আসছে ঈদুল আযহা। শহরে বসবাসরত মানুষ প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানী ছেড়ে ছুটে চলেন নিজ গ্রামের দিকে। আত্মত্যাগের চেতনায় বলীয়ান হয়ে পশু কোরবানি দেয়ার মাধ্যমে পালিত হবে দিনটি।
ঈদুল আযহাকে অনেকে ‘কোরবানি ঈদ’ নামেই ডাকেন! কেননা এই ঈদে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি আদায়ে প্রত্যেক সামর্থবান মুসলিমের উপর পশু কোরবানি ওয়াজিব। আর তাই ঈদুল আযহা মানে জমজমাট কোরবানির হাট।
হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কেনার মজাই আলাদা। এর মধ্যে যে যার সাধ্য অনুযায়ী কোরবানির পশু কিনে ফেলেছেন। কিনতে গেলেও আপনাকে যেনতেনভাবে হাটে গেলে চলবে না। যারা এখনো কিনেননি বা প্রথমবার পশু কিনবেন তাদের পশুর হাটে সচেতনভাবে যেতে হবে এবং সেই সাথে সতর্ক থাকতে হবে কিছু বিষয়ে।
বিষয়গুলো দেখে নিন
কুরবানির পশু ক্রয়ে অভিজ্ঞ এমন কোন লোককে সঙ্গে নিয়ে গেলে ভাল হয়। যেকোন দুর্ঘটনা বা ঝামেলায় পড়লে সে আপনাকে সাহায্য করতে পারবে।
হাটে যাবার সময় দেখে নিন টাকা-পয়সা ঠিকঠাকমতো নিয়েছেন কিনা। কারণ, টাকা ফেলে গেলে আবার বাড়তি ঝামেলা আপনাকে পোহাতে হবে। মোবাইল ব্যাংকিং এ-ও সচেতন থাকুন। তাড়াহুড়া করে অন্যকোনো অ্যাকাউন্টে যেন টাকা না যায় খেয়াল করে ব্যালেন্স ট্রান্সফার করুন।
নগদ টাকা নিলে তা একজনের কাছে নয় বরং সাথে যে বা যারা থাকবে তাদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিন।
টাকার ব্যাগ, মোবাইল ব্যাগ সাবধানে রাখুন।
গরুর হাটে যাওয়ার পর কেউ আপনাকে বলল, ‘ভাই, গরু না ছাগল?’। মাথা ঠান্ডা রাখুন! এমন কথা শুনে হুংকার দিয়ে ওঠবেন না, ‘কি! তোর এত বড় সাহস! তুই আমারে গরু-ছাগল কস!’! জনাব, উনি আপনাকে গরু বা ছাগল কোনোটাই বলেননি! উনি জানতে চাইছেন, আপনি গরু নাকি ছাগল কিনবেন! অতএব, সাবধান!
পশু ক্রয়ের ক্ষেত্রে পশুটি সুস্থ কিনা সে দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। অনেকে পশু মোটাতাজা করণের জন্য অসাধু পন্থা অবলম্বন করে থাকে, তাই এ সকল বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।
কোরবানির হাটে টাকা-পয়সা লেনদেনে সতর্ক থাকবেন। জাল টাকা, ছেঁড়া টাকা নিচ্ছেন কিনা দেখে নিন ভালো করে।
দালাল চক্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। তাদের খপ্পরে যেন না পড়েন সে ব্যাপারে সাবধান থাকুন।
হাটে যাবার সময় প্লাস্টিকের জুতা পড়ে যান। তাহলে পায়ে গোবর বা ময়লা লাগবে না।
হাটে গিয়ে কোরবানির পশুর থেকে নিরাপদ দুরত্বে থাকুন। আর কোনো পশু যদি ছুটে যায় তবে ভয়ে দৌড়াবেন না। বরং আশেপাশের লোকদের সহায়তা নিন।
হাটে যাবার সময় মোটা বা ভারী কাপড় নয় বরং হালকা পোশাক পড়ে যান। যাতে গরম কম লাগে।
নতুন পোশাক নয় বরং যে পোশাকটি নষ্ট হলেও কোনো ক্ষতি নেই এমন কোনো পোশাক নির্বাচন করুন।
আবহাওয়া বুঝে হাটে যান। রোদ থেকে সামান্য রক্ষা পেতে সকাল সকাল হাটে যান।
হাটে যাবার সময় বাসা থেকে ভালোভাবে খেয়ে সুস্থ শরীরে বের হন। শারীরিক কোনো অসুস্থতা যেমন: প্রেসার, হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস থাকলে প্রয়োজনীয় ঔষধ খেয়ে এবং সাথে নিয়ে বের হবেন।
দীর্ঘক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে শরীর অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে বলে পানি, স্যালাইন, চা, শরবত বা পানীয় খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে এবং ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে কিছুক্ষণ। ছাতা নিতেও ভুলবেন না। কারণ রোদ-বৃষ্টি সবকিছুতেই এটা আপনাকে সুরক্ষা দিবে।
অপরিচিত লোকের দেওয়া কোন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
পশুর হাটে অনেক দালালের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, ঝামেলা এড়াতে এদের এড়িয়ে চলুন।
ঝামেলা এড়াতে পশু হাটের ভেতর থেকে বাহিরে নিয়ে আসতে রাখালের সহায়তা নিন।
পশুর হাটে ছোট বাচ্চা, বয়স্ক ও অসুস্থ লোক না যাওয়াই ভাল।
কোন ধরণের অসাধু লোকের খপ্পরে পরে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে। এর জন্য পূর্বে থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ফোন নাম্বার অথবা ইমারজেন্সি নাম্বার রাখতে পারেন।
হাট থেকে ফিরে হাত-পা ভালো করে স্যাভলন বা ডেটল মেশানো পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আর অবশ্যই কুরবানির পর পশুর বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। গরুর মাংস রান্নার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তেল, মশলা, চর্বি এড়িয়ে চলুন। মাংস থেকে চর্বি আলাদা করে কেটে ফেলুন। অতিরিক্ত চর্বি ও তেল, মশলা শরীরের ক্ষতি করে।
সর্বোপরি সতর্ক থাকুন, নিরাপদে থাকুন এবং ঈদকে আরও আনন্দময় করে তুলুন।
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]