয়াপাড়া), ১৬ সালের জন্য কবিয়াল স্বপন সরকার (কোটালীপাড়া) এবং ১৭ সালের জন্য কবিয়াল মোঃ আবু ইউসুপ (চট্টগ্রাম)। মেলা শেষদিন ৫ ডিসেম্বর রাতভর কবি গানের আসর মাতাবেন স্বর্নপদক প্রাপ্ত কবিয়াল শিল্পীরা।


বিবার্তা/শরিফুল/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com