শিরোনাম
ব্যবচ্ছেদ
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০১৭, ২০:৫৪
ব্যবচ্ছেদ
উজ্জ্বল হোসেন সায়েম
প্রিন্ট অ-অ+

গতরাতে আমি হাসপাতালে ছিলাম,
ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে।
রাত তখন ১২ টা বেজে ১ মিনিট
আমি বেডেই শুয়ে ছিলাম।
আমার পাশে আরো কিছু লোকজন ছিলো।
ওরাও বেডে শুয়ে ছিলো,
হয়তো ঘুমাচ্ছিলো।
কিন্তু কারো নাক ডাকার শব্দ শুনেছি বলে মনে হয় না।
আমার বড্ড ঘুম পাচ্ছিলো,
কতরাত ঘুমাইনি হিসেব নেই,
কেনো ঘুমাইনি তাও মনে নেই।
মাথাটা আর আগের মতো কাজ করছে না।
তারপর কখন যে ঘুমিয়ে গেছি
বুঝতেই পারিনি।


হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আমি স্বপ্ন দেখছি।
দুঃস্বপ্ন...
হোক না দুঃস্বপ্ন, দেখতে দোষ কি?
স্বপ্ন তো স্বপ্নই
তাছাড়া স্বপ্ন দেখার মধ্যে আলাদা মজা আছে
ইচ্ছা করলেই তো আর স্বপ্ন দেখা যায় না।


ডাক্তার আসলো
আমার জন্য কেনো যেনো অপারেশন থিয়েটা সাজানো হয়নি।
অক্সিজেন মাস্ক নেই, স্যালাইন নেই
আলাদা রক্তের ব্যাবস্থা নেই।
আমার বুঝি ওসব লাগবে না।
ডাক্তারের হাতে ইয়া বড় ছুড়ি
কি জানি, এসব দিয়ে অপারেশন করে নাকি?
অপারেশন সম্পর্কে আমার কোনো পূর্ব ধারণাই নেই।
করুক না, অপারেশনই তো।
অপারেশন তো ভালোর জন্যই।
মানুষ মারার অপারেশন আছে বলে তো কোনো দিন শুনিনি।
ডাক্তার আমাকে ভালো করে দেখলো
কোন জায়গা থেকে কাটা শুরু করবে হয়তো তা ই ভাবলো।
যেই ভাবা সেই কাজ
পেটের ভেতর আস্ত ছুরিটা ঢুকিয়ে দিলো
কি নির্দয় হয় ডাক্তার রা
অন্যের ব্যাথা বুঝি তাদের স্পর্শ করে না।
না করাটাই স্বাভাবিক।
তারপর শুরু হলো কাটাকাটি।
পেট থেকে গলা পর্যন্ত
আরো কোথায় কোথায় যেনো কাটলো ভুলে গেছি।
পেট থেকে গলা পর্যন্ত কাটার পর আর কিছু কাটার থাকে?
এত বড় অংশ কাটার পর বাকি অংশের কাটা না মনে থাকাটা দোষের কিছু না।
আমার পেট থেকে একে একে সব বের করতে লাগলো।
ডাক্তারটাকে বড় বেশি পাষণ্ড লাগছে
কেমন করে সব বের করে নিয়ে আসছে।
যেনো ক্ষুধার্ত বনমানুষ নিরীহ মানুষের কলিজা খেতে মরিয়া।
কয়েকটি প্লেট সাজানো হয়েছে
সেখানে এক একে জমা হচ্ছে আমার কিডনি,
আমার যকৃত আরো কত কি,
অতসব বৈজ্ঞানিক নাম আমার জানা নেই।
ক্ষাণিক বাদে শুরু হলো সেলাই কার্য।
কিন্তু একি!
আমার দেহের সব যে বাইরেই রয়ে গেলো!
ওগুলো ছাড়া কি মানুষ বাঁচে নাকি?
আমি বাঁচবো কি করে?
হয়তে বাঁচবো
ডাক্তাররা তো ইচ্ছা করে মানুষ মারে না।
আমার বোধ হয় ওসব বেশি ছিলো
এখন আর লাগবে না
তাই এমন অপারেশন।
যাই হোক অপারেশন সাকসেসফুল।
স্বপ্নটাও ভেঙে গেলো।
একে দুঃস্বপ্ন বলবো নাকি সুস্বপ্ন বলবো, ভেবে পাচ্ছি না।
অপারেশন তো সাকসেসফুল।
সুস্বপ্নই বলা যায়।
এই ছিলো আমার গত রাতের কাহিনী।
এবার তোমার কাহিনী বলো।
তুমিও তো আমার বয়সী।
তুমি কেনো এত আগেই কবরে?


লিখেছেন উজ্জ্বল হোসেন সায়েম,গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


বিবার্তা/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com