শিরোনাম
রোজায় শিশুর খাবার
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০১৮, ১৪:৩২
রোজায় শিশুর খাবার
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

রোজা নিয়ে শিশুদের আগ্রহ আর উত্তেজনা থাকে অনেক বেশি। শিশুরা মা-বাবার দেখাদেখি রোজার সময় রোজা রাখে। এটা তাদের কাছে একটা উৎসবের মতো মনে হয়। মা-বাবা যখন সেহরির সময় সেহরি খেতে ওঠেন তখন তারাও ঘুম থেকে উঠে পড়ে এই ভেবে যে আমরাও সেহরি খাব রোজা রাখব ঠিক ইফতারির সময়ও তারা খুব আগ্রহের সহিত অপেক্ষা করতে থাকে মায়ের তৈরি করা মুখরোচক ও লোভনীয় খাবার দ্বারা ইফতারির জন্য যেখানে নানা ধরনের খাবারের আয়োজন থাকে। আর এই সেহরি ও ইফতারির সময়টা শিশুদের কাছে উৎসবমুখর একটি সময়।


শিশুদের রোজা রাখার বায়না সামলাতে অনেক মা-বাবাকেই হিমশিম খেতে হয়। শিশুরা রোজা রাখেন খুব আগ্রহ ও আনন্দের সঙ্গে। কারণ বড়রা বা আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধব যখন জিজ্ঞেস করেন তুমি রোজা রেখেছ? তখন খুব গর্বের সঙ্গে শিশুরা উত্তর দেয়, জি আমি রোজা রেখেছি। যখন সবাই বলে বাহ্ খুব ভালো তখন এই উৎসাহ বা বাহবাটা শিশুদের কাছে আনন্দের এবং গৌরবের।


অনেক ছোট ছোট শিশুরাও প্রথম দুই একটা রোজা রাখেন এবং বাবা-মা তাদের খুব উৎসাহ দেন এতে তারাও ধর্মের একটা স্বাদ পায় এবং বড় হলে নিয়মিত নামাজ পরতে ও রোজা করতে হবে এ বিষয়ে ধর্মীয় অনুভূতি জাগে।


রোজা পালন শিশুর জন্য উপকারী। শিশুর রক্ত পরিশুদ্ধ হয়। শরীরের খারাপ পদার্থগুলো কিডনি, অন্ত্র দিয়ে বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হয়। যেহেতু এবছর রোজা গ্রীষ্মকালে তাই রমজান মাসে শিশুরা যখন রোজা রাখবে তখন বাবা-মাকেই তাদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।


বড়দের অনুকরণে পরিবারের ছোটরাও রোজা রাখতে পছন্দ করে। শিশুদের জন্য রোজার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। তবে আট বছরের কম বয়সী শিশুদের রোজা রাখতে উৎসাহিত করা হয় না। আট বছর থেকে সুস্থ শিশুরা আধাবেলা কিংবা পুরো রোজাই রাখতে পারে। রোজায় শিশুদের খাদ্য তালিকায় বিশেষ নজর দিতে হবে। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রোজার খাবারদাবারে বেশ খানিকটা পরিবর্তন আনতে হবে।’


সেহরী


বড়দের মতো ছোটদের সেহরির মেন্যুতেও তিন ভাগ পানি ও পানীয় এবং এক ভাগ সলিড খাবার থাকা উচিত। অল্প খাবারে পরিপূর্ণ পুষ্টি পাওয়া যাবে এমন খাবার নির্বাচন করতে হবে সেহরিতে। শিশুকে বেশি করে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার দেয়া যেতে পারে। এতে ক্ষুধা কম লাগবে এবং দীর্ঘক্ষণ শক্তি জোগাবে শরীরে।


চর্বিজাতীয় খাবার যেমন গরু অথবা খাসির মাংস, ঘি-বাটারসহ প্রাণিজ যেকোনো চর্বি না রাখা ভালো। তেলে ভাজা কিংবা বেশি মসলা দিয়ে কষানো রান্নার বদলে অল্প তেল-মসলায় রান্না সবজি, মাছ, মাংস, ডিম ও ডাল রাখুন শিশুর সেহরিতে।


