শিরোনাম
কুয়াশার শুভ্র আবরণ ভেদ করে রঙিন পাপড়ির হাসি
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:২৮
কুয়াশার শুভ্র আবরণ ভেদ করে রঙিন পাপড়ির হাসি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

সবুজ বাংলার গাছে গাছে রংবে রঙের ফুলে সারা বছরই সেজে থাকে প্রকৃতি। সুন্দরের প্লাবণে ভাসায় আমাদেরকে। ফুলের বিচিত্র গঠনও মাধুর্যে ভরা গন্ধ আমাদের মনে জাগায় বিস্ময়কর অনুভূতি। নাচিয়ে তুলে প্রতিটি তন্ত্রীকে। পুলকিত করে তনু-মনকে। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের চারপাশে ফলিয়েছেন অসংখ্যা বৃক্ষরাজি। আর তাতে ফুটে বিভিন্ন রকমের ফুল। সেগুলো দেখতে কত অপূর্ব! কত নিখুঁত, নিপুণ। সত্যিই ফুলে ফুলে সবুজের বর্ণিল সাজ সবাইকে বিমোহিত করে।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ফুলের সৌন্দর্য ও সৌরভের ব্যাপক ব্যবহার করছেন কবিতা, গান, গল্প ও উপন্যাসে।


জাতীয় কবি নজরুল ইসলামও তার গান ও কবিতায় অপরিহার্যভাবে অনেক ফুলের সমাবেশ ঘটিয়েছেন।


জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’ কবিতায়ও ফুলের সৌন্দর্যের পরাক্রমশালী আবির্ভাব পরিলক্ষিত হয়।


হুমায়ুন আজাদকে বলা চলে বাংলার ফুলের সর্বশেষ সৌন্দর্য চর্চার উদভ্রান্ত কবি।



ফুলকে নিয়ে এই সাংস্কৃতিক সূচনা বহু আগে থেকে চলে আসছে। ফুলের সৌন্দর্যকে মানুষ বরণ করে নিয়েছে মনভরে। এই কারণই পৃথিবীর যে কোন জায়গার মানুষই মুগ্ধতা, ভালোবাসা, শুভেচ্ছা, এমনকি সহানুভূতি প্রকাশের জন্য বেছে নিচ্ছে ফুলকে।


শীতের শুষ্ক প্রকৃতিকে উষ্ণতায় ভরিয়ে দিতে বৃক্ষপত্রে ফোটে অসংখ্য জাতের ফুল। সেসব ফুল প্রকৃতিতে এনে দেয় নতুন এক প্রাণের ছোঁয়া। কুয়াশার শুভ্র আবরণ ভেদ করে ভোরে যখন রংবেরঙের শত শত ফুল তাদের রঙিন পাপড়ি মেলে সৌন্দর্যের পসরা সাজায়, তখন নৈসর্গপ্রিয়দের মনবাতায়নে ঢেউ খেলে আগাম বাসন্তীর।


গ্রামে শীত আসে খেজুর রসের হাঁড়িতে চড়ে, আর নগরের শীত নামে রংবেরঙের ফুলের টবে চড়ে। শীতে যত ফুল ফোটে, সারা বছরের আর কোনো সময় সেভাবে তত ফুল ফোটে না। মাত্র এক মৌসুমের আয়ু নিয়ে রংবেরঙের ফুলগাছ বাগান আলো করে দেয়।



শীতের ফুল বলতেই আমরা অনেকে ডালিয়া, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, কসমস ইত্যাদিকেই বুঝে থাকি। আছে অ্যাস্টার, ডেইজি, সিলভিয়া, এন্টিরিনাম, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি, ডায়ান্থাস, ফ্লক্স, ভারবেনা, কারনেশান, পপি, স্টক, পর্টুলেকা, ক্যালেন্ডুলা, হলিহক, মর্নিং গ্লোরি, সুইট পি, লুপিন, গ্ল্যাডিওলাস, ন্যাস্টারশিয়াম, লার্কস্পার, স্টার, ভারবেনা ইত্যাদি।


