প্রচণ্ড গরমে ঘরে-বাইরে জনজীবন এখন বিপর্যস্ত। বাইরে সূর্যের প্রখর তাপে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে ঠাণ্ডা প্রশান্তিময় ঘর সবার কাম্য। তাছাড়া প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে ঘেমে ভিজে একাকার হয়ে মানুষ ঘরে ফিরে আসে একটু শান্তির আশায়। কিন্তু ঘরটাও যদি হয়ে উঠে গরম ও অস্বস্তিকর, তবে দুর্ভোগের আর অন্ত থাকে না।
ঠাণ্ডা অফিস বা বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় পা দিলেই মনে হয় জ্বলন্ত কয়লায় নিজেকে সেঁকছি। এবং ইলেকট্রিক বিল? বিদ্যুতেরই ঝটকা মারে। এসি-র খিদে মেটাতে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎভাণ্ডারে টান পড়ছে। সেই সুযোগে বিস্মৃতির অন্তরাল থেকে ধীরে ধীরে জেগে উঠছে লোডশেডিং নামের ভিলেনটিও।
তাই এই জবজবে গরমে এসি-কে বেশি লাই না দিয়ে একটু অন্যভাবে ঠাণ্ডা হাওয়া খাওয়ার বন্দোবস্ত করা গেলে মন্দ কি? যাদের পক্ষে বাসাজুড়ে এয়ার কন্ডিশন লাগানো সম্ভব না, তারা প্রাকৃতিক উপায়ে সহজেই ঘর ঠাণ্ডা রাখতে পারেন। আসুন জেনে নেই সেটা কীভাবে সম্ভব!
এসি-আবিষ্কারের আগেও জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় আসত। জলবায়ুর ভাবগতিক এমন অজানা বা সাংঘাতিক ছিল না বটে। তখন বাঙালি কী করত? জানালায় খসখস ঝোলাত। খসখস নাকি এক রকম ঘাস। তাকে ঠিকঠাক বুনে পর্দা করে জানালা কিংবা বারান্দায় ঝোলান। সেটাই হবে তাপের মোক্ষম ঢাল। তাতে যদি একটু পানি ঢেলে দিতে পারেন, তা হলে কিন্তু বেশ আরাম হবে।
ইদানীং খসখস জোগাড় করা একটু হলেও শক্ত। বদলি হিসেবে, মোটা চাদর জলে ভিজিয়ে, শুকিয়ে নিয়ে, অল্প স্যাঁতসেতে ভাবটা রেখে পর্দার গায়ে সেঁটে দিতে পারেন। খসখসের বিকল্প হিসেবে মন্দ হবে না। বিছানার চাদর, বেডকভার ব্যবহার করুন হালকা রঙের পাতলা সুতির। তুলো তাপ টানে। তাই বালিশে ভরতে পারেন বাজরা বা চাল। একই রকম ভাবে, গদির মাঝখানে একটা মাদুর পেতে রাখলেও বিছানার গরম অনেকটাই কমে যাবে।
সিলিং ফ্যান চালু করলেই মনে হচ্ছে যেন গরম বাতাস ঘরে তাণ্ডব নাচছে? ইলেকট্রিশিয়ান ডেকে ব্লেডগুলোকে এমন ভাবে সাজান, যাতে পাখাটা ঘড়ির কাঁটার উলটো দিকে ঘোরে। এখন অবশ্য দোকানে এমন ধরনের রেডিমেড পাখা বা অনেক ব্লেডওয়ালা পাখা পাওয়া যায়। আচ্ছা, কখনও তিনটা-সাড়ে তিনটা নাগাদ আবহাওয়াটা খেয়াল করেছেন? মাটি থেকে একটা ভাপের স্তর ক্রমশ উপর দিকে ওঠে। ওই বিকেলবেলাতে জানালাগুলো খুলে ফ্যানটা ফুল স্পিডে চালিয়ে দিন। মশাদের সঙ্গে গরম হাওয়াও কিন্তু বিদায় হবে। বিজ্ঞান মতে তার জায়গা নেবে তুলনায় ঠাণ্ডা বাতাস।
এ বার এই বাউল বাতাসকেই ঘরে আটকে রাখার পালা। এ ব্যাপারে মাস্টার হল স্ট্যান্ডিং ফ্যান। স্টিলের ব্লেডওয়ালা বড়সড় পেডেস্টাল ফ্যান এনে বড় জানালাটার ধার ঘেঁষে ঈষৎ বেঁকিয়ে চালিয়ে দিন। কখনও ডানে ঘুরে, কখনও বাঁয়ে বেঁকে, পুরো ঘরে মিষ্টি হাওয়া দাপিয়ে বেড়াবে।
