শিরোনাম
‘প্রতিবাদী রোমান্টিক’ কবির জন্মদিন আজ
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:০৫
‘প্রতিবাদী রোমান্টিক’ কবির জন্মদিন আজ
প্রিন্ট অ-অ+

‘আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ন নৃত্য দেখি
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে...
এ দেশ কি ভুলে গেছে সোই দুঃস্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ?’


এমনই প্রতিবাদী ছিলেন তিনি। তার কবিতায় যেন আগুন ঝরে। ছিলেন চির তারুণ্যের কবি। পুঁজিবাদি সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতো তার কলম। একই সাথে তরুণ সমাজের রোমান্টিকতাকে ফুটিয়ে তুলতেন নিজের মতো করে। ছিলেন গীতিকারও।


কথা হচ্ছে তারুণ্যের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে নিয়ে। আজ এই চির তারুণ্যের কবির জন্মদিন। ১৯৫৬ সালের ১৬ই অক্টোবর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বরিশালে জন্মগ্রহণ করলেও তার পৈতৃক বাড়ি বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে। দ্রোহ ও প্রেমের কবির শৈশব কালটি কাটে মংলাতেই।


বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুতোয় সুঁই হিসেবে ছিলেন তিনি। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সময় তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন হরতাল মিছিল কর্মসূচিতে নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করেন। এর পর যখন মুক্তি যুদ্ধ শুরু হল তখন তিনি নবম শ্রেণীর ছাত্র। তিনি যুদ্ধে যাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠেন। এর মাঝে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তার বাবাকে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করার দায়ে ধরে নিয়ে যায়। পরিবারের এমন দুর্দিনে তাই তার মা তার অনেক অনুনয় বিনয়ের ফলেও যুদ্ধে যেতে দিতে রাজি হয় নি।


আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে তার লেখা “বাতাসে লাশের গন্ধ” কবিতাটি স্বাধীনতা নিয়ে লেখা সেরা কবিতাগুলোর একটি। কবিতাটিতে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের নৃশংসতা তুলে ধরেছেন এভাবে-


আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ন নৃত্য দেখি
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে...
এ দেশ কি ভুলে গেছে সোই দুঃস্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ?
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ ।
এই রক্তমাখা মাটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধে ছিলো ।
জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আঁধার ,
আজ তারা আলোহিন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়.....


তিনি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা। জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৭৫ সালের পরের সবকটি সরকারবিরোধী ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবাদী কবি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন খুব অল্প সময়েই।


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণআন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা, ও অসাম্প্রদায়িকতা তার কবিতায় বলিষ্ঠভাবে উপস্থিত। এছাড়া স্বৈরতন্ত্র ও ধর্মের ধ্বজাধারীদের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠ ছিল উচ্চকিত। কবিকন্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি কবিতাকে শ্রোতৃপ্রিয় করে তোলেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ভালো আছি ভালো থেকোসহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন।


১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি বহুল আলোচিত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে। ১৯৯১ সালের ২১ জুন রুদ্র ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।


বিবার্তা/ইমদাদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com