কনকনে শীতে পাঁজরের হাড় ছুঁয়ে শীতের আবাহন কিংবা তপ্ত রোদের কয়লা ধোঁয়ায় যখন শরীর জানান দেয় বিশ্রামের কথা, ঠিক তখন রিকশার নগরী ঢাকার বুকে রিকশা পাওয়াটা যেন অনেকটাই দুষ্কর হয়েই দাঁড়াই।
ঠিক তেমনি এক মাহেন্দ্রক্ষণে অপেক্ষারত ছিলাম একটি রিকশার জন্যে। ভাগ্যের তলানি ফুঁড়ে জুটেও ছিল কপালে। তবে তাকে দাঁড়াতে বলতেই পথের অপরপ্রান্ত থেকে একজন তরুণী উঁচু স্বরে ডেকে বসলেন, এই মামা যাবেন? যদিও সেই যানচালককে আমিই আগে হাত নেড়ে ডেকেছিলাম এবং যদি ভুল না বলি তবে তিনি সেটা দেখেও ছিলেন। তবুও তার এবং তার ত্রিচক্র যান থেমে গিয়েছিল ওপারের সৌন্দর্য আঁধারে।
দূর থেকে দেখা তরুণীর কপাল ছোঁয়া মায়াবী লাল টিপখানির মোহে হঠাৎ মস্তিষ্ক ফোঁকর ডিঙ্গিয়ে বেরিয়ে এল গত রাতের একটি চিত্রপট। মনে পড়ল, পলাশীর ফুটপাতে অবিরাম খালি পেটে কেঁদে চলা শিশুটির চোখ। তরুণীর টিপখানা দেখে মনে হয়েছিল সেই শিশুটির দু'চোখের একখানা লাল অংশই যেন ও পরেছে সযত্নে এবং ঈশ্বর যেন একান্তে পাহারা দিচ্ছে সেটা।
ছকে বাঁধা সমাজ একজন নারীকে যেভাবে নির্মাণ করে ঠিক সেরকম লেশ মাত্র ছিল না তার বেশভূষায়। তবে নারী হিসেবে যথেষ্ট মাপকাঠি ঠিকই ছিল পোশাকে। ওর স্বাধীনতা দেখে খুব ঈর্ষা হয়েছিল। মন বলে উঠেছিল, ইস আমার বোনটি যদি ওর মতন আরেকটু স্বাধীনতা পেত, তাহলে হয়তো আজ সে রবীন্দ্রসঙ্গীতের একজন মস্ত বড় শিল্পী হতো।
বাবা-মার চলে যাওয়া এবং নিজেদের অর্থনৈতিক ব্যর্থতার দায়ে আজ ওকে প্রতিভার উনুনে তালা এঁটে শুধুমাত্র ভাত সেদ্ধ করতে হচ্ছে। বিক্ষিপ্ত চিন্তার সবটা শেষ হতে না হতেই দেখি তরুণী সেই রিকশা যোগে যেতে শুরু করেছেন এবং আশ্চর্যের বিষয় এতক্ষণ আমার ভেতরে কোনো প্রতিক্রিয়া তৈরি না হলেও ক্রমেই ভেতরের আগ্নেয়গিরিটা যেন জেগে উঠতে শুরু করলো।
বুঝতে বাকি রইল না আমার সামনে থাকা সুন্দরের দাপটেই এতক্ষণ আমার না পাওয়ার বেদনাটা চাপা ছিল এবং মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল ওই রিকশা চালককে ডেকে তার গুষ্টি উদ্ধার করে দেই। তখন ভেতরের না পাওয়া শিশুটি হঠাৎ আমাকে নিরস্ত করল এবং কানে কানে বলল, দেখ আজও জগতে সৌন্দর্যবোধ এবং তার পূজারীদের অভাব পড়েনি ...
বিবার্তা/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]