স্যুপ, জুস বা স্মুদি সেহরির জন্য আদর্শ খাবার। এক বাটি মিষ্টি দই রাখতে পারলে ভালো। দই না পেলে এক গ্লাস দুধ অবশ্যই খাওয়াতে হবে। দুধ, ফিরনি বা অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় খাবার দিতে পারেন। তবে সেহরিতে চিনি বা চিনির তৈরি খাবার যতটা সম্ভব কম দেওয়ার চেষ্টা করুন।


ইফতার


দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে পাকস্থলীর কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই প্রথমে খেজুর ও শরবত বা যেকোনো পানীয় দিয়ে ইফতার শুরু করতে হবে।


পানীয়ের তালিকায় থাকতে পারে লেবুর শরবত বা ঘরে তৈরি তাজা ফলের রস, স্যুপ, স্মুদি বা লাচ্ছি। খেজুর ও চিনি মেশানো শরবত অথবা জুস শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায়, পানির ঘাটতি পূরণ করে এবং পাকস্থলীকেও ভারী খাবার হজম করার জন্য প্রস্তুত করে তোলে। এরপর শিশুর ইফতারের মেন্যুতে দই-চিঁড়া, বেগুনি, আলুর চপ, পাকোড়া থাকতে পারে। ছোলা-মুড়িও খেতে পারে। ইফতারে রাখুন একটু হালকা, পুষ্টিকর ও মুখরোচক খাবার।


বানানা শেক, দুধ ও ডিমের তৈরি পুডিং, ফল ও দুধের তৈরি কাস্টার্ড, ডাল, চাল ও মাংসের হালিম বা খিচুড়ি, হালুয়া, দই-চিঁড়া শিশুর জন্য মুখরোচক ও পুষ্টিকর খাবার। ঘরেই তৈরি করতে পারেন বার্গার। বেশি করে মাংস দিয়ে বার্গার তৈরি করলে খেতে মজা হবে। পাশাপাশি প্রোটিনের চাহিদাও পূরণ হবে। দিতে পারেন ডিম অথবা মাংসের চপ। মোটকথা ইফতারের প্রথম এক ঘণ্টা পানিজাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেয়ে, এরপর শিশু পছন্দমতো যেকোনো খাবারই খেতে পারে।


রাতের খাবার


রোজায় সাধারণত ইফতারে পরিমাণে একটু বেশি খাওয়া হয়। তাই রাতের খাবার সহজপাচ্য হওয়া ভালো। ভাত, সবজি, মাছ, মাংস অথবা ডিম যেকোনো একটি, সঙ্গে ডাল রাখুন। ভাতের বদলে খিচুড়ি, স্যুপ বা সিরিয়ালও খেতে পারে। শোবার আগে এক গ্লাস দুধ অবশ্যই খেতে হবে।


যারা রোজা রাখবে না


শিশু রোজা না রাখলেও এই মাসে শিশুর খাবারে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। রোজায় দিনের বেলা বড়দের জন্য রান্না হয় না বলে অনেকেই শিশুকে আগের দিনের বাসি খাবার খাওয়ান। এতে শিশুর পুষ্টিমানের ঘাটতিসহ নানা রকম অসুখের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। দিনের বেলা আলাদা করে রান্না করতে না চাইলে আগের দিন রান্নার পর খাবার যত দ্রুত সম্ভব ঠাণ্ডা করে এয়ারটাইট বক্সে ফ্রিজে রাখুন।


পরের দিন খাবার এক ঘণ্টা আগে ফ্রিজ থেকে বের করে প্রথমে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এলে তারপর গরম করে খেতে দিন। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে দুই দিনের বেশি রাখা ফ্রিজের খাবার শিশুদের দেওয়া ঠিক নয়। সকালের নাশতায় ঝটপট তৈরি করা যায় এমন খাবার রাখুন।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com