রমরমা তুফানি গরমে পেডেস্টালদের সামনে এ বার আইসবক্স রেখে দিন। হাওয়া ওই জলীয় বাষ্প শুষে ঘরের মধ্যে হিমেল হাওয়া এনে দেবে। যদিও একনাগাড়ে এভাবে থাকা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক।
বাড়িতে অবশ্যই ক্রস-ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখুন। ৪৫ ডিগ্রি কোণে পরস্পরের দিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকবে বড় বড় দুটো জানালা। প্রতিটা জানলার নীচে একটা করে বক্স ফ্যান লাগান।
অর্থাৎ বক্স ফ্যানগুলোও মুখোমুখি থাকল। এ বার ওই ফ্যান দুটো চালালে দেখবেন, আরাম লাগবেই। উইন্ডো এসি-র চেয়ে অনেক কম খরচে হয়ে যাবে। কিংবা প্রতি জানালার পাশে রাখুন একটি করে মাঝারি আকারের স্ট্যান্ডিং ফ্যান। সেটা চালালে বেশিক্ষণ চোখের পাতা খুলে রাখাই দায় হবে। রান্নাঘর বা বাথরুমে এডজাস্ট ফ্যান আছে? সেগুলো বারবার চালান। ঘরের গরম হাওয়া বেরিয়ে যাবে।
আপনার ফ্লোরটি কি ঠিক ছাদের নীচেই? ফলে হাওয়া যেমন, গরমও তো তেমনই। সে ক্ষেত্রে জলছাদ না হলে, ফলস সিলিং করিয়ে নিতে পারেন। এতে মাঝখানে একটা লেয়ার থাকবে। উত্তাপ বাছাধন সেখানেই কিছুটা হলেও আটকা পড়বে। আবার দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে ছাদে বালতি বালতি জল ঢেলে আসুন। ছাদ যেন ভালোভাবে ভিজে যায়। জল ছাদের অতিরিক্ত উত্তাপ শুষে নিয়ে ছাদের নীচের ঘরকে ঠাণ্ডা রাখবে।
আরোও কয়েক রকমভাবে, ঘরের মধ্যে তাপ ঢোকার আগেই তাকে রুখে দিতে পারেন। যেমন জানালার উপরে বড় কার্নিশ তৈরি করে রাখুন। সূর্যের কড়া আলো সরাসরি ঘরে ঢুকতে পারবে না। জানালার ধারে গাছ সাজিয়ে রাখলেও তারা তাপ শুষে নেবে। ঘর আপনা-আপনিই ঠাণ্ডা থাকবে।
গ্যাজেট আর আলো— যত কম, ততই ঠাণ্ডা ঘর। শোওয়ার আগে ভেজা তোয়ালে দিয়ে পা মুছে নিন। শরীরে তাপমাত্রা কিছুটা নামবে। আপনিও নরম আর শীতল স্বপ্নের দেশে পৌঁছে যাবেন।
ঘরে ফুলদানিতে হালকা পানিতে তাজা ফুল সংরক্ষণ করুন।
সূর্য ডোবার পর ঘরের জানালা খুলে দিন।
শোবার ও বসার ঘর থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কমিয়ে ফেলুন।
ঘরে বড় মাটির পাত্রে পানি রেখে তাতে কয়েকটি সুগন্ধি ফুল ছড়িয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে দিনে দুই-তিনবার পানি বদলে দিলে ভালো হয়।
রান্না শেষ হলে চুলা স্টভ সব বন্ধ রাখুন। নয়তো অযথা ঘর গরম হবে।
ঘর ঠাণ্ডা রাখতে ছাদে আম বা ঝোপজাতীয় ছোট গাছ লাগান। লাউ-কুমড়ার মাঁচাও খুব কাজে দেবে। লতানো গাছ বিল্ডিংয়ের চারদিকে নামিয়ে দিতে হবে। এতে পাশের দেয়ালও ঠাণ্ডা থাকবে। সূত্র: আনন্দবাজার
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]