শিরোনাম
আপনার সন্তান অবাধ্য হলে কী করবেন?
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:৫৭
আপনার সন্তান অবাধ্য হলে কী করবেন?
মডেল: সাবিলা সারলিজ সাজ্জাদ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

সন্তান জন্ম দেয়ার পর কি বাবা-মায়ের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? নিশ্চয়ই তা নয়। তাকে বড় করে তুলতে প্রতিনিয়ত সময় দিতে হয়। নানা সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। কারণ চলার পথে প্রতিনিয়ত নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।


তখন ঐ পরিস্থিতিকে ঘটে যায় অনেক কিছুই। সন্তান তখন বাধ্য থাকতে চায় না। ফলে হতাশ হয়ে পরেন বাবা-মায়েরা। বাবা-মায়েরা মাঝে মাঝে বুঝে উঠতে পারেন না তাদের শিশু সন্তানেরা কেন মুখে মুখে তর্ক করে, কেনইবা শান্ত থেকে ক্রমশ অবাধ্য হয়ে ওঠে। সঠিক কারণ বুঝতে না পারার কারণে অবিভাবকেরা শিশুদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন, যার ফলে হিতে বিপরীত হয়। শিশু আরো জেদি, অবাধ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু শিশুর এমন আচরণ থেকে তাকে শোধরানোর উপায় কী?



প্রকৃতিগতভাবেই শিশুদের দুধরনের মানসিকতা দেখা যায়। কিছু শিশু থাকে যারা বাবা-মায়ের ওপর খুব নির্ভরশীল। বাবা-মা যা বলেন, তারা তাই মেনে চলে। সোজা বাংলায় এদের বলা হয় বাধ্য ছেলেমেয়ে। কিন্তু কিছু কিছু শিশুর নিজস্বতা থাকে, সব কিছুতেই নিজের মতামত থাকে। আর তারা তাদের সেই মত ব্যক্ত করতে চায়। নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে চায়। এই স্বাধীনতায় যখন বাবা-মা হস্তক্ষেপ করেন তখনই তারা খুব বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায়। ওরা ভাবতে শুরু করে ওদের কেউ বুঝতে পারছে না, ভালোবাসছে না। তারা হয়ে ওঠে জেদি। তখন সব খারাপ কিছু যা তাদের ভালো লাগতে শুরু করে আর ভালোটা খারাপ লাগতে থাকে।


এই অবস্থায় বাবা-মা কি করবেন? হতাশ তখন তারা। কি করে এমন পরিস্থিতি সামলাবেন সে সম্পর্কে রইল কিছু পরামর্শ।


যখন তর্ক করছে, একেবারেই কথা শুনছে না


এক্ষেত্রে অবিভাবকদের বুঝতে হবে শিশু বড় হচ্ছে তার চারপাশের পৃথিবী দেখতে দেখতেই। তার মনেও হাজারো কিছু জানতে চাওয়া, নানা আবেগ-অনুভুতি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো সে এখনো তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সঠিক প্রয়োগ করতে শেখেনি। এক্ষেত্রে যুক্তি দিয়ে তার আবেগ-অনুভুতির প্রয়োগ শেখান।



কিছুতেই পড়তে চায় না
এমন অভিযোগ থেকে অনেক বাবা-মা শেষ পর্যন্ত শিশুর গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধাবোধ করেন না। শিশুর গায়ে হাত তোলা কখনো তার জিদ সংশোধনের পদ্ধতি নয়। এতে জিদ আরো বেড়ে যায়। তাকে বোঝাতে হবে সে যদি লেখাপড়া না করে তাহলে তাকে আর ওর স্কুলে পড়তে দেবে না। অন্য স্কুলেও তাকে ভর্তি করবে না। সে তার স্কুলের বন্ধুদেরও হারাবে। এসব কথা বলে তার পড়ার আগ্রহ তৈরি করুন।



বাজে কথা বলতে শিখছে
টিভি দেখতে শিশুকে নিষেধ করতে গেলেই সে তার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে। কিন্তু টিভি দেখে এমন এমন বাজে কথা বলছে যাতে অন্যদের সামনে অপ্রস্তুত হয়ে যেতে হচ্ছে। একটা কথা মাথায় রাখবেন, টিভি দেখে যেসব খারাপ কথা বলতে শিখেছে, সে কিন্তু সেসব কথার মানে না বুঝেই বলছে। এক্ষেত্রে ওকে বোঝান ও যে কথাটা বলছে সেটা টিভির নেতিবাচক লোকটার বলা কথা। টিভিতেও যেমন নেতিবাচক লোকটাকে সবাই ঘৃণা করে, ও সেসব কথা বললে ওকেও সবাই ঘৃণা করবে।


রাগ হয়ে যা মুখে আসছে তাই বলছে
এমন অভিযোগের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, এই তুই-তোকারি ব্যাপারটা কিন্তু ওরা বাবা-মা কিংবা আশেপাশের পরিবেশ থেকেই শিখে নিচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় শিশু হয়তো বাবা-মাকে আদর করে তুই সম্বোধন করছে, তখন তুই সম্বোধন শুনে তারা হাসছেন। কিন্তু যখনই রেগে গিয়ে শিশু তুই বলছে তখনই তারা তা মানতে পারছেন না। বড়দের ব্যবহারিক এই অসামঞ্জস্য শিশুর মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। যার থেকেই তারা অভব্য, অবাধ্য হয়ে পড়ে। তাই এমন বিপরীত ব্যবহার শিশুর সঙ্গে করবেন না।



বাড়ির লোক ও অন্যদেন সঙ্গে বাজে আচরণ করছে
কাজের লোকের কাছ থেকেও অনেক কর্মরত দম্পতি অভিযোগ পেয়ে থাকেন, শিশু কাজের লোকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। এসব ক্ষেত্রে শুধু কাজের লোকের কথা শুনেই কিন্তু শিশুকে অযথা বকাবকি করা ঠিক নয়। শিশুর থেকেও জানতে হবে কেন সে এমন আচরণ করছে। তার কথা না শুনেই তাকে বকাঝকা করলে তার রাগ-অভিমানগুলো বাড়তে থাকবে এবং সে আরো অবাধ্য হয়ে উঠবে।


যা দেখবে তা কিনে দেওয়ার বায়না
অনেক শিশুই এমনটি করে থাকে। শিশু যখন বায়না করে তখন তাকে মুখের ওপর কিনে দেব না বলবেন না। কারণ ওরা সবসময় নিজের ইচ্ছার স্বীকৃতি পেতে চায়। ওকে বুঝিয়ে বলুন, ওকে পরে কিনে দেবেন। দেখবেন, দুদিন বাদেই ও ভুলে গেছে ওর আবদার।



শিশুর মন খুবই নাজুক টাইপের। আর মাটির তাল যেমন ঠিক তেমন সেও। যে আকারে তাকে গড়বেন, সে ঠিক সেই আকারই ধারণ করবে। আর তাকে সেভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব, কর্তব্য বাবা-মায়ের। শিশুকে শিশুর মতো করে বুঝুন। তার মতো করে মিশুন। তার আবেগ-অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন। তখন দেখবেন কোনো সমস্যাই আর কঠিন থাকবে না।


বিবার্তা/শারমিন


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com