কিন্তু এর সঙ্গে প্রায় একশ রকমের ফুল আছে, যেগুলো এ দেশে শীতকালে ফোটে। তবে এসব ফুল আমাদের দেশের নয়, এসেছে অন্য দেশ থেকে। এসব ফুলের অধিকাংশ বীজও আসে বিদেশ থেকে। এ দেশে সেই বীজ থেকে চারা তৈরি করে লাগানো হয়। এ জন্য অতিথি পাখির মতো এসব ফুলকেও বলা যায় অতিথি ফুল। নতুন আসা এসব ফুলের মধ্যে অন্যতম হলো গাজানিয়া, অ্যাজালিয়া, চীনা হ্যাট ফ্লাওয়ার, জারবেরা ইত্যাদি।


যদি আপনি চান তাহলে ছোট পরিসরেই রকমারি সেসব ফুলকে জায়গা দিতে পারেন টবের ভেতরে। পরিকল্পনা করে নিজের ইচ্ছামতো শৈল্পিকভাবে গাছ লাগিয়ে ফেলুন। তবেই বারান্দায় বাগান বোঝা যাবে। বারান্দার বাগানের সুবিধা হলো, এখানে ঋতুভিত্তিক গাছ লাগানো যায়।


বারান্দায় বাগান করার কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। নার্সারি থেকে টবের গাছ বাসায় আনার পর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এর প্রধান কারণ, গাছটি সঠিক পরিবেশ ও যত্ন— কোনোটিই পায় না। এ জন্য অনেক সময় গাছের পাতা হলুদ হয়ে পড়ে, পাতা ঝরে যায় বা গাছটিই মরে যায়।



এ জন্য যেসব দিকে গুরুত্ব দিতে হবে:


আলো
গাছের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সঞ্জীবনী হচ্ছে আলো। পরিমিত আলো ছাড়া গাছ খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে না। ফলে মৃত্যু অবধারিত। তাই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকতে হবে।


সাধারণত চিরসবুজ গাছ, যাতে ফুল হয় না, সেটাতে অর্ধেক দিন আলো পেলে ভালো থাকে। যেসব গাছে ফুল হয়, সেগুলো সম্পূর্ণ সূর্যালোকে ভালো থাকে। গাছে ফুল আসার জন্য নির্ভর করে, দিনের কতটা সময় সূর্যের আলো গাছটা পাচ্ছে।


তাপমাত্রা
গাছের জন্ম ও বৃদ্ধি নির্ভর করে বিশেষভাবে তাপ ও আলোর ওপর। সবুজ গাছের জন্য দিনে ৭০ ডিগ্রি থেকে ৭৫ ডিগ্রি ও রাতের বেলা ৬৫ থেকে ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা ভালো।


পানি
আমাদের দেশের আবহাওয়ায় টবে প্রতিদিনই পানি দিতে হয়। তবে বর্ষাকালে টব যদি বাইরে থাকে, তবে পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। বৃষ্টির পানি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। টবে মাটি যদি ভেজা থাকে, তবে পানি দেবেন না। লক্ষ রাখবেন, টবের মাটি যেন কখনোই একেবারে শুষ্ক না হয় বা টবে পানি না জমে। এই দুই অবস্থাই গাছের জন্য ক্ষতিকর।


আর্দ্রতা
গাছপালার জন্য পরিমিত পরিমাণে আর্দ্রতা সব সময় প্রয়োজন। চিরসবুজ গাছের জন্য ৩০ শতাংশর বেশি আর্দ্রতার প্রয়োজন। সব সময় চেষ্টা করবেন গাছের চারদিকে একটা আর্দ্র আবহাওয়া সৃষ্টি করতে। আর্দ্রতা কমে গেলে গাছের আগা বাদামি রঙের হয়ে যায়। কলি গাছ ঝরে পরে।


মাটি ও পাত্র
আমার মতে, মাটির টবই গাছের জন্য সবচেয়ে ভালো। কেউ চাইলে প্লাস্টিক, সিরামিক বা কাঠের টব ব্যবহার করতে পারেন। গাছ অনুসারে টব কিনবেন। স্বাভাবিক বিকাশের জন্য টবের স্থান পরিবর্তন করতে হবে। আর মাটি হচ্ছে গাছের ভিত্তি। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী কতটুকু মাটি লাগবে, গাছের জন্য ততটুকু ব্যবহার করবেন।


সার দেওয়া
টবের গাছের জন্য অল্প পরিমাণে সার দিতে পারেন। তবে সব পরিবেশেই গোবরের সার ব্যবহার করতে পারেন। এর পরিমাণ কম কি বেশি হলে গাছের বিশেষ ক্ষতি হয় না